প্রতিবেশী ৮ দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫-৪৫, বাংলাদেশ-পাকিস্তানে ৩০

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রায় এক যুগ ধরে আন্দোলন চলছে
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রায় এক যুগ ধরে আন্দোলন চলছে  © ফাইল ছবি

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রায় এক যুগ ধরে আন্দোলন করছেন চাকরিপ্রার্থীরা। সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী এ বয়স ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ বছরে উন্নীত করার সুপারিশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন। এরপর থেকে বিষয়টি নিয়ে ফের আলোচনা শুরু হয়ছে।

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের অনেক দেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর থেকে ৪৫ বছর। তবে বাংলাদেশে বয়স ৩০ বছর হলে আর সরকারি চাকরির আবেদন করা যায় না। অবশ্য কোটা থেকে আবেদন করা যায় ৩২ বছর পর্যন্ত। তবে সরকারি নার্সিংয়ের ক্ষেত্রে ৩৫ বছর এবং বিভাগীয় প্রার্থীর কোটায় ৩৫ বছর পর্যন্ত আবেদন করা যায়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানদণ্ড পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ১৬২টি দেশে সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর। কোনও কোনও দেশে এটি উন্মুক্ত। প্রতিবেশী অন্তত ৮ দেশে এ বয়সসীমা ৩৫ থেকে ৪৫ বছর। বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে এ বয়সসীমা ২৭ থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করা হয়, যা এখনো কার্যকর রয়েছে। সে সময় মানুষের গড় আয়ু ছিল ৫৭ বছর। বর্তমানে গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৩ বছর।

মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানে ৩৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে আবেদন করার নিয়ম রয়েছে। আফগানিস্তানে বয়সসীমা ৩৫ বছর। আর মালদ্বীপে সর্বোচ্চ ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত সরকারি চাকরির আবেদন করা যায়|

এরপর বয়স বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন হলেও কোনো সরকারই ভ্রুক্ষেপ করেনি। এ জন্য বিভিন্ন সময়ে নানা ব্যাখ্যা দিয়েছে সরকার। তবে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এ বয়সসীমা ৩৫ বছর করার সুপারিশ করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৮ সালে নির্বাচনি ইশতেহারে মেধা ও দক্ষতা বিবেচনায় রেখে বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে যুক্তিসঙ্গত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা উল্লেখ করেছিল বলে শিক্ষামন্ত্রী চিঠিতে উল্লেখ করেন।

শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, এটি সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে রাজ্যভেদে ও চাকরির ধরন অনুযায়ী আবেদনের বয়সসীমা ৩২-৪২ বছর পর্যন্ত। দেশটিতে প্রশাসনিক সরকারি চাকরিতে আবেদন করতে হলে ন্যূনতম ২১ থেকে ৩২ বছর বয়স হতে হয়। তবে কোটায় ৪২ বছর বয়স পর্যন্ত আবেদন কর যায়। অনগ্রসর শ্রেণির জনগণ ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত আবেদন করতে পারেন। আর দলিতরা ৩৭ বছর পর্যন্ত আবেদন করতে পারেন।

নেপালে গেজেটেড ও নন গেজেটেড পদে আবেদন করার ক্ষেত্রে পুরুষের ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১৮ বছর এবং সর্বোচ্চ ৩৫ বছর। তবে নারী ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা ৪০ বছর পর্যন্ত আবেদন করতে পারেন। গেজেটেড পদ শাখা কর্মকর্তা, উপসচিব এবং যুগ্ম সচিব বা এ ধরনের পদে ন্যূনতম ২১ বছর এবং সর্বোচ্চ ৩৫ বছর পর্যন্ত আবেদন করা যায়। এ পদে মহিলা ও প্রতিবন্ধীরা ৪০ বছর পর্যন্ত আবেদন করতে পারেন।

শূন্য পদের ক্ষেত্রে উপ-সচিব ও যুগ্ম সচিব পদে ৪৫ বছর পর্যন্ত আবেদন করার বিধান রয়েছে। স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রাথমিক স্তরের পদে সর্বনিম্ন ১৮ বছর এবং সর্বোচ্চ ৪৫ বছর পর্যন্ত আবেদন করা যায়। অফিসার পদে সর্বনিম্ন ২১ ও সর্বোচ্চ ৪৫ বছরের ব্যক্তিরাও আবেদন করতে পারেন।

শ্রীলঙ্কায় স্নাতক পাস করা বেকাররা সরকারের যে কোনো কর্মসূচির অধীনে ৪৫ বছর পর্যন্ত আবেদন করতে পারেন। আগে এ বয়সসীমা ছিল ৩৫ বছর। তবে সরকারি চাকরির সব ক্যাটাগরির জন্য এ বয়সসীমা প্রযোজ্য নয়।

আরো পড়ুন: চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই: ফরহাদ হোসেন

এদিকে দক্ষিণ এশিয়ায় শুধু বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছর। পাকিস্তানে সরকারি চাকরিতে ২১ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ বছর পর্যন্ত আবেদন করা যায়। তবে কোটার ক্ষেত্রে ৩২ বছর বয়স পর্যন্ত আবেদন করতে পারেন চাকরিপ্রার্থীরা। তবে দেশটির বেলুচিস্তান রাজ্য সরকার বয়সসীমা ৪৩ বছর করেছে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মধ্যে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানে ৩৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে আবেদন করার নিয়ম রয়েছে। আফগানিস্তানে বয়সসীমা ৩৫ বছর। আর মালদ্বীপে সর্বোচ্চ ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত সরকারি চাকরির আবেদন করা যায় বলে বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