ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত

ছেলেকে ছেড়ে মা, স্বামীকে ছেড়ে স্ত্রী চলে যাচ্ছেন নিজ দেশে

সীমান্তে আবেগঘন দৃশ্য ছেলেকে সীমান্তেই রেখে যেতে বাধ্য হন ওই মা
সীমান্তে আবেগঘন দৃশ্য ছেলেকে সীমান্তেই রেখে যেতে বাধ্য হন ওই মা  © সংগৃহীত

পহেলগাম হামলার পর ভারত সরকার হঠাৎ করে পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য পূর্বে ইস্যুকৃত ভিসা বাতিল করে দেয়। ফলে ভারতের নাগরিকদের সঙ্গে বিবাহিত পাকিস্তানি নারীদের পরিবারগুলো বিচ্ছিন্ন হওয়ার মুখে পড়ে। পাকিস্তানে অবস্থানরত বহু ভারতীয় নাগরিক তাদের শিশু সন্তানদের ভারতে রেখে ফিরতে বাধ্য হন, কেননা সন্তানদের অধিকাংশের পাসপোর্ট ছিল পাকিস্তানের। একইভাবে, ভারত ভ্রমণে আসা পাকিস্তানি নাগরিকদের ২৭ এপ্রিলের মধ্যে দেশ ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।

তবে পরে কেন্দ্রীয় সরকার নতুন নির্দেশনায় জানায়, দীর্ঘমেয়াদি ভিসাধারীদের ভারতে অবস্থানে আর কোনো বাধা নেই। এর ফলে মঙ্গলবার ২৪০ জন পাকিস্তানি নাগরিক ভারতে প্রবেশ করেন এবং ১৪০ জন ভারতীয় নাগরিক পাকিস্তানে ফেরত যান।

এতে বহু নারী-পুরুষকে চোখের জলে সন্তান বা স্বামী-স্ত্রীকে ফেলে সীমান্ত পার হয়ে নিজ দেশে ফিরতে হয়। দেখা দেয় হৃদয়বিদারক দৃশ্য—কোথাও সন্তান কান্না করছে মাকে ছেড়ে যেতে না চেয়ে, কোথাও স্বামী স্ত্রীর হাত ধরে অনুনয় করছে থেকে যাওয়ার জন্য, কিন্তু সরকারি নিষেধাজ্ঞার সামনে সেই আবেগ ম্লান হয়ে যায়।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দেখা যায় ভারতের পাঞ্জাবের অমৃতসর সংলগ্ন আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত চেকপোস্টে হৃদয়বিদারক এক দৃশ্য, এক পাকিস্তানি নারী কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি নিজ দেশে ফিরছিলেন, কিন্তু তার ভারতীয় নাগরিক পুত্রকে সঙ্গে নিতে কর্তৃপক্ষ বাধা দেয়। ছেলেকে সীমান্তেই রেখে যেতে বাধ্য হন ওই মা, আর এসময় চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি তিনি।

যদিও এর ব্যতিক্রম পুনর্মিলনের দৃশ্য দেখা যায় একই সীমান্তে। মহারাষ্ট্রের জলগাঁওয়ের চিকিৎসক বিক্রম উদাসি ২৫ এপ্রিল থেকে স্ত্রী প্রিয়া ও সন্তান আহানের জন্য সীমান্তে অপেক্ষা করছিলেন। স্ত্রী প্রিয়া পাকিস্তানি নাগরিক এবং আট বছর ধরে দীর্ঘমেয়াদি ভিসায় ভারতে আছেন। মঙ্গলবার সকালে পরিবারটি একত্রিত হলে বিক্রম বলেন, অবশেষে স্ত্রীর ও সন্তানের সঙ্গে দেখা হলো। এখন আমরা আমাদের শহরে ফিরছি।

