বাকৃবির সাবেক ছাত্র জিলকে ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে

মামলার বাদী প্রয়াত জিল হোসেন
মামলার বাদী প্রয়াত জিল হোসেন  © সংগৃহীত

স্নাতকের সনদ আর ক্ষতিপূরণের জন্য দীর্ঘ ৪৯ বছর লড়েও মামলার শেষ দেখে যেতে পারেননি সিরাজগঞ্জের কাজিপুরের জিল হোসেন। গত বছন তিনি মারা যান। তবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী প্রয়াত জিলকে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বিচারিক আদালতের দেওয়া রায় বহাল রেখেছেন উচ্চ আদালত। রায়ের দিন থেকে ওই অর্থের ওপর ১০ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। শর্তানুসারে এর আগে আদালতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জমাকৃত ২৫ লাখ টাকা হিসেব থেকে বাদ যাবে।

বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে করা বিশ্ববিদ্যালয়ের আপিল খারিজ করে বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি মো. আলী রেজার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার (৭ মার্চ) এ রায় দেন। মামলার বাদী প্রয়াত জিল হোসেনের ছোট ছেলে নূর মোহাম্মদ রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। ক্ষতিপূরণের এ অর্থ জিল হোসেনের উত্তরাধিকারীরা পাবেন।

আরও পড়ুন: সনদ-ক্ষতিপূরণের জন্য ৪৯ বছর লড়েও শূন্য হাতে চলে গেলেন জিল হোসেন

জিল হোসেনের জীবনের গল্পটা অনেকটা ভিন্ন। তাঁর ৭২ বছরের জীবনের ৪৭ বছরই কেটেছে আইনি লড়াইয়ে। ১৯৭৩ সালে ২৩ বছর বয়সে তিনি স্নাতক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। আদালতের রায়ের পর ৪৭ বছর বয়সে পরীক্ষা পাসের সনদ পেলেও আর কোনো চাকরিতে সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ পাননি তিনি। সিরাজগঞ্জ সদরের চিলগাছা গ্রামে চার ছেলে ও চার মেয়ে নিয়ে থাকতেন জিল হোসেন। ছোটখাটো ব্যবসা করে সংসার চালাতেন। গত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি জিল হোসেন মারা যান।

সনদের জন্য আইনি লড়াই

১৯৭১-৭২ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএসসি (অ্যাগ্রি) স্নাতক দ্বিতীয় পর্বের চতুর্থ বর্ষের পুরোনো পাঠ্যক্রমের চূড়ান্ত পরীক্ষার্থী ছিলেন জিল হোসেন। ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার ফলাফলে জিল হোসেনকে অকৃতকার্য ঘোষণা করা হয়। ফলাফল পুনর্বিবেচনা চেয়ে একাডেমিক কাউন্সিলে আবেদন করে বিফল হন তিনি। পরে ১৯৭৫ সালে আবার পরীক্ষায় অংশ নিলেও তাঁকে বহিষ্কার করা হয়।

এসবের প্রতিকার চেয়ে ১৯৭৫ সালের ২২ এপ্রিল ময়মনসিংহের প্রথম মুনসেফ আদালতে মামলা করেন জিল হোসেন। মামলায় তিনি দাবি করেছিলেন, ১৯৭৩ সালে দেওয়া পরীক্ষায় তাঁর প্রাপ্ত নম্বরের সঙ্গে ভগ্নাংশ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নম্বরের সঙ্গে ভগ্নাংশ যোগ না করে তাঁকে অকৃতকার্য ঘোষণা করে। এ মামলায় আদালত ১৯৭৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে ভগ্নাংশ নম্বর যোগ না করে তাঁকে অকৃতকার্য করাকে বেআইনি ঘোষণা করেন।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ থাকছে

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই রায়ের বিরুদ্ধে জজ আদালতে আপিল করলে তার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৬ সালের ৩১ জানুয়ারি আদালতের দেওয়া রায়ে জিল হোসেনকে বহিষ্কার আদেশ বেআইনি ঘোষণা করা হয়। একই বছর কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করলে তার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৬ সালের ২৪ আগস্ট মামলাটি পুনর্বিচারের জন্য প্রথম মুনসেফ আদালতে পাঠান উচ্চ আদালত।

এরপর ১৯৭৮ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রথম মুনসেফ আদালত ভগ্নাংশ নম্বর যোগ করে ৩০ দিনের মধ্যে জিল হোসেনের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করার নির্দেশ দেন। এর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবার জেলা জজ আদালতে আপিল করলে তা নামঞ্জুর হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করলে ১৯৮৩ সালের ১৬ জানুয়ারি বিচারিক আদালতের সিদ্ধান্ত বহাল থাকে।

১৪ বছর পর ক্ষতিপূরণ মামলার আপিল নিষ্পত্তি

উচ্চ আদালতের রায়ের পর ১৯৮৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর জিল হোসেনের একটি আবেদন গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে ১৯৯৭ সালের ২২ অক্টোবর তাঁকে পাস নম্বর দিয়ে সনদ দিলেও তখন তাঁর বয়স ৪৭ বছর হওয়ায় সরকারি চাকরির বয়সসীমা শেষ হয়ে যায়।

আরও পড়ুন: এবার গুলিস্তানের ভবনে বিস্ফোরণ, নিহত ৩

এরপর ২০০০ সালের ১৮ অক্টোবর ক্ষতিপূরণ দাবি করে জিল হোসেন অধস্তন আদালতে মামলা করেন যাতে অভিযোগ করা হয়, উচ্চ আদালতের রায় ১৪ বছর ৯ মাস পরে কার্যকর করে বিশ্ববিদ্যালয় যার ফলে তাঁর জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে।

ক্ষতিপূরণ মামলায় ২০০৮ সালের ২৬ আগস্ট রায় দেন ময়মনসিংহের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত। রায়ে ৩০ দিনের মধ্যে জিল হোসেনকে দুই কোটি টাকা দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হলে এর বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে উচ্চ আদালতে আপিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন: চবির ভর্তি আবেদন শুরু ২০ মার্চ, বেড়েছে ফি

আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ৪ জুন শর্ত সাপেক্ষে ক্ষতিপূরণের আদেশ স্থগিত করেন উচ্চ আদালত। শর্তে দুই কোটি টাকার ১২ দশমিক ৫ শতাংশ, অর্থাৎ ২৫ লাখ টাকা তিন মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সংশ্লিষ্ট আদালতে জমা দিতে বলা হয়। এতে ব্যর্থ হলে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়ে যাবে বলে ওই আদেশে উল্লেখ করা হয়।

জিল হোসেন মারা যাওয়ার পর আপিল শুনানির জন্য উঠলে ১৩ বছর আগে উচ্চ আদালত দুই কোটি টাকার ১২ দশমিক ৫ শতাংশ টাকা সংশ্লিষ্ট আদালতে জমা দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তা সামনে আসে। এ অবস্থায় উচ্চ আদালত গত ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ২৫ লাখ টাকা জমা দিতে বললে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত ৪ জানুয়ারি ওই অর্থ জমা দেয়। ১৪ বছর আজ মঙ্গলবার এ আপিল খারিজ করে দিয়েছেন উচ্চ আদালত।

 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence