ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিট

ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় কর্তৃপক্ষের ভুলের খেসারত শিক্ষার্থীদের দেওয়ার আশঙ্কা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা  © ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নিয়ে বিতর্ক থামছেই না। কর্তৃপক্ষের ভুলের খেসারত শিক্ষার্থীদের দিতে হতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অব্যবস্থাপনা ও প্রশ্নে গরমিলের অভিযোগ তুলে ফের এ পরীক্ষা নেওয়ার দাবি তুলেছেন অনেকে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, পরীক্ষা বাতিল না করে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ফলাফল ঘোষণা করার চেষ্টা চলছে।

ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, দু’টি ভিন্ন সেটের চার ধরনের প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। যেখানে অন্তত ১৩টি প্রশ্নের ক্ষেত্রে ক্রমধারা, পুনরাবৃত্তিসহ নানান গড়মিল রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পরীক্ষার পর আপত্তি জানিয়েছেন তারা, দাবি তুলেছেন- পরীক্ষা বাতিল করে নতুন করে নেওয়ার। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসে ফোনে এবং লিখিতভাবে এসব দাবির কথা জানিয়েছেন অনেকে।

তারা বলছেন, প্রশ্নপত্র বাতিল করা ছাড়া এসব ভুলের কোন সমাধান হয় না। এমসিকিউ-এর ওএমআর শিট যাচাই করা হয় সেটের ভিত্তিতে। এমসিকিউ’র ওএমআর মেশিন কিভাবে বুঝবে যে, কোন শিক্ষার্থী কোন সেটের কোন ধরনের প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়েছে। পুনরায় পরীক্ষা না নেওয়াকে দায়িত্বের গাফিলতি এবং ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে দুর্নীতির সুযোগ বলে মনে করছেন তারা।

প্রশ্নপত্রের সমস্যাগুলো
শিক্ষার্থীদের তথ্য অনুযায়ী, ‘এ’ সেটে দুটি ভিন্ন ধরনের প্রশ্নে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। সেটের একটি প্রশ্নে ইংরেজি সেকশনের ১৭, ১৮ ও ১৯ নম্বর প্রশ্নের সাথে অন্য প্রশ্নে মিল নেই। আবার অ্যাকাউন্ট সেকশনের ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০ ও ৩১ নম্বর প্রশ্নের সাথে একি সেটের অন্য প্রশ্নের মিল নেই। 

এক সেটের প্রশ্নপত্রের অন্তত ১০টি প্রশ্নের ক্রমধারায় গড়মিল ধরা পড়েছে। দুটি আলাদা ‘এ’ সেটের প্রশ্নে হিসাববিজ্ঞানের সেকশনে একটিতে রূপান্তর ব্যয়ের প্রশ্ন ছিল, অন্যটিতে ছিল না। আবার টাকার অঙ্কেও ভুল ছিল।

‘এ’ সেটের মতো করেই দুটি ভিন্ন ‘বি’ সেটের প্রশ্নের একটির ইংরেজি সেকশনের ১৭, ১৮ ও ১৯ নম্বর প্রশ্নের সাথে অন্য প্রশ্নে মিল নেই। একইভাবে অ্যাকাউন্টিং সেকশনের ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০ ও ৩১ নম্বর প্রশ্নের সাথে একই সেটের অন্য প্রশ্নের মিল নেই। সেট ‘বি’ এর অ্যাকাউন্ট সেকশনের চারটি প্রশ্ন দুইবার রিপিট হয়ে আটবার এসেছে। যেমনটা ‘এ’ সেটের ক্ষেত্রে হয়নি।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, এটা নতুন না যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবারই এ ধরনের ভুল করেছে। এর আগে ২০১১-১২ ও ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের প্রশ্নপত্রে ভুলের জন্য পুনরায় পরীক্ষা নিয়েছিল। তবে এবার কোন যুক্তিতে সেটা নিতে চাচ্ছে না, সে প্রশ্ন তুলেছেন তারা।

ঢাকা কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী তাসফিয়া বিনতে খালেক বলেন, ‘আমরা পুনরায় ভর্তি পরীক্ষা চাই। এ ছাড়া এর কোনো সমাধান হয় না। ঢাবি এর আগেও ভুল প্রশ্নের সমাধানের জন্য পুনরায় পরীক্ষা নিয়েছে। এখন এতো বড় ভুলেও পুনরায় পরীক্ষার বিষয়ে কোন কথা নেই। আমরা আশা করছি এর সুষ্ঠ সমাধান করবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, দায়িত্বে গাফিলতি এবং ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে দুর্নীতির জন্য সেরা হবে এবার। জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়করা, আপনাদের আন্দোলনের শুরু যার থেকে ছিল, সেই ঢাবির ভর্তি পরীক্ষার মূল্যায়ন নিয়ে নিজেরাই বৈষম্য করছে। তাও আপনারা চুপ।