একইরকম আবেগঘন পুনর্মিলন ঘটে মহারাষ্ট্রের কোলহাপুরের ঋষি কুমারের পরিবারেও। স্ত্রী পাকিস্তানের বালোচিস্তানের বাসিন্দা এবং তাদের দুই সন্তান ভারতীয় নাগরিক। তারা সম্প্রতি পাকিস্তানে আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। নতুন নির্দেশনায় তারা সবাই ভারতে ফিরতে পারেন।

ভারক

তবে এখনো অনিশ্চয়তায় রয়েছে অনেক পরিবার। মধ্যপ্রদেশে পাকিস্তানি পাসপোর্টধারী ৯ শিশুর ভবিষ্যৎ ঝুলে আছে। এসব শিশুর বয়স এক থেকে ১১ বছরের মধ্যে। তাদের ভারতীয় মা’দের সঙ্গে তারা ইন্দোর, জবলপুর ও ভোপালে অবস্থান করছে। অর্থনৈতিক সংকটে পড়ায় মা’রা স্বল্পমেয়াদি ভিসায় সন্তানদের নিয়ে ভারতে এসেছেন। তবে তাদের স্থায়ীভাবে ভারতে থাকা বা নাগরিকত্ব পাওয়ার বিষয়ে এখনো কেন্দ্রীয় সরকারের স্পষ্ট নির্দেশনা আসেনি। এদের মধ্যে চারজন ইন্দোরে, তিনজন জবলপুরে এবং দুইজন ভোপালে রয়েছে।

রায়গড়, ছত্তীসগঢ়ে আরও গুরুতর ঘটনা ঘটে। দুই পাকিস্তানি ভাইবোন—ইফতেখার শেখ (২৯) ও আরমিশ শেখ (২৫)—যারা দীর্ঘমেয়াদি ভিসায় ভারতে থাকছিলেন, তারা জাল তথ্য দিয়ে ভারতীয় ভোটার কার্ড সংগ্রহ করায় পুলিশের হাতে আটক হন। তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি ও মিথ্যা ঘোষণার অভিযোগে একাধিক আইনে মামলা রুজু হয়েছে। পুলিশ জানায়, তাদের পিতা ভারতীয় নাগরিক হলেও তারা জন্মেছেন পাকিস্তানে এবং কোভিডের সময় মা মারা যান।

রাজস্থানে পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাপূর্ণ। সেখানে বসবাসকারী ৪০০ পাকিস্তানি নাগরিকের মধ্যে ইতোমধ্যে ১২৯ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ২৭ এপ্রিলের মধ্যে ১০৯ জন এবং ২৮ এপ্রিল আরও ২০ জনকে সীমান্ত পার করানো হয়। বাকি যারা এখনও অধরা, তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।

59852

তবে আশার খবরও রয়েছে। রাজস্থানে গত তিন দিনে ৩৬২ জন পাকিস্তানি নাগরিকের দীর্ঘমেয়াদি ভিসা অনুমোদিত ও নিবন্ধিত হয়েছে। প্রশাসন জানিয়েছে, যাদের আবেদন প্রক্রিয়াধীন বা বিবেচনায় রয়েছে, তাদের এখনই ফেরত পাঠানো হবে না। 

বিশেষ করে পাকিস্তানি মুসলিম নারীরা যারা ভারতীয় নাগরিকদের স্ত্রী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ভারতে বসবাস করছেন, তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে না। সীমান্তবর্তী রাজস্থানের জয়সলমির, বাডমের ও যোধপুর অঞ্চলে বহু হিন্দু ও সংখ্যালঘু পাকিস্তানি নাগরিক বছরের পর বছর ধরে পরিবারসহ বসবাস করছেন। এদের অনেকের পরিবার এখন দু’দেশে ভাগ হয়ে গেছে। অনেক মায়ের হাতে পাকিস্তানি পাসপোর্ট, অথচ সন্তান ভারতীয় নাগরিগ—এই বিভাজন তাদের প্রতিদিনের জীবনে অনিশ্চয়তা ও মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence