জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

ভর্তি পরীক্ষার ৮ কোটি টাকা ভাগ-বাটোয়ারা শিক্ষক-কর্মকর্তাদের

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়  © টিডিসি ফটো

ভর্তি পরীক্ষার ফি বাবদ নেওয়া অর্থের মধ্যে প্রায় ৮ কোটি টাকার বেশি নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা। শিক্ষার্থীদের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক ভর্তি ফরমের দাম ৫০ টাকা বাড়ানো হয়। ওই শিক্ষাবর্ষে ভর্তি ফরম বিক্রি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট আয় হয় প্রায় ২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১০ কোটির বেশি ব্যয় হয় পরীক্ষা আয়োজনে। আর দুই কোটির বেশি ব্যয় হয় অন্যখাতে। 

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুরোধে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্তে অনিয়মের এই চিত্র উঠে এসেছে। এতে সুপারিশ করা হয়েছে এই অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা দেওয়ার জন্য। 

গত ৯ জানুয়ারি ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক আবু তাহেরকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে নথিপত্র পর্যালোচনা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে সম্প্রতি প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

আরও পড়ুন: সাত বছর পর বিশ্বসেরা র‍্যাংকিংয়ে এগোল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক আবু তাহের। 

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভর্তি পরীক্ষায় শুধু পারিশ্রমিক ও পরিদর্শন বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে প্রায় ১২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে তখনকার উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম নিয়েছেন ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা, তৎকালীন সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও বর্তমানে উপাচার্য অধ্যাপক নুরুল আলম নিয়েছেন ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, তখনকার সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মো. আমির হোসেন নিয়েছেন ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, কোষাধ্যক্ষ শেখ মঞ্জুরুল হক (বর্তমানে সহ-উপাচার্য, প্রশাসন) নিয়েছেন ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা এবং রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ নিয়েছেন ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। নিরাপত্তা কমিটিতে দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষকেরা পরিদর্শকের সমপরিমাণ অর্থাৎ ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা করে এবং কর্মকর্তারা সাড়ে ৮২ হাজার করে নিয়েছেন। আর কর্মচারীরা নিয়েছেন বিভিন্ন হারে।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটি ও নিরাপত্তা কমিটির আহ্বায়ক এবং সদস্যরা ভর্তি পরীক্ষা থেকে যে সম্মানী বা পারিশ্রমিক নিয়েছেন, তা যৌক্তিক হারে নির্ধারণ করার প্রয়োজন ছিল। ভর্তি পরীক্ষাসংক্রান্ত সমুদয় কার্যক্রম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায়িত্বের অংশও বটে।

ভর্তি পরীক্ষায় দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষক-কর্মকর্তারা কত টাকা সম্মানী হিসেবে নিতে পারবেন তা নিয়ে ইউজিসির কোনো নীতিমালা নেই। শুধু মোট অর্থের কত শতাংশ ব্যয় করা যাবে, কত শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা দিতে হবে, সেই নিয়ম রয়েছে।

ইউজিসির তদন্তে যে আর্থিক অনিয়ম উঠে এসেছে, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি পরিক্ষায় একেকটি আসনের বিপরীতে ১৯১ জন শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। সংখ্যায় তাঁরা সাড়ে ৩ লাখের বেশি। এতে বিশ্ববিদ্যালয়টির আয় হয় প্রায় ২০ কোটি টাকা। এই অর্থের ৪০ শতাংশ বা প্রায় ৮ কোটি টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা দেওয়ার কথা।

এব্যাপারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নুরুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, 'যা হয়েছে, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী হিসাব দেওয়া হয়েছে। তার পরেও বিষয়টি যেহেতু আর্থিক, তাই এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।'

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি গণমাধ্যমকে জানান, 'প্রতিবেদন বা এসংক্রান্ত চিঠি তাঁর কাছে যায়নি। ওই সময় তিনি কোষাধ্যক্ষ ছিলেন না। প্রতিবেদন তাঁর কাছে না যাওয়া পর্যন্ত তিনি কিছু বলতে পারবেন না।'

 

 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence