ভর্তি পরীক্ষার সিলেবাস নিয়ে বিপরীত মেরুতে শিক্ষামন্ত্রী-ভিসিরা

ভর্তি পরীক্ষা
ভর্তি পরীক্ষা  © সংগৃহীত

আসন্ন ভর্তি পরীক্ষার সিলেবাস নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা। শিক্ষামন্ত্রী সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে জোর দিলেও সেটি মানছেন না বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তারা বলছেন, ভর্তি পরীক্ষার কোনো সিলেবাস নেই। আর এইচএসসির পুরো সিলেবাস শেষ না করলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সমস্যায় পড়বেন।

১৩ ফেব্রুয়ারি এইচএসসির ফলাফল ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঘোষিত ফলাফলে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১৩ লাখ ৬ হাজার ৭১৮ জন। এদের মধ্যে জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন। পাসের হার ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ।

সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন রয়েছে ১৩ লাখ ২০ হাজারের মতো। তবে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল এবং ডেন্টাল কলেজগুলোতে আসন রয়েছে ৫৫ হাজারের মতো। মূলত এই ৫৫ হাজার আসনে স্থান পেতেই ভর্তি যুদ্ধে অবতীর্ণ হবেন শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন- গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার সংকট যেখানে

করোনার কারণে প্রথমবারের মতো ২০২০ সালে মার্চে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। করোনার প্রকোপ না কমায় ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অটোপাস দেয়া হয়। পরের বছর এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা ছাড়া উত্তীর্ণ দেখাতে চায়নি সরকার। যার কারণে পরীক্ষার সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে ৩টি বিষয়ের ছয়টি পত্রে পরীক্ষা নেয়। করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটে। ফলে নির্ধারিত সময়ের ৮ মাস পর গত বছরের ২ ডিসেম্বর এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এইচএসসি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে অনুষ্ঠিত হওয়ায় সেই সিলেবাসেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার দাবি উঠে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সঙ্গে বারবার বৈঠক করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

আরও পড়ুন- ‘সম্পূর্ণ সিলেবাসেই মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা’

এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি বলেন, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা যে সিলেবাসে হয়েছে সেই সিলেবাসেই ভর্তি পরীক্ষা হওয়া যৌক্তিক। সে অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষা না হলে শিক্ষার্থীদের প্রতি সুবিচার করা হবে না। গুচ্ছ কমিটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ভর্তি পরীক্ষা নিতে একমত হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তবে কমিটি বলছে, বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

আগামী ১ এপ্রিল মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এ বছর মেডিকেল ও ডেন্টালের ভর্তি পরীক্ষা নেবে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। অন্যান্য বছর এ পরীক্ষার দায়িত্বে ছিলো বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল। ভর্তি পরীক্ষা সম্পূর্ণ সিলেবাসেই হবে বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। সেভাবেই পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে তারা পরীক্ষা নেবেন না। ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে কোনো সিলেবাস নেই। শিক্ষার্থীরা যে পাঠ্যক্রম অনুসরণ করে এসেছে তার ভিত্তিতেই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

আরও পড়ুন- ভর্তি পরীক্ষাও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে হওয়া যৌক্তিক: শিক্ষামন্ত্রী (ভিডিও)

গুচ্ছ ভর্তির টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর। তিনি বলেন, এইচএসসিতে শিক্ষার্থীরা কোন সিলেবাসে পড়েছে ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে সেটি বিবেচ্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন নির্ধারিত। বাড়তি শিক্ষার্থীদের বাদ দেয়ার প্রক্রিয়াই হচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা। তিনি বলেন, ভর্তিচ্ছুরা গতবার সাধারণ জ্ঞান বিষয়টি ভর্তি পরীক্ষায় অন্তর্ভুক্তির জন্য আন্দোলন করেছে। সাধারণ জ্ঞান কী এইচএসসিতে আলাদা করে পড়ানো হয়েছিলো। এরকম বেশ কিছু বিষয় রয়েছে। আমরা শীঘ্রই সভা করে সিলেবাসের বিষয়ে ঠিক করবো।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরও দুইজন ভিসি বলেন, তারা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে নন। তারা বলেন, ভর্তি পরীক্ষা হলো যাচাই পরীক্ষা। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের যাচাই করে ভর্তি করাবে। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পড়ার কারণে এইচএসসির পুরো বিষয়গুলোও শিক্ষার্থীরা শেষ করেনি। এছাড়া নির্ধারিত কয়েকটি টপিকে পরীক্ষা দিয়েছে তারা। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নিলে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সমস্যায় পড়বে শিক্ষার্থীরা।


সর্বশেষ সংবাদ