২০ টাকা ফিতে রোগী দেখেন ডা. সমেশ চন্দ্র, যা বলছেন রোগীরা

রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন ডা. সমেশ চন্দ্র রায়
রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন ডা. সমেশ চন্দ্র রায়  © টিডিসি ফটো

দিনাজপুরের বীরগঞ্জে স্বাস্থ্যসেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে মাত্র ২০ টাকা ফিতে রোগী দেখছেন ডা. সমেশ চন্দ্র রায়। এতে গ্রামের দরিদ্র, অসহায় মানুষ অনেক খুশি। তারা এই চিকিৎসকের এমন মানবিক উদ্যোগের প্রশংসা করেন।

ডা. সমেশ চন্দ্র রায়ের কাছে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন মুন ইসলাম। তিনি জানান, তার দীর্ঘদিন ধরে এলার্জি সমস্যা। বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিয়েছেন কিন্তু সুস্থ হচ্ছিলেন না। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। ফেসবুকে ২০ টাকা ভিজিটে ডাক্তার দেখান, এমন পোস্ট দেখে এই চিকিৎসকের কাছে আসেন এবং সাত দিন ওষুধ খাওয়ার পর এখন অনেকটাই সুস্থ বলে জানান মুন।

তিনি আরও জানান, ভালো চিকিৎসা পেয়ে তিনি অনেক খুশি মুন। নিয়মিত পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাচ্ছেন এবং রুটিন চেকআপ করতে আসেন ডা. সমেশ চন্দ্র রায়ের কাছে।

সেবা নিতে আসা আরেক রোগী গীতা রানী জানান, দীর্ঘদিন ধরে তার কোমরে ব্যথা। এ কারণে জীবন অতিষ্ঠ তার। আর্থিকভাবে অসহায় হওয়ায় হাসপাতালে যেতে পারতেন না। তার নাতির কাছে শুনেছেন ২০ টাকা ফিতে একজন চিকিৎসক রোগী দেখেন। তা শুনে ডা. সমেশ চন্দ্র রায়ের কাছে চলে আসেন।

গীতা রানী বলেন, ‘মুই গ্রামের গরিব মানুষ, অভাবের কারণে সংসারে টানাটানি চলছে। নুন আনতে পান্তা ফুরায়, ওসুখ ধরলে ভয়ে ডাক্তারের কাছে যাও না। ২০ টাকার ডাক্তারের কথা শুনি আইছিনু, ডাক্তারটা অনেক ভালো মানুষ, খুব ভালো করি শুনিল মোর সমস্যাগুলা। দুইটা-তিনটা পরীক্ষা দিছিল, তাও ১০০০ টাকার পরীক্ষা ৭০০ টাকায় করি দিছে। ভগবান ডাক্তারের ভালো করুক।’

ডা. সমেশ চন্দ্র রায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) থেকে এমবিবিএস পাস করে কুমিল্লা ডক্টরস কমিউনিটি হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি নিজ জেলায় নতুন কর্মস্থলে যোগ দিয়েই রমজান উপলক্ষে এই মানবিক উদ্যোগ শুরু করেন।

এই চিকিৎসক বলেন, দুনিয়াতে সবাই কোনো না কোনোভাবে ইনকাম করছে। আমিও করেছি। অনেক দিন কুমিল্লার ডক্টরস কমিউনিটি হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কাজ করেছি। কিন্তু প্রায় সময় পরিবার থেকে দূরে থাকতে হতো। তাই দিনাজপুরে কিছু করার চিন্তা থেকে বীরগঞ্জে চেম্বার শুরু করি।

এই সময়ে ‘জাগরণ ব্লাড ব্যাংক অ্যান্ড ফাউন্ডেশন’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারা বীরগঞ্জের অসহায় ও দুস্থ মানুষের জন্য কিছু করার প্রস্তাব দেন। প্রথমে আমি দ্বিধায় ছিলাম। আমার দ্বারা কি কিছু করা সম্ভব? কিন্তু তাদের এই মহৎ প্রস্তাব আমার খুব ভালো লাগে, আর আমি রাজি হয়ে যাই। আপনাদের সবার ভালোবাসা ও আশীর্বাদ কামনা করি, যাতে সামনে এগিয়ে যেতে পারি, মানুষের জন্য কিছু করতে পারি।

জাগরণ ব্লাড ব্যাংক অ্যান্ড ফাউন্ডেশনের পরিচালক মো. নাইম বলেন, মানুষের সেবা করার মহান লক্ষ্যে আমাদের এই প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুরু থেকেই আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাশ্রয়ী ও মানসম্মত চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য। আমাদের এই মানবসেবামূলক কার্যক্রম ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে, ইনশাআল্লাহ।

তিনি আরও বলেন, আমরা শুরু থেকেই এমন একজন চিকিৎসকের সন্ধান করছিলাম, যিনি স্বল্প ফিতে রোগীদের সেবা দেবেন। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা সেই মহান মনোভাবের চিকিৎসককে পেয়েছি। তবে আমাদের এই অনুসন্ধান এখানেই থেমে নেই। আমরা আরও এমন উদার ও মানবিক চিকিৎসক খুঁজছি। যারা আমাদের এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষকে মানবিক সেবা দেবেন।

মো. নাইম বলেন, শুধু চিকিৎসাসেবাই নয়, সব ধরনের পরীক্ষার ক্ষেত্রেও আমরা পর্যাপ্ত ডিসকাউন্টের ব্যবস্থা রেখেছি, যাতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সবার জন্য সহজলভ্য হয়। সবার কাছে দোয়া কামনা করছি, যেন আমরা এই সেবামূলক কাজ আরও সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।


সর্বশেষ সংবাদ