রাস্তা ছাড়াই সেতু, উন্নয়নের নামে প্রহসন
- আতিকুল হা-মীম আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) আনোয়ারা
- প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৫, ০৩:১২ PM , আপডেট: ২১ জুন ২০২৫, ০২:০৮ PM
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার চাতরী ইউনিয়নের পশ্চিম রুদুরা গ্রামে ইছামতী খালের ওপর থাকা সেতুর দুপাশে সংযোগ সড়ক রয়েছে। কিন্তু এই সড়ক এতটাই জরাজীর্ণ ও সরু যে যানবাহন চলাচল তো দূরে, মানুষের হাঁটাচলাও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। উন্নয়নের নামে এমন অসম্পূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে ইছামতী খালের ওপর একটি স্টিলের সেতু নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়কের উন্নয়ন হয়নি তখনই। পরে একাধিকবার বরাদ্দ এলেও কোনো ঠিকাদার কাজ নিতে আগ্রহ দেখাননি বলে অভিযোগ রয়েছে।
বর্তমান অবস্থায় সেতু পার হওয়া সম্ভব হলেও উভয় পাশে কাঁচা ও ইটের কংক্রিটে তৈরি সরু রাস্তা দিয়ে যাত্রী, মালামাল বা রোগী পরিবহন তো দূরের কথা, স্বাভাবিক হাঁটাও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এই সড়কের অন্য অংশে একটি বাঁশ-লাকড়ির সাঁকো স্থাপন করে মানুষ ঝুঁকি নিয়ে তা পার হয়ে চলাচল করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পশ্চিম রুদুরা থেকে রুদুরা পর্যন্ত রাস্তার বেহাল দশা। বর্ষা মৌসুমে কাদামাটি ও পানি জমে চলাচল একপ্রকার অসম্ভব হয়ে পড়ে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা সড়ক পাকা করার দাবি জানিয়ে আসছি। সড়কটি নির্মিত হলে অন্তত তিনটি গ্রামের মানুষ উপকৃত হবে। রোগী পরিবহনেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কিন্তু কারও কোনো খেয়াল নেই এদিকে।’
স্থানীয় যুবক মো. রাশেদ বলেন, ‘রাস্তার দুরবস্থার কারণে রোগীকে হাসপাতালে নিতে বিকল্প রাস্তায় যানজটে পড়তে হয়, এতে অনেক সময় দেরিতে পৌঁছানোর কারণে বড় ধরনের সমস্যা হয়।’
তাসনুভা নামের এক স্কুলশিক্ষার্থী বলে, ‘প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্ষায় কাদায় পড়ে যাই, বই-খাতা নষ্ট হয়। পাকা রাস্তা হলে পড়াশোনায় আর সমস্যা হতো না।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য জুবাইরুল আলম সড়কটি পরিদর্শন করে বলেন, ‘এটি চাতরী ইউনিয়নের অন্যতম প্রাচীন সড়ক। সেতু থাকলেও সড়কটি না থাকায় তা অকেজো হয়ে পড়েছে। আমি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আনব এবং আন্তরিক প্রচেষ্টায় এটি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য কাজ করব।’
আনোয়ারা উপজেলা প্রকৌশল (এলজিইডি) কর্মকর্তা মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘সম্প্রতি সড়কটি পরিদর্শন করেছি। উন্নয়নের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। নতুন প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করে বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় নেওয়া হবে।’
স্থানীয়রা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে চলা দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে দ্রুত পাকা সড়ক নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা। সেতু নির্মাণের ২০ বছর পরও যদি সংযোগ সড়ক না থাকে, তাহলে এটি উন্নয়নের নামে প্রহসন।