আবুজর গিফারী কলেজ

আওয়ামীপন্থী ও নানা অনিয়মে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে বিপাকে সভাপতি

আবুজর গিফারী কলেজ
আবুজর গিফারী কলেজ  © ফাইল ফটো

রাজধানীর মালিবাগে অবস্থিত আবুজর গিফারী কলেজের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ না থাকা সত্ত্বেও এই বিষয়টি পড়ানোর জন্য একজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। এছাড়াও নিয়োগ দেওয়া ওই শিক্ষকের নেই নিবন্ধন সনদও। গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এরকম অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন কলেজ পরিচালনা কমিটির বর্তমান সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ মামুন চৌধুরী।

বিতর্কিত এসব শিক্ষক ও গভর্নিং বডির কিছু সদস্য মিলে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা দিয়েছেন। সম্প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বরাবর পাঠানো এক লিখিত আবেদনে তারা স্বেচ্ছাচারিতা, রূঢ় আচরণ এবং দুর্নীতিগ্রস্ত শিক্ষকদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ এনেছেন অধ্যাপক মোহাম্মদ মামুন চৌধুরীর বিরুদ্ধে।

জানা যায়, ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের আগে কলেজটির পরিচালনা কমিটি থেকে অধ্যক্ষ সবাই ছিলেন আওয়ামী লীগের কট্টর সমর্থক। ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ মামুন চৌধুরীকে কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়।

দায়িত্ব নেওয়ার পর গত মার্চে কলেজের অধ্যক্ষ বশীর আহম্মদের বিরুদ্ধে বিধি বহির্ভূত কর্মকাণ্ড ও বিভিন্ন বিল-ভাউচার দিয়ে কলেজের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে অধ্যক্ষকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এদিকে, আওয়ামীপন্থী ও নানা অনিয়মে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তিন সদস্যবিশিষ্ট তথ্য অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। 

জানা গেছে, কলেজটিতে বর্তমানে ৭৮ জন এমপিও ও নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষক রয়েছে। তথ্য অনুসন্ধান কমিটির তদন্তে দেখা যায়, কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শিরিন আক্তার মজুমদার ও সিএসই বিষয়ের শিক্ষক দেওয়ান মো. যুবরাজ আল ফাহাদের শিক্ষক নিবন্ধন সনদ নেই। যদিও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ আবশ্যক উল্লেখ ছিল।

তদন্ত কমিটি বলছে, ২০০৫ সালের এনটিআরসিএ অনুযায়ী ২ জনেরই শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ বিধি বহির্ভূত। তাছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিএসই বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু/অধিভুক্তি না পাওয়া সত্ত্বেও পূর্বের গভর্নিং বডি দেওয়ান মো. যুবরাজ আল ফাহাদকে সুপরিকল্পিতভাবে নিয়োগ প্রদান করেন যা সম্পূর্ণরূপে বিধি বহির্ভূত। সিএসই বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের তারিখ মতে দেওয়ান মো. যুবরাজ আল ফাহাদ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেননি, যা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদনের অযোগ্য বলে এতে উল্লেখ করা হয়।

তদন্ত কমিটির এসব পর্যবেক্ষণ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে পাঠান কলেজ পরিচালনা কমিটির বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মামুন চৌধুরী। এই অনিয়মের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় বিরোধিতার মুখে পড়েছেন তিনি।

সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মামুন চৌধুরী বলেন, আওয়ামীপন্থী ও আওয়ামী লীগের আমলে অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে একটি তথ্য অনুসন্ধান কমিটি করা হয়। কলেজের মোট শিক্ষকের মধ্যে এই সংখ্যাটি ৬ থেকে ৮ জন হবে। তারা যেহেতু অভিযুক্ত তাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এটা জেনে আমার বিরুদ্ধে লেগেছে। যাতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারি। 

তিনি আরও বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগে কিছু শিক্ষক অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মাউশি, দুদক ও ডিআইএতে দুর্নীতির অভিযোগ দিলে এসব সংস্থা নতুন করেন তদন্ত শুরু করে। এখন অভিযুক্ত শিক্ষকরা চাকরি হারানোর শঙ্কায় আছেন এবং আমি তাদেরকে তদন্ত করতে বলেছি বলে মনে করছেন তারা। আসলেই এসব সংস্থার সঙ্গে আমি জড়িত নই, তারা অটোমেটিক প্রসেসে এসেছে। তাছাড়া আমি অধ্যক্ষকে অব্যাহতি দিয়েছি, সেও আওয়ামী লীগের দোসর ছিলেন।

‌‌‘‘তাছাড়া আমি অধ্যক্ষকে অব্যাহতি দিয়েছি, সেও আওয়ামী লীগের দোসর ছিলেন এবং কলেজের আর্থিকখাতে দুর্নীতি করেছেন, গভর্নিং বডি গঠনের লক্ষ্যে প্রশ্নবিদ্ধ ভোটার তালিকা দিয়ে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন পরিচালনা করেছেন এবং বহিরাগত দিয়ে পেশিশক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে হিতৈষী প্রতিনিধি নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। বারবার কলেজে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করে নবীনবরণ নস্যাৎ করেছেন, এডহক কমিটির সভা পরিচালনায় বাধা প্রদান করেছেন এবং বহিরাগত দিয়ে গভর্নিং বডির বিদ্যোৎসাহী সদস্য মনোনয়ন দেয়ার নিমিত্তে আমাকে বলপ্রয়োগ করার চেষ্টা করেছেন। এ কাজগুলোতে সহায়তা করেছেন দাতা সদস্য আবুল মনসুর।’’ 

কলেজের সার্বিক বিষয়ে অধ্যাপক মোহাম্মদ মামুন চৌধুরী বলেন, এডহক কমিটির ৪র্থ সভায় কমিটির সদস্যবৃন্দ সভাপতি ও বিদ্যোৎসাহী সদস্যকে কলেজের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে সার্বিক উন্নয়নের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এছাড়া গত ৩ মাসে কলেজের আয় ৪০ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অধ্যাপক মামুন চৌধুরী জানান।


সর্বশেষ সংবাদ