৮০০ কোটি টাকা বেশি খরচ করেও কথা রাখতে পারছে না এনসিটিবি

এনসিটিবি
এনসিটিবি   © সংগৃহীত

২০২৪ সাল শেষ হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। একদিন বাদে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হলেও পাঠ্যবই ছাত্রছাত্রীদের হাতে উঠবে কবে? সেই নিশ্চয়তা এখনো দিতে পারছে না জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ইতোমধ্যে প্রেস মালিকদের সিন্ডিকেট, স্বল্প সময়ে অধিক বই মুদ্রণ এবং নবম-দশম শ্রেণিতে নতুন করে ৬ কোটির বেশি বই ছাপানোর মতো বেশকিছু কারণ দেখিয়ে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা বেশি ব্যয়ের কথা জানালেও এখনো অন্তত ৩০ শতাংশ বইয়ের চুক্তি সম্পন্ন করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।

বই ছাপানোর কাজের সঙ্গে যুক্ত প্রেস মালিকরা জানান, এনসিটিবির দুর্বলতার কারণেই এত লম্বা সময় ব্যয় হলো। শেষ সময়ে এসে তারা নতুন করে কাজ দ্রুত করার জন্য প্রেশার দিচ্ছে। অথচ এতদিন নিজেরাই কাজে বিলম্ব করেছেন। 

এটা খুবই কঠিন। কিছু বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছতে হলেও সেটার জন্য অন্তত সপ্তাহ-দশদিন আগে পরিকল্পনা করার দরকার ছিল। যতই চেষ্টা করুক, শেষ সময়ে কাজ করার ফলে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানেই বই পৌঁছানো সম্ভব হবে না। আর সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে মার্চ পেরিয়ে এপ্রিল গড়াতে পারে।

অন্যদিকে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বই না ছাপানোর জন্য দায় দিচ্ছে প্রেস মালিকদের। দুই পক্ষের রেষারেষি যেন চলছেই।

এনসিটিবি বলছে, বছরের প্রথমদিন সব শিক্ষার্থীদের হাতে কিছ না কিছু বই তুলে দিতে কাজ করছেন তারা। এর জন্য প্রতিষ্ঠানটি সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) রাতের মধ্যে সব জেলায় বই পৌঁছাবেন। পরে এসব বই আজ (৩১ ডিসেম্বর) উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছানোর কাজ করছেন তারা। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে এনসিটিবির কর্মকর্তারাই সন্দেহ পোষণ করছেন।

একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা হলে তারা জানান, এনসিটিবি যে পরিকল্পনা করছে, এটা খুবই কঠিন। কিছু বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছতে হলেও সেটার জন্য অন্তত সপ্তাহ-দশদিন আগে পরিকল্পনা করার দরকার ছিল। যতই চেষ্টা করুক, শেষ সময়ে কাজ করার ফলে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানেই বই পৌঁছানো সম্ভব হবে না। আর সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে মার্চ পেরিয়ে এপ্রিল গড়াতে পারে।

তবে এনসিটিবি কর্মকর্তাদের দাবি, বছরের প্রথমদিন তারা সব স্কুলে কিছু না কিছু পাঠ্যবই পৌঁছানোর বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শে কিছু কৌশল হাতে নেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী কাজও করছেন তারা।

দীর্ঘদিন থেকে এনসিটিবির বই ছাপানোর কাজ করছেন এমন কয়েকটি প্রেসের মালিক জানান, বেশিরভাগ কোম্পানি এখন কাগজের দাম বাড়িয়ে রাখছে। এনসিটিবি যদি চুক্তির আগেই সময় স্বল্পতার বিষয়ে জানিয়ে দিত তাহলে আমরা সেভাবে কাজ নেয়ার বিষয়ে চুক্তি করতাম। সেটা তারা করেনি। এখন শেষ সময়ে এসে জানুয়ারির ২১ তারিখের কথা বলছে কেন? আমাদেরও ত সীমাবদ্ধতা আছে। এনসিটিবি নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে প্রেস মালিকদের উপর দায় চাপাচ্ছে।

আগের কোনো চেয়ারম্যান প্রেস মালিকদের সাথে এত সাহস দেখিয়ে কথা বলতে পারেনি। প্রেস মালিকরা সবাই মিলে জোট হয়ে অনৈতিক সুবিধা আদায় করার ফন্দি করেছে। তবে আমরাও তাদের ছাড় দেব না। ইতোমধ্যে  সরকারের বিভিন্ন সংস্থা নিবিড়ভাবে কাজ করে দিয়েছে।  যতদ্রুত সম্ভব বই ছাপানোর কাজ শেষ করাই আমাদের লক্ষ্য।—অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান

প্রেস মালিকরা আরো বলেন, প্রতিটি টেন্ডারের ওপেনিং, নোয়া দেওয়ার তারিখ এবং চুক্তির তারিখে লম্বা সময় ব্যয় হয়েছে। কোথাও কোথাও ২ থেকে ৩ মাস সময়ও লেগেছে। এই সময় অতিবাহিত করার কী কারণ ছিল? এনসিটিবি যদি দ্রুত সময়ে বই দেয়ার মানসিকতা রাখে, তাহলে তারা শুরু থেকেই তড়িঘড়ি না করে শেষ সময়ে এসে কেন এত তাড়াহুড়ো?

এদিকে সম্প্রতি গত (২২ ডিসেম্বর) পাঠ্যবই ছাপতে প্রেস মালিকদের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল (এনসিটিবি)। এনসিটিবি বেঁধে দেওয় সময় অনুযায়ী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাথমিকের সব বই এবং মাধ্যমিকের বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বই পৌঁছাতে নির্দেশনা দেয়া হয়। এছাড়াও ২০২৫ সালের ১০ জানুয়ারির মধ্যে মাধ্যমিকের আরও ৫ টি বই এবং ২০ জানুয়ারির মধ্যে বাকি সব বই পৌঁছানোর কথা ছিল।

কিন্তু যে-সব বইয়ের লটের চুক্তি হয়নি সেগুলো কবে নাগাদ সম্পন্ন হবে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেনি এনসিটিবি। উল্টো প্রতিষ্ঠানটি প্রেস মালিকদের উপর দায় চাপাচ্ছে।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, আগের কোনো চেয়ারম্যান প্রেস মালিকদের সাথে এত সাহস দেখিয়ে কথা বলতে পারেনি। প্রেস মালিকরা সবাই মিলে জোট হয়ে অনৈতিক সুবিধা আদায় করার ফন্দি করেছে। তবে আমরাও তাদের ছাড় দেব না। ইতোমধ্যে  সরকারের বিভিন্ন সংস্থা নিবিড়ভাবে কাজ করে দিয়েছে।  যতদ্রুত সম্ভব বই ছাপানোর কাজ শেষ করাই আমাদের লক্ষ্য।

প্রেস মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান বলেন, প্রেস মালিকরা ধারণা করেছিল সময় দীর্ঘায়িত করে একপর্যায়ে নিম্নমানের কাগজে বই ছাপিয়ে দেবে। কিন্তু আমরা এবার সেই সুযোগ দেব না। কারণ, ইতোমধ্যে তারা টাকা বেশি নিচ্ছে এবং সময়ও দেরি করেছে। এরপর থেকে প্রেস মালিকদের খপ্পরে এনসিটিবি পড়বে না। আর আমরা বইয়ের মানেও কোনো ছাড় দেব না।


সর্বশেষ সংবাদ