তিনি বলেন, মাত্র ১ শতাংশের কাছে ভুল প্রশ্ন যাওয়ার যুক্তি তাদের , ভীষণই হাস্যকর এবং নির্বুদ্ধিতা। তারা কি করে নিশ্চিত হচ্ছে যে ওই ১ শতাংশের মধ্য থেকে কেউ চান্স পাবে না? ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর শারীরিক এবং মানসিক শ্রম পুরোই বৃথা যাওয়ার পথে।

ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটে পরীক্ষা দিয়েছি। কিন্তু আমার প্রশ্নপত্রে চারটি প্রশ্ন রিপিট হ‍য়েছে। অন্যদের ইংরেজিতে‍ও সমস্যা হয়েছে। এখন ঢাবি বলেছে, তারা ফলাফল দেওয়ার পর নাকি পুনঃমূল্যায়নের সুযোগ রয়েছে। তাহলে তো প্রতি ১০০ জনের ভেতরে কমপক্ষে ৬০ জনের‌ই সমস্যা থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘এক বিবৃতিতে দেখলাম, একটা পরীক্ষায় বাজেট অনেক টাকা। কিন্তু আমাদের শুধু আবেদন করতে আর যাতায়াত ভাড়া কত গেছে, তার হিসাব? নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের কথা বাদ‌ই দিলাম। হয়তো তাদের এ ভুলের কারণে আশানুরূপ ফল পাবে না অনেক শিক্ষার্থী। ঢাবি কর্তৃপক্ষ হয় প্রতিটি এমসিকিউ নিজেরা দেখবেন ও ত্রুটি বের করবেন, না হলে আবার পরীক্ষা নিক। অথবা শুধু রিটেন আর জিপিএ হিসেবে মূল্যায়ন করা হোক।’

আরো পড়ুন: ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় ৪টি প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি, যা বলছে প্রশাসন

যা বলছে ঢাবি

গত শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ভর্তি পরীক্ষার মূল্যায়ন প্রক্রিয়া বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যাপক ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম। এক বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তি পরীক্ষার স্বল্পসংখ্যক প্রশ্নপত্রে কিছু অসংগতি ও ভুলত্রুটি চিহ্নিত করেছে ইতঃপূর্বে গঠিত সংশ্লিষ্ট কমিটি। 

নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে শুধু এমসিকিউ অংশে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে একসেট প্রশ্নপত্রের মধ্যে অন্য সেট প্রতিস্থাপিত হওয়ায় ইংরেজি বিষয়ের স্বল্পসংখ্যক প্রশ্নের ক্রমধারায় ত্রুটি এবং অ্যাকাউন্টিং বিষয়ের কিছু প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে নিশ্চিত করা হচ্ছে, এই পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

আরো পড়ুন: ঢাবি ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের প্রশ্নপত্র মূল্যায়ন নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত

এতে আরও বলা হয়েছে, এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ত্রুটির কারণে পরীক্ষার্থীদের প্রাপ্য ফলাফল যাতে কোনোভাবে প্রভাবিত না হয়, তা বিবেচনায় রেখে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় এমসিকিউ’র উত্তরপত্র মূল্যায়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আশ্বস্ত করা হয়, বিশেষজ্ঞদের মতামতের আলোকে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে উল্লিখিত অসঙ্গতিসমূহ নিরসনের সকল প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে এবং এ কার্যক্রম এখনো চলমান রয়েছে- যাতে পরীক্ষার্থীদের স্বার্থ পূর্ণ সংরক্ষণ করা যায়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই ইউনিটের ফলাফল প্রকাশের পর কোনো পরীক্ষার্থী প্রাপ্ত ফলাফলে সন্তুষ্ট না হলে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদনের মাধ্যমে উত্তরপত্র পুনঃমূল্যায়নের সুযোগ রয়েছে। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করছি।

বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য জানতে ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের প্রধান সমন্বয়কারী ও বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মাহমুদ ওসমান ইমামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদও কল রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence