সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নিয়েও গুচ্ছ থেকে বের হতে পারছে না শাবিপ্রবি
- শাবিপ্রবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৪২ PM , আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৩০ PM
গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্রভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে একাট্টা দাবি জানিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন শিক্ষার্থীদের দাবি, শিক্ষক সমিতির সিদ্ধান্ত ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেও নানামুখী জটিলতায় গুচ্ছ থেকে বের হতে পারছে না শাবিপ্রবি।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার পর মানসম্মত শিক্ষার্থীর সংকট, ফাঁকা আসন নিয়ে ক্লাস শুরু, দীর্ঘ ভর্তি প্রক্রিয়া, মেধাবীদের ভর্তিতে অনাগ্রহ, স্বকীয়তা হারানো, গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েও শিক্ষার্থী না পাওয়া, অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং পরিচিতি ও ব্র্যান্ড ভ্যালু ক্ষতিসহ নানামুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
এমনকি গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার পর থেকে বিশ্ব র্যাংকিংয়ে শাবিপ্রবির অবস্থান দিনদিন তলানিতে যাচ্ছে বলেও মনে করেন অনেকে। নিজেদের পূর্বের স্বতন্ত্র অবস্থা ফিরিয়ে আনতে বেশ কিছুদিন ধরে মানববন্ধন ও দাবি জানিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের সাথে একমত জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিও।
গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে আসতে গত ১০ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলন করেছেন শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সালেহ নাসিম বলেন, ‘পূর্বে শাবিপ্রবির প্রশ্নপত্রের যে মান ছিল, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।’ গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল এবং সময় সাপেক্ষ। এই প্রক্রিয়া শাবিপ্রবির জন্য উপযুক্ত নয়। তাই এই প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে আসতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এমনকি ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে গত ১৫ নভেম্বর মানববন্ধন করেছেন তারা। মানববন্ধনে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী আসাদুল্লা আল গালিব বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা চালু হয়েছিল। আমরা সকলে গুচ্ছকে স্বাগত জানিয়েছিলাম। তবে গত ৩বছরে গুচ্ছ সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি বরং শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
এদিকে গত ১ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠিতে উপাচার্যকে এই বছর গুচ্ছে থাকার আহ্বান জানান। যদিও গত ১১ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমি কাউন্সিলের এক সভায় গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রায় ২৫ দিন অতিক্রম হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোন কার্যকরী কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যেতে বেশ কিছুদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিও। গত ৩০ অক্টোবর শিক্ষক সমিতির এক সাধারণ সভায় গুচ্ছে না থাকার সিদ্ধান্তে একমত পোষণ করেন সকল শিক্ষকরাই। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন জানান, ‘সভায় গুচ্ছ প্রক্রিয়া না থাকার পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সে সিদ্ধান্তের অফিশিয়াল নোটিশ আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে পোঁছে দিয়েছি। শিক্ষক সমিতি চায় না শাবিপ্রবি গুচ্ছে থেকে তার নিজস্ব স্বকীয়তা ও শিক্ষার মান বিপর্যয়ে নিয়ে যাক।’ গুচ্ছ থেকে বের হয়ে আসতে গত ৪ ডিসেম্বর শিক্ষক সমিতির আরেকটি সাধারণ সভায় জোরালো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শিক্ষকদের সভা সূত্রে জানা যায়, দ্রুত গুচ্ছ থেকে বের হয়ে না আসলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কোন ধরনের সহযোগিতা করবেন না বলেও জানিয়েছেন তারা।
গুচ্ছে যুক্ত হওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থী ভর্তিতেও বেড়েছে নানা জটিলতা। গুচ্ছে যুক্ত হওয়ার পর আসন ফাঁকা রেখেই ক্লাস শুরু করতে হচ্ছে শাবিপ্রবিকে। এ বিষয়ে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আবু সাঈদ আরেফিন খাঁন বলেন, 'গত ৩ নভেম্বর ৮০টি আসন ফাঁকা রেখে আমাদের ক্লাস শুরু করতে হয়েছে। পরবর্তীতে ভর্তি বাতিল করে গুচ্ছভুক্ত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে কিছু শিক্ষার্থী চলে যায়। এতে এখনও অনেক আসন ফাঁকা রয়েছে।
এর আগে গুচ্ছ প্রক্রিয়ার জটিলতায় ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ১৬২টি আসন ফাঁকা রেখে ক্লাস কার্যক্রম শুরু করতে হয়েছিল বলে জানান ওই বর্ষের ভর্তি কমিটির সদস্যসচিব অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুল হাকিম।
সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ’গুচ্ছ সিস্টেমের ফলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ালিটি ডাউন হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বারবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েও শিক্ষার্থী ভর্তি করানো যাচ্ছে না। এমনকি ক্লাস শুরুর এক মাস পরে এসেও অনেকে ভর্তি হচ্ছে। ঢাবি, রাবি, জাবি যেখানে স্বতন্ত্রভাবে পরীক্ষা নিচ্ছে, সেখানে শাবিপ্রবি গুচ্ছে থাকা অনুচিত বলেও মনে করেন তিনি।
এদিকে গুচ্ছ থেকে বের হয়ে যেতে উদ্যমী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও। গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যেতে নীতিগতভাবে একমত বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরয়ারউদ্দিন চৌধুরীও। তিনি বলেন, ‘গুচ্ছের সিকিউরিটিসহ নানা লিমিটেশনগুলো মাথায় রেখে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে সর্বসম্মতিক্রমে আমরা গুচ্ছে না থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং সেটা আমরা শিক্ষা উপদেষ্টাকে জানিয়েছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাজেদুল করিম বলেন, ‘গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যেতে একাডেমি কাউন্সিলেও আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এমনকি উপাচার্য আজ ঢাকায় গিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলার জন্য। আশাকরি সবার সহযোগিতা পেলে আমরা গুচ্ছ সিস্টেম থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো।’