মেডিকেল ভর্তি প্রস্তুতি নিয়ে জেনে নিন কিছু জরুরি প্রশ্ন ও উত্তর
- বায়েজীদ হাসান এনামুল
- প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১১ PM , আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩২ PM
গায়ে সাদা অ্যাপ্রোন, গলায় স্টেথোস্কোপ ঝোলানোর স্বপ্ন থাকে অসংখ্য শিক্ষার্থীর। সবাই কি স্বপ্ন পূরণ করতে পারে, চিকিৎসক হতে পারে? প্রতিবছর যারা মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়, তাদের মধ্যে অল্প কিছু ছাত্র-ছাত্রী সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে পড়ার সুযোগ পায়। কেননা, বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যতগুলো ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক হচ্ছে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা। স্বপ্ন পূরণের জন্য কঠোর পরিশ্রম, অবিচল লক্ষ্য ও আত্মবিশ্বাস যেমন জরুরি, তেমনই জরুরি সঠিক প্রস্তুতির।
এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পর আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের কঠিন এক ধাপ অতিক্রম করতে হয়, যার নাম ভর্তি পরীক্ষা। এ ধাপ অতিক্রম করেই শিক্ষার্থী তার লালিত স্বপ্ন পূরণের সুযোগ পায়।
প্রতি বছর প্রায় ৩০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী সরকারি মেডিকেলে একটি আসনের জন্য লড়াই করে। ভর্তিযুদ্ধে অনেক পরিশ্রম করেও অনেকে সফল হতে পারে না সঠিক স্ট্র্যাটেজি ফলো না করার জন্য। একজন মেডিকেল শিক্ষার্থী হিসেবে মেডিকেলে ভর্তি প্রত্যাশীদের কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব।
কখন থেকে মেডিকেলে ভর্তি প্রস্তুতি নেওয়া উচিত
উত্তম প্রস্তুতির জন্য এইচএসসি পরীক্ষার পর পরই সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। অনেকে এইচএসসির রেজাল্টের পর প্রস্তুতি নেয়। এটা অবশ্য সমস্যা নয়। তবে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিলে সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এইচএসসির সময় থেকেই ইংলিশ গ্রামার কিছুটা পড়ে রাখা ভালো। এর সাথে সাথে মেডিকেলে কোন টপিক থেকে প্রশ্ন আসে, তা ভালোভাবে পড়ে রাখা ভালো।
প্রস্তুতির জন্য কোন লেখকের বই পড়ব
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলি, জুলজির জন্য গাজী আজমল স্যারের বই, জীববিজ্ঞানের জন্য মোহাম্মদ আবুল হাসান স্যারের বই, পদার্থবিজ্ঞানের জন্য মোহাম্মদ ইসহাক স্যারের বই, রসায়নের জন্য সরোজ কান্তি সিংহ হাজারী স্যারের বই সহায়ক হতে পারে। পাশাপাশি সহায়ক বই হিসেবে জুলজি ও বোটানি আলীম স্যার ও মাজেদা ম্যামের বই, রসায়নের জন্য কবির স্যারের বই পড়া যেতে পারে।
ইংরেজি আর সাধারণ জ্ঞান কী পড়ব
ইংরেজি গ্রামারের জন্য মাস্টারস, এপেক্স, কম্পিটিটিভ এক্সাম যে কোনও একটা বই পড়া যেতে পারে, এর সাথে বিগত বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্ন সলভ করতে হবে। সাধারণ জ্ঞান বিভাগে বাংলাদেশের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়েই প্রশ্ন থাকবে বেশি। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ঘটনাগুলো জানতে হবে। বিশেষ করে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে ভালোভাবে পড়তে হবে। কিছু সাম্প্রতিক বিষয় যেমন, মেট্রো রেল, কর্ণফুলী টানেল, পদ্মা ব্রিজ ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে হবে।
কীভাবে পড়ব
পদার্থ, রসায়ন, প্রাণীবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যায় শুরু করার আগে প্রশ্ন ব্যাংক থেকে ওই অধ্যায়ের কোন টপিক থেকে এমসিকিউ আসছে, ওই টপিক সম্পূর্ণ মূল বই থেকে পড়তে হবে। এরপর দাগানো লাইন পড়তে হবে, একাধিক বইয়ের অনুশীলনীর প্রশ্ন সলভ করতে হবে। প্রত্যেক অধ্যায়ের শেষের সারসংক্ষেপগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে। ইংরেজি আর সাধারণ জ্ঞানের জন্য বিগত ম্যাটে আসা সবগুলো ভালোভাবে বুঝে পড়তে হবে।
কতক্ষণ পড়ব
কতক্ষণ পড়তে হবে, তার যথার্থ উত্তর নেই। পারসন টু পারসন নির্ভর করে। কেউ এক ঘণ্টায় যতটুকু পড়তে পারে, আরেক জনের আরও বেশি সময় লাগতে পারে। তবে প্রতিদিন মিনিমাম আট থেকে দশ ঘণ্টা পড়া উচিত।
পড়ার সময় ঘুম এলে কী করব
রুমের মধ্যে হাঁটাহাটি করতে পারো, চা-কফি পান করতে পারো।
কোথায় কোচিং করব
যদি তুমি আগে থেকে অনলাইনে পড়ে অভ্যস্ত থাকো, তবে তুমি অনলাইনে পড়তে পারো। পাশাপাশি অফলাইনে যে কোনও কোচিংয়ের এক্সাম ব্যাচে ভর্তি হতে পারো। অনলাইনে যদি পড়ার অভ্যাস না থাকে, তাহলে যে কোনও একটা কোচিংয়ে ফুল কন্টিনিউ করতে পারো।
কোন সময় পড়ব
সকাল পড়াশোনার জন্য খুবই ভালো সময়। এইচএসসির সময় যে সময়ে পড়ছ, ওই সময়ে পড়তে পারো। তবে পড়ার ডিউরেশন বাড়াতে হবে। যেমন কেউ সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পড়েছ, এখন তুমি সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত পড়তে পারো।
ডেইলি এক্সামে কী মার্কস কম আসছে
হতাশ হওয়ার কিছুই নেই। তুমি প্রতিদিন নিজের ইমপ্রুভ করার চেষ্টা করে যাও। নিজের মার্কস বাড়ানোর চেষ্টা করো। বন্ধুদের মার্কস দেখে হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
পরীক্ষা-ভয় কীভাবে কাটাব
বেশি বেশি পরীক্ষা দিতে হবে। প্রতিদিন বাসায় এক ঘণ্টায় সম্পূর্ণ একটা মেডিকেল স্ট্যান্ডার্ড প্রশ্ন সলভ করতে হবে। ভুলগুলো সংশোধন করতে হবে।
এত শিক্ষার্থীর মাঝে আমার কী চান্স হবে
একজন শিক্ষার্থী একটা মাত্র সিট পাবে। একটা সিট পেতে অন্তত ৭০+ মার্কস পেতে হবে। তো তোমাকে ৭০+ মার্কস পেতে পরিশ্রম করতে হবে। আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে। তুমি নিজেকে এর জন্য প্রস্তুত করো। তাহলে নিশ্চয় মেডিকেলে ভর্তি হতে পারবে।
সর্বোপরি নিজের প্রতি যত্ন নিতে হবে। নিয়মিত খাওয়া, ঘুম, শরীরচর্চা করতে হবে। মানসিকভাবে নিজের লক্ষ্যের প্রতি অবিচল থাকতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সৎভাবে পরিশ্রম করতে হবে, মাঝপথে হাল ছাড়া যাবে না। সবার জন্য শুভ কামনা রইল।
লেখক : শিক্ষার্থী, শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ।