বন্যা পরিস্থিতিতেই সিলেটে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু, উদ্বিগ্ন পরীক্ষার্থী-অভিভাবকরা

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা  © লোগো

সারাদেশে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা গত ৩০ জুন থেকে শুরু হলেও আকস্মিক বন্যায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে সিলেট বিভাগের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ৮ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। ৯ জুলাই থেকে বিভাগটিতে পুনরায় নিয়মিত রুটিনে শুরু হয়েছে এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এতে অংশ নেন ৩০৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৮২ হাজার ৭৯৫ পরীক্ষার্থী।

তবে চলমান বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও পরীক্ষা নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। তারা বলছেন, পরীক্ষার সময় ঘরে পানি প্রবেশের কারণে ছেলে-মেয়েরা ঠিকমতো পড়ালেখা করতে পারেনি। পরীক্ষায় কী আসবে, কী লিখবে এসব নিয়ে তারা চিন্তিত রয়েছেন।

জানা যায়, পরীক্ষা শুরুর আগের দিন পর্যন্ত সিলেটের দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজ ও বালাগঞ্জ ডিএন উচ্চ বিদ্যালয়সহ সিলেটের বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে বন্যার পানিতে ডুবে ছিল। যদিও কেন্দ্রে পানি থাকায় ইতোমধ্যে পরিবর্তন করা হয়েছে কিছু পরীক্ষাকেন্দ্র। কোথাও প্রবেশের রাস্তায় বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। 

মরা বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির জন্য এতদিন অপেক্ষা করেছিলাম। আজকে সুষ্ঠুভাবে সকল কেন্দ্রে পরীক্ষা গ্রহণ করতে পেরেছি। কোনো প্রকার বিড়ম্বনা পোহাতে হয়নি। কিছু কেন্দ্রের দূর দূরান্তে পানি ছিল, সেটা সহনীয় মাত্রায়-প্রফেসর ড. রমা বিজয় সরকার, চেয়ারম্যান সিলেট শিক্ষা বোর্ড

শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, আগের রুটিন অনুযায়ী অন্য বিষয়ের পরীক্ষা হওয়ার পর ১৩ আগস্ট থেকে স্থগিত হওয়া চারটি বিষয়ের পরীক্ষা হবে। পরীক্ষার নতুন রুটিনও প্রকাশ করেছে সিলেট শিক্ষা বোর্ড। নতুন রুটিনে চারটি বিষয়ের পরীক্ষা আগামী ১৩, ১৮, ২০ ও ২২ আগস্ট হবে।

এইচএসসি একজন পরীক্ষার্থী কুলছুম আক্তার জানান, আমরা বন্যা পরিস্থিতির কারণে কিছুটা উৎকণ্ঠায় ছিলাম। একটা লম্বা সময় ঠিকমতো প্রস্তুতি গ্রহণ সম্ভব হয়নি। আমার বাসায় ও বন্যার পানি ছিল। কুলছুম আক্তার আরও জানান, বিভিন্ন জায়গায় এখনও পানি কমেছে কিন্তু পরিস্থিতির পুরোপুরি উন্নতি হয়নি। আমার অনুরোধ থাকবে, আমাদের উত্তর পত্র মূল্যায়নের সময় যেন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনায় রাখেন।

বন্যা পরিস্থিতির কারণে শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রে আসতে বেগ পোহানোর বিষয়টি প্রাকৃতিক। কিন্তু প্রস্তুতিতে কোনো প্রকার ঘাটতি থাকার কথা নয়। কারণ আমরা অনেক আগেই পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করেছিলাম। সর্বোপরি আমি বলব, পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে-প্রফেসর মুহাম্মদ শাহ আলমগীর, চেয়ারম্যান মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, সিলেটে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল কমায় নদ নদীর পানি কমলেও এখনো সিলেটে ৩টি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এরমধ্যে কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি ৯৪ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। 

সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সিলেট বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. রমা বিজয় সরকার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, আমরা বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির জন্য এতদিন অপেক্ষা করেছিলাম। আজকে সুষ্ঠুভাবে সকল কেন্দ্রে পরীক্ষা গ্রহণ করতে পেরেছি। কোনো প্রকার বিড়ম্বনা পোহাতে হয়নি। কিছু কেন্দ্রের দূর দূরান্তে পানি ছিল, সেটা সহনীয় মাত্রায়। 

শিক্ষা জটের কারণে আমরা চেষ্টা করলেও পরীক্ষার সূচি এগিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। তবে আগামী বছর থেকে এপ্রিলে পরীক্ষা শুরু হলে পরীক্ষা গ্রহণ করতে সমস্যা সৃষ্টি হবে না-অধ্যাপক মামুন উল হক, চেয়ারম্যান কারিগরি শিক্ষা বোর্ড

তিনি আরও বলেন, সিলেটে আজকে কোথাও কোনো বহিষ্কার কিংবা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সকল কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। 

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মুহাম্মদ শাহ আলমগীর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আমরা জেনেছি, কোথাও কোন সমস্যা সৃষ্টি হয়নি। শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে আসতে পেরেছে। তবে বন্যা পরিস্থিতির কারণে শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রে আসতে বেগ পোহানোর বিষয়টি প্রাকৃতিক। কিন্তু প্রস্তুতিতে কোনো প্রকার ঘাটতি থাকার কথা নয়। কারণ আমরা অনেক আগেই পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করেছিলাম। সর্বোপরি আমি বলব, পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মামুন উল হক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, আমাদের সবগুলো কেন্দ্রে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। তবে যে দু-একটা কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, সেখানে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে লোকালি তারা আগেই সেটা পরিবর্তন করে নিয়েছিল। রুটিন অনুযায়ী আমাদের একটা পরীক্ষা সকালে এবং একটা পরীক্ষা বিকেলে গ্রহণ করেছি। 

তিনি আরও যোগ করেন, শিক্ষাজটের কারণে আমরা চেষ্টা করলেও পরীক্ষার সূচি এগিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। তবে আগামী বছর থেকে এপ্রিলে পরীক্ষা শুরু হলে পরীক্ষা গ্রহণ করতে সমস্যা সৃষ্টি হবে না।  


সর্বশেষ সংবাদ