কেন পড়বেন ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ?

শামীম হামিদী
শামীম হামিদী  © সংগৃহীত

বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন বিষয়ে (সাবজেক্ট) ভর্তি হওয়া উচিত তা অনেকটাই আপনার আগ্রহ, দক্ষতা এবং ভবিষ্যতের ক্যারিয়ার লক্ষ্যগুলোর উপর নির্ভর করে। তবে, কিছু বিষয় আছে যা বর্তমানে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং ভবিষ্যতে আপনার ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। তেমন একটি বিষয় ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ। কেন এ বিভাগে পড়া উচিত সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. শামীম হামিদী।

ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ কেন পড়বেন?

ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি ক্ষেত্র। এটি সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি, পরিবেশ, সংস্কৃতি এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনার মতো বিভিন্ন দিকের সমন্বয় ঘটায়। এই বিষয়ে পড়াশোনা আপনাকে একটি সুদৃঢ় বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি দিবে, যা উন্নয়নমূলক কাজগুলোর জন্য অপরিহার্য। আপনি এই বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করে শিখতে পারবেন কীভাবে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা যায় এবং একটি টেকসই, ন্যায়সংগত এবং সমন্বিত উন্নয়ন প্রক্রিয়া গড়ে তোলা যায়।

বিশ্বের পরিবর্তনে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের ভূমিকা 

ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের মাধ্যমে আপনি শুধু একটি উচ্চশিক্ষা অর্জন করছেন বিষয়টি এমন নয় বরং আপনি পৃথিবী পরিবর্তনকারী শক্তি হয়ে উঠছেন। যখন আপনি পড়াশোনা করবেন ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিষয়ে, আপনি জানবেন কীভাবে পৃথিবীজুড়ে মানুষের জীবনমান উন্নত করা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমানো যায়, এবং বৈশ্বিক দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূরীকরণে অবদান রাখা যায়। এটি আপনাকে সমাজে এবং বিশ্বজুড়ে পরিবর্তন আনার ক্ষমতা দেবে। 

ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে যে বিষয়গুলি শেখানো হয়

রাজনীতি ও অর্থনীতি: উন্নয়ন নীতি এবং কার্যকর নীতিনির্ধারণ।

পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন: প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব।

সমাজবিজ্ঞান ও সংস্কৃতি: সামাজিক সম্পর্ক এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য।

প্রকল্প ব্যবস্থাপনা: উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন এবং মূল্যায়ন।

গবেষণাপদ্ধতি: উন্নয়ন বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ।

এছাড়াও, এই বিষয়ে আপনি পাবেন প্রশিক্ষণ, দক্ষতা, এবং হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা যা আপনাকে উন্নয়ন কর্মী বা গবেষক হিসেবে বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য প্রস্তুত করবে।।

চাকরির সুযোগ এবং ক্যারিয়ার গঠন

উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ: ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের  শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নয়, বরং ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, এবং আমেরিকার শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠানেও গবেষণার সুযোগ রয়েছে। 

এছাড়া, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিষয়ে গবেষণা আপনাকে দেশের উন্নয়ন নীতির পরিকল্পনায় সহায়তা করতে সাহায্য করবে এবং গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ: ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় চাকরি পেয়ে থাকেন। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় যেমন, পরিবেশ, পানি সম্পদ, পরিকল্পনা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, শ্রম, কৃষি ও গৃহস্থালি উন্নয়ন সংস্থাগুলিতে চাকরির সুযোগ রয়েছে। 

এছাড়া, উন্নয়ন স্টাডিজের শিক্ষার্থীরা প্রধানত নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। আপনাকে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর উন্নয়নে কাজ করতে হবে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। এর মাধ্যমে আপনি সরকারি কর্মসূচি তৈরি এবং সেগুলি পরিচালনায় সহায়তা করবেন।

বেসরকারি খাত এবং উন্নয়ন সংস্থাগুলিতে সুযোগ: বেসরকারি সংস্থাগুলির মধ্যে আন্তর্জাতিক এনজিও, ফাউন্ডেশন, এবং সমাজসেবী প্রতিষ্ঠানগুলির সাথে যুক্ত হওয়া খুব জনপ্রিয়। এ ধরনের সংস্থাগুলিতে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক প্রকল্পে কাজের সুযোগ রয়েছে। যেমন:

 জাতিসংঘ: খাদ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং দারিদ্র্য বিমোচনে বিভিন্ন দপ্তরে কাজ।

বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ডাচ এজেন্সি, ব্র্যাক: উন্নয়নমূলক প্রকল্প, আর্থিক সহায়তা ও গবেষণায় জড়িত হওয়া।

ইন্টারন্যাশনাল রেডক্রস, অক্সফাম, সেভ দ্য চিলড্রেন: দারিদ্র্য দূরীকরণ, পরিবেশ সচেতনতা এবং মানবাধিকার কর্মসূচিতে কাজ।

গবেষণা ও উন্নয়ন  ক্ষেত্র: আপনি যদি গবেষণায় আগ্রহী হন, তবে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ আপনাকে অসংখ্য সুযোগ দেবে। উন্নয়ন গবেষণা, সামাজিক গবেষণা এবং বিশ্বব্যাপী নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার মাধ্যমে আপনি স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলিতে কাজ করতে পারবেন। উন্নয়ন নীতির কৌশলগত বিশ্লেষণ, প্রকল্প মূল্যায়ন, বা জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশের উপর গবেষণা করে আপনি জাতি ও সমাজের জন্য সমাধান সৃষ্টি করতে পারবেন। 

শিক্ষা এবং অ্যাকাডেমিয়া: ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের পেশাদাররা দেশে-বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে পারেন। আপনি যদি গবেষণা বা  অ্যাকাডেমিক ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাহলে এই বিষয়ে আপনি একাধিক দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা এবং শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হতে পারেন। 

আন্তর্জাতিক উচ্চশিক্ষা এবং বৃত্তির সুযোগ: ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের শিক্ষার্থীরা ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়ে থাকেন। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ের উপর স্নাতকোত্তর, পিএইচডি এবং পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণার সুযোগ রয়েছে। আপনিও আন্তর্জাতিক বৃত্তি  পেয়ে বিদেশে পড়াশোনা করতে পারেন, যেখানে আপনি আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন। 

ব্যবসায়িক উদ্যোগ এবং সামাজিক উদ্যোক্তা: ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের শিক্ষার্থীরা সামাজিক উদ্যোক্তা হিসেবেও নিজের ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। সঠিক জ্ঞানের মাধ্যমে, আপনি পরিবেশগত, সামাজিক বা অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর সমাধানে নতুন উদ্যোগ চালু করতে পারেন। পরিবেশ রক্ষা, দারিদ্র্য বিমোচন, এবং স্থানীয় জনগণের জীবনমান উন্নত করতে বিভিন্ন সংগঠন শুরু করতে পারেন।

সামাজিক ন্যায় ও টেকসই উন্নয়ন: আপনি উন্নয়ন স্টাডিজের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য এবং বৈশ্বিক ন্যায়ের প্রচারে কাজ করতে পারেন। আপনি যদি সামাজিক ন্যায় এবং উন্নয়ন বিষয়ে আগ্রহী হন, তাহলে মানবাধিকার, দুর্নীতি প্রতিরোধ, শান্তি ও নিরাপত্তা, নারী ক্ষমতায়ন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

আপনি যদি চান পরিবর্তন আনতে, উন্নয়ন প্রকল্পের নেতৃত্ব দিতে এবং একটি উন্নত ভবিষ্যৎ গড়তে, তবে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ পড়া হতে পারে আপনার সঠিক পছন্দ।


সর্বশেষ সংবাদ