ঢাবির অধীনে হচ্ছে সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষা

ঢাবি ও সাত কলেজ
ঢাবি ও সাত কলেজ  © লোগো

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিগত বছরগুলোর ন্যায় অধিভুক্ত সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষা কার্যক্রম এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‍(ঢাবি) অধীনে নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এখনো ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত না হলেও আগামী ৬ জানুয়ারি থেকে সাত কলেজের ভর্তি আবেদন শুরু হচ্ছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।

তবে ঢাবি প্রশাসনের এমন উদ্যোগের বিরোধীতা করেছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের ভাষ্য, ঢাবির অধীনে আর কোনো বর্ষের ভর্তি কার্যক্রম শুরু করতে দেওয়া হবে না। নতুন শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিতে হবে। এটা সম্ভব না হলে ‘সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের’ লক্ষ্যে যে উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাদের অধীনে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করতে হবে।

বিগত বছরগুলোর ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে দেখা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ও উপাদানকল্প কলেজের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রায় একসঙ্গে প্রকাশ করে ভর্তি কমিটি। এ ছাড়া ভর্তি আবেদনও একসঙ্গে শুরু হয়, শেষও হয় একসঙ্গে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, সাত কলেজের বিজ্ঞান ইউনিট, কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিট এবং ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের আবেদন আগামী ৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে, চলবে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। একইসঙ্গে উপাদানকল্পের গভর্নমেন্ট কলেজ অব এ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্স (গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ) ও ঢাবির প্রযুক্তি ইউনিটের ভর্তি আবেদনও একই তারিখে শুরু হয়ে আবার একই তারিখেই শেষ হচ্ছে। আজকালের মধ্যে সবগুলো প্রতিষ্ঠানের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবে। এবারে আবেদন ফি, ভর্তি যোগ্যতাসহ অন্যান্য বিষয়গুলো অপরিবর্তিতই থাকতে পারে।

ভর্তি আবেদন শেষে আগামী ১৮ এপ্রিল ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিট দিয়ে সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এরপর ১৯ এপ্রিল বিজ্ঞান ইউনিট এবং ২৫ এপ্রিল কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষা শেষ হওয়ার একদিন পর ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে প্রযুক্তি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা। এরপর ২ মে গভর্নমেন্ট কলেজ অব এ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্সের পরীক্ষা দিয়ে এ কার্যক্রম শেষ হবে।

এদিকে, সাত কলেজের স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়নে গত ২৯ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজকে সভাপতি করে চার সদস্যের উচ্চপর্যায়ের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটির সদস্যরা হলেন- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খালেদা আক্তার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ–উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ ও ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক তানজিমউদ্দিন খান।  এ কমিটি আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে তাদের কাজ সম্পন্ন করবে।

সাত কলেজের নতুন পরিচয় প্রতিষ্ঠার কমিটি গঠনের মাঝে ঢাবির অধীনে কেন নতুন শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম শুরু হচ্ছে, জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘হচ্ছে আর হয়েছের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে। যে সময় পর্যন্ত নতুন পরিচয় প্রতিষ্ঠা না হয়, সে সময় পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ঢাবির অধীনেই রয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে যেটুকু আলাপ হয়েছে, সেখানে সাত কলেজের অধ্যক্ষরাও ছিলেন। যা সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাদের উপস্থিতিতেই  হয়েছে। তারাও স্বীকার করেছেন, চলতি বছরের ভর্তি পরীক্ষা ঢাবির অধীনে ছাড়া অন্য কোনো পদ্ধিতে নেওয়ার সুযোগ নেই।’

একদিকে নতুন পরিচয় গঠনে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন, অন্যদিকে ঢাবির অধীনে রেখে নতুন বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা কার্যক্রম শুরুর ঘটনায় ক্ষুব্ধ সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এটা আসলে আমাদের বিষয় না। সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া আমরা নতুন শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদেরও আমরা কোনো অনিশ্চয়তায় রাখতে পারি না। যেহেতু সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেক্ষেত্রে এবারের ভর্তি পরীক্ষা হয়ে যাক। সাত কলেজের জন্য নতুন কোনো সিদ্ধান্ত আসলে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন কাঠামোর অধীনে পরীক্ষাসহ সব অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে।

চলতি বর্ষ থেকে স্বতন্ত্র কাঠামোতে ভর্তি পরীক্ষার দাবি শিক্ষার্থীদের
আসন সংখ্যা কমিয়ে চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে স্বতন্ত্র কাঠামোতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ দাবি জানিয়ে শনিবার (৪ জানুয়ারি) ঢাকা কলেজের শহীদ মিনারের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন তারা।

লিখিত বক্তব্যে সাত কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর আন্দোলনের প্রতিনিধি আব্দুর রহমান বলেন, স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪–২৫ সেশনের ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা নতুন কোনো সেশনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত অবস্থায় ভর্তি পরীক্ষা নিতে দেবে না। এখন যে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠিত হয়েছে, এ কমিটির সদিচ্ছা থাকলে আগামী একমাসের মধ্যে একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা জাতির সামনে তুলে ধরা এবং ২০২৪–২৫ সেশনের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা করা সম্ভব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নতুন পরিচয় প্রতিষ্ঠার কমিটি গঠনের কথা বলে নতুন শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম আটকে রাখা যুক্তিসঙ্গত নয়। নতুন পরিচয় প্রতিষ্ঠা হয়ে গেলে নতুন বর্ষের পরীক্ষা, শিক্ষাক্রমসহ সামগ্রিক কার্যক্রম নতুন বডির অধীনেই হতো। এখন যেহেতু সেটা হয়নি, তাহলে চলতি শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শেষ হবে। এটা নিয়ে আসলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত বাড়তি কথা বলা উচিত হবে না।

বিগত বছরগুলো থেকে চলতি শিক্ষাবর্ষে সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষা কিছুটা আগে শুরু হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ‘আগে নেওয়ার’ বিষয়টি অস্বীকার করেন। তার দাবি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ঘনিয়ে আসলে অধিভুক্ত ও উপাদানকল্পের প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়। অ্যাকাডেমিক ইয়ারের সমন্বয় করতে আমাদের চারদিক বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এবারের ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন আর্লি না, বরং বলা যায় এবার লেট হচ্ছে।

চলতি শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়ার বিষয়ে ঢাবি স্বীকার করলেও এ বিষয়টি পরিষ্কার করতে চাননি সাত কলেজের সমন্বয়ক ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস। তিনি বলেন, ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে আমাদের একটা মিটিং হয়েছে। রবিবার (৫ জানুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও একটা মিটিং আছে। ভর্তি পরীক্ষা চলমান প্রক্রিয়া। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে পরীক্ষা পরীক্ষা পিছিয়েও দেওয়া যায় আবার এগিয়েও নিয়ে আসা যায়। সরকার যেভাবে চাইবে চলতি শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা সেভাবেই হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence