সংস্কার প্রস্তাবের যৌক্তিকতা যাচাইয়ে বইমেলায় গবেষণা গ্রন্থ ‘সংবিধানের পোস্টমর্টেম’

  © টিডিসি ফটো

অমর একুশে বইমেলায় সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারের লক্ষ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন ও নির্বাচন সংস্কার কমিশনগুলোর যেসব প্রস্তাবটি পেশ করেছে, সেগুলো দেশের জন্য কতটা উপযোগী, তা বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বিশ্লেষণ করে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করা হয়েছে। আজ বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টার দিকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

প্রকাশিত ‘সংবিধানের পোস্টমর্টেম: পর্যালোচনা, বিশ্লেষণী ও সংস্কারের রূপরেখা’ নামক এই গ্রন্থটিতে, কমিশনগুলো সুপারিশগুলোর পক্ষে এবং বিপক্ষের সমস্ত যুক্তি, তথ্য ও তত্ত্বগুলো একত্রে উপস্থাপন করে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। অনুরূপভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞগণ কর্তৃক প্রকাশিত সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাবগুলোর উপযোগিতা।

মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে গ্রন্থটির অন্যতম সম্পাদক অধ্যাপক ড. আনিসুল হক বলেন, ‘এই বইটা বাংলাদেশের সংবিধান নিয়ে  তরুণদের একটি গবেষণার ফলাফলের উপর রচিত। বইটা এই কারণে অন্যরকম যে এখানে সংবিধানের মত জটিল এবং স্পর্শকাতর একটা বিষয়কে জুলাই বিপ্লব প্রজন্ম তাঁদের নিজস্ব চিন্তা এবং পদ্ধতিতে প্রকাশ করেছে। বইটার লেখক-গবেষকরা সবাই তরুণ। তারা যে সার্ভে করেছে, সেখানকার তথ্যদাতারাও অধিকাংশই তরুণ। বইটার একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো: এর গবেষণা পদ্ধতি।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘সংবিধানের বিভিন্ন পরস্পরবিরোধী জটিল যে সব প্রস্তাব রয়েছে, প্রত্যেকটির যৌক্তিকতা যাচাইয়ের জন্য ‘ক্রস এলিমিন্যাটিং লজিক্যাল অ্যানালাইসিস’ নামের একটা বিজ্ঞান ভিত্তিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। এটা একটা যুক্তিনির্ভর, বস্তুনিষ্ঠ, নিরপেক্ষ পদ্ধতি। এই পদ্ধতি দিয়ে সামাজিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন সমস্যার নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ সম্ভব। এই বইটা পড়তে গিয়ে পাঠকের মনে অনেক প্রশ্নের উদয় হবে, যার উত্তর এই বইতে নাই। পাঠক চাইলে বইতে ব্যবহৃত পদ্ধতি ব্যবহার করে নিজে নিজেই সেই প্রশ্নটির উত্তর বের করতে পারে। বইমেলায় প্রকাশ করার জন্য বইটি অনেক তাড়াহুড়া করে শেষ করা হয়েছে। ফলে, এতে অনেক ত্রুটিবিচ্যুতি হয়ত রয়ে গেছে। পাঠকের কাছে অনুরোধ, এই সব ত্রুটি বিচ্যুতি স্বত্বেও সংবিধানের মত জটিল বিষয়ে এই প্রজন্মের আগ্রহ দেশের প্রতি তাঁদের সীমাহীন ভালোবাসারই প্রকাশ - এই আলোকে বইটাকে মূল্যায়ন করতে।’

এই ব্যাপারে গ্রন্থটির মুখ্য গবেষক ও রচয়িতা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমি গ্রন্থটির বিশ্লেষণ পদ্ধতি সম্পর্কে বলব। আপনারা সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পড়লে দেখবেন, সেখানে কিছু সুপারিশ দেওয়া আছে; এবং ওই সুপারিশগুলোর পক্ষের কিছু যুক্তি, উদাহরণ দরকার সেইগুলো দেওয়া আছে। আমাদের গবেষণা গ্রন্থের বিশ্লেষণ পদ্ধতি এইরকম একরৈখিক না। আমরা বিভিন্ন অংশীদারদের প্রস্তাবগুলোর পক্ষের এবং বিপক্ষের উভয় যুক্তিগুলোই একত্র করেছি। এরপর, বিপক্ষের যুক্তি অর্থাৎ, প্রস্তাবটির অসুবিধাগুলো কী কীভাবে দূর করা যায়, তার কৌশল বের করার চেষ্টা করেছি।’

 ‘এরপরে, সবগুলো প্রস্তাবকে এইভাবে বিশ্লেষণ করে প্রস্তাবগুলোর ইতিবাচক দিক গ্রহণ ও নীতিবাচক দিক বর্জন করে কীভাবে সিদ্ধান্তে আসা যায়, সেই ব্যাপারে কয়েকটা করে সম্ভাব্য সমাধান সেট প্রস্তুত করেছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, আমাদের সমাধান সেটাকেও আবার এইভাবে বিশ্লেষণ করেছি। এইভাবে বারবার অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে নেতিবাচক দিক বর্জন করে সবচেয়ে সুবিধাজনক সমাধান বের করার পদ্ধতিটির নাম দিয়েছি ‘ক্রস-এলিমিন্যাটিং লজিক্যাল অ্যানালাইসিস’ মডেল। এটা আরজিএ উইলিয়ামসের ‘এলিমিন্যাটিং র‌্যাশনালাইজেশন’ পদ্ধতিকে আরেকটু বড় করে ডেভেলপ করা হয়েছে। সংবিধানের পোস্টমর্টেম গ্রন্থের সবখানে যে ক্রস-এলিমিন্যাটিং লজিক্যাল অ্যানালাইসিস ব্যবহার করা হয়েছে তা না, কিছু কিছু ক্ষেত্রে শুধু ‘এলিমিন্যাটিং র‌্যাশনালাইজেশন’টাই হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। আমার বিশ্বাস সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিটি প্রস্তাব এইভাবে বহুমাত্রিক-যৌক্তিক বিশ্লেষণ করে তারপর বাস্তবায়নের জন্য হাত দেওয়া হলে সেটা দেশের জন্য আরো বেশি উপকার বয়ে আনবে।’

গ্রন্থটির ‘গবেষণা সহযোগী’ মো. আশিফ করিম বলেন, ‘দেশের মালিক হলো জনগণ। সংবিধানের কোথায় সংস্কার হবে কি হবে না সেটা সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগণ সেই সিদ্ধান্ত নেবে। এই গ্রন্থটিতে কোনো সিদ্ধান্ত বা সুপারিশ চাপিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়নি। বরং, সংবিধান সংস্কারের জন্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলো যেসব সুপারিশ করেছে, সেই সুপারিশগুলো কতটা যৌক্তিক সেইটা ব্যাখ্যা করা হয়েছে।’ 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুল মোমেন, বলেন, ‘এই বইটিতে এমন কিছু যুক্তি আছে, তথ্য আছে, যা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে নেই। সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে আছে, কী কী সংস্কার করতে হবে। আর, এই বইটাতে আছে, কেন করতে হবে কিংবা কেন করা যাবে না। বইটার লেখক-গবেষকগণ ছোট মানুষ। কিন্তু, এদের কাজটা ছোট হয় নাই।’

গ্রন্থটির সম্পর্কে বিশিষ্ট কবি আবুল কাশেম আজাদ, ‘যেকোনো ইতিবাচক সংস্কারের জন্য দরকার গবেষণা। তথ্য, যুক্তি ও পাল্টা যুক্তির সম্মিলন দরকার। পক্ষে-বিপক্ষে সব যুক্তির বিশ্লেষণ করা দরকার। তারপর সংস্কার করা হলে সেটা টেকসই হয়। সংবিধানের মত রাষ্ট্রের একটা পবিত্র জিনিস সংস্কারের জন্যও এই ধাপগুলো পাড় হওয়া দরকার। কমিশন কিছু সুপারিশ করেছে। কোন সুপারিশ কেন করল, পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি কী, কোন সুপারিশ বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ কী, তা কিন্তু কমিশনের সুপারিশে নাই। এই বইটা, আমাদের ছেলেমেয়েরা কষ্ট করে করেছে। এখানে কিন্তু যুক্তিগুলো আছে। সব পক্ষের প্রস্তাবগুলোর পক্ষে-বিপক্ষে সব যুক্তিই আছে। এগুলো আরো বিচার বিশ্লেষণ করে সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন হওয়া দরকার।’ 

এসময়, গ্রন্থটির অন্যতম সম্পাদক এনামূল হক পলাশ ও মুহাম্মাদ সাদ্দাম হোসেন, গ্রন্থটির গবেষণা সহযোগী মো. আশিফ করিম, শেখ সাদী ইমু, আবদুর রহিম আয়মান, এ.কে. এম. আরাফাত, মোহাম্মাদ জিহাদ, মো. জাহিদ হাসান দেওয়ান, কবি ও সাংবাদিক পলিয়ার ওয়াহিদসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence