স্লিভলেস ব্লাউজে ফটোশ্যুট, ঢাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে কলেজছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগ

কার্জন হল ও ঢাবি লোগো
কার্জন হল ও ঢাবি লোগো  © ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে ছবি তুলতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক দ্বারা হেনস্তার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন দুই শিক্ষার্থী। গত ২৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। অভিযোগ করা শিক্ষার্থীদের একজন ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র এবং অন্যজন ঢাকা সিটি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক এ কে এম মাহবুব হাসান বলেন, যে কেউ তার মতামত প্রকাশ করতে পারেন। আলোচনা-সমালোচনাও হতে পারে। তবে একজন শিক্ষকের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করতে হয়— সেটি ওই শিক্ষার্থীদের জানা উচিত ছিল। বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কথা বলতে প্রস্তুত নয় বলেও জানান তিনি।

রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের ওই শিক্ষার্থীর অভিযোগ, সম্প্রতি একদিন বেলা ১২টায় তারা ছবি তুলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে পৌঁছাই। এ সময় আমার সঙ্গে ঢাকা সিটি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া এক মডেল ছিলেন। মূলত তার ছবি তুলতেই সেখানে যাওয়া। ওই শিক্ষার্থী জানান, ছবি তোলার একপর্যায়ে সেখানে হাজির হন জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. একেএম মাহবুব হাসান। তিনি আমাদের কাছে জানতে চান, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কি-না?

যখন তিনি জানতে পারলেন আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নই, তখনই তিনি আমাদের নিজ অফিস কক্ষে ডেকে নেন। পরে সেখানে উপস্থিত এক সহযোগী অধ্যাপক পদধারী এক নারী শিক্ষক আমাদের হেনস্তা করেন। পরবর্তীতে আমাদের অভিভাবকদেরও ডেকে নিয়ে সেখানে জিজ্ঞাবাদ করা হয়েছে। ওই ছাত্রের অভিযোগ, মডেল ওই মেয়েটি শাড়ির সঙ্গে স্লিভলেস (হাতা-কাটা) ব্লাউজ পড়েছিল। আমাদের ধারনা, স্লিভলেস পোশাকের কারণেই আমাদের হেনস্তা করা হয়েছে।

ওই ছাত্র জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. একেএম মাহবুব হাসানের অফিস কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। ডিনের কক্ষে ওই অনুষদের একজন সহকারী অধ্যাপক সিটি কলেজের ওই ছাত্রী অশ্লীল জামা পরে ছবি তুলছে এসেছেন অভিযোগ করে তাদের হেনস্তা করেন।

ছাত্রীর সঙ্গে নিজের পরিচয়ের বিষয়টি উল্লেখ করে ওই ছাত্র বলেন, আমি যেহেতু ফটোগ্রাফি করি, সে সুবাদেই সিটি কলেজের ওই ছাত্রী আমাকে হায়ার করেন। তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে যা হয়েছে এটা মোটেও কাম্য ছিল না। সেদিনের ঘটনার পর থেকে আমি ভয়ানক ট্রমার মাঝ দিয়ে যাচ্ছি। এ ঘটনার বিচার চাই আমি। আমরা আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ সময় তিনি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করার কথাও জানান।

এ বিষয়ে ওই কলেজছাত্রের মায়ের সঙ্গে যোগাযোগের করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে জানান। হেনস্তার শিকার ওই ছাত্রী বলেন, কার্জন হলে তো অনেকেই ছবি তুলে। তাই সে ভাবনা থেকে আমরাও সেখানে গিয়েছিলাম ছবি তুলতে। আমার পরণে ছিল শাড়ি ও স্লিভলেজ ব্লাউজ। সেখানে ছবি তুলতে থাকার একপর্যায়ে আমাদেরকে ডিন স্যারের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে বলা হয়, আমরা ন্যুড ফটোগ্রাফি করছিলাম। একর্পায়ে ফটোগ্রাফার ছেলেটা সেই কথার জবাব দিলে তারা আরও ক্ষুব্ধ হন এবং দুর্ব্যবহার করেন।

আরও পড়ুন: মীরসরাই দুর্ঘটনা: কানাডায় মায়ের আঁচলে ঠাঁই হলো না হিশামের

এ বিষয়ে জীববিজ্ঞান অনুষদে প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম মাহবুব হাসান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, পুরো ব্যাপারটা অনেক জটিল। এ মুহূর্তে আমি এ বিষয়ে কথা বলতে প্রস্তুত নই। ওই শিক্ষার্থী কোথায় কাকে কী বলেছে, সেটিও আমি দেখিনি। শুধু এটুকু বলতে চাই, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। যে কেউ যার মতামত প্রকাশ করতে পারেন। আলোচনা-সমালোচনা করতে পারেন। একজন শিক্ষকের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করতে হয় সেটি তাদের জানা উচিত ছিল। কারণ, আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের সঙ্গে নম্রতা-ভদ্রতা বজায় রেখে কথা বলেন।

ফেসবুকে ঘটনার বর্ণনা
এদিকে ঘটনার বিশদ বর্ণনা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটির ক্রিয়েটিভিটি অ্যান্ড ইনোভেশন বিভাগের সিনিয়র লেকচারার ড. আমিনুল ইসলাম। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পাঠানো ক্ষুদেবার্তা নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে আমিনুল লিখেছেন, ছেলেটার মেসেজ পড়ে আমি পুরো রাত ঘুমাতে পারিনি। এই ঘটনার পর ছেলেটা ভয়ানক ট্রমার মাঝ দিয়ে যাচ্ছে। আমি তার মায়ের সাথেও কথা বলেছি।

ক্ষুদেবার্তায় ওই ছাত্র লিখেন, আজকের এই ঘটনাটি তথা কথিত বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটা। একাদশ শ্রেণীর একজন ছাত্রী আমাকে তার ফটোশুট করে দেওয়ার জন্য একদিনের জন্য বুক করেছিলেন। আমরা ঠিক করি কার্জন হলে এই ফটোশুটটি করব। কেননা কার্জন হলে মোটামুটি সবাই ছবি তুলে।

মডেল স্লিভলেস (হাতা-কাটা) একটি ব্লাউজ আর শাড়ি পরে এসেছিলেন। আমরা আমাদের মত ছবি তুলছিলাম, হুট করে একজন বয়স্ক স্যার আমাদেরকে বললেন আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কিনা? আমরা উত্তর দিলাম-না। তখন তিনি বললেন -আমার সাথে আসো। তো তিনি একজন দারোয়ানকে বললেন যে তিনি যেন আমাদেরকে তার অফিসে নিয়ে যান। পরে আমরা জানতে পারলাম তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন।
 
এক ঘন্টা ওয়েট করার পর তিনি আমাদেরকে তার রুমে ডাকেন। ঢুকে আমরা ডীন স্যারকে দেখতে পাই এবং তার সামনে দুইজন ম্যাডামকে দেখতে পাই। তাই আমি ভেবেছিলাম ম্যাডামরা যেহেতু আছেন আর যেহেতু এখানে একজন মেয়ে আছে তাই তারা আমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হবেন।
 
কিন্তু আমাদের আশ্চর্য করে দিয়ে ম্যাডাম সর্বপ্রথম আমাদের যে কথাটি বললেন, তা হচ্ছে, "এরকম ছবি তোলার সাহস তোমরা কি করে পেলে। তোমরা কি জানো এটা পর্নোগ্রাফি আইনের মধ্যে পড়ে? it's related to nudity?"
 
আমরা থ হয়ে গিয়েছিলাম। আমি কখনোই ভাবতে পারিনি স্লিভলেস ব্লাউজ পরে ছবি তোলা আজকাল পর্নোগ্রাফি আইনের আওতায় পরে যায় তিনি তার কথা কন্টিনিউ করতে থাকলেন। ডীন স্যার যদিও কিছুটা শান্ত ছিলেন।
পরবর্তীতে সেই ম্যাডাম আমাদেরকে আমাদের গার্ডিয়ানের নাম্বার লিখতে বাধ্য করেন। এরপর তিনি সর্বপ্রথম আমার মাকে ফোন দেন।
 
আমিনুলকে লেখা ক্ষুদেবার্তায় ওই শিক্ষার্থী আরো জানান, এরমধ্যে ওই ম্যাডাম আমার ক্যামেরা বাজেয়াপ্ত করার কথা বলেন। যদিও তখনও কোন কিছুর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আমার ওই তথাকথিত নিয়ম শেখানোর কথার কারণে তারা প্রক্টর সারকে ডেকে আনেন। প্রক্টর বলে পরিচয় দিলেও পরবর্তীতে আমরা জানতে পারি তিনি একচুয়ালি ছিলেন এসিস্ট্যান্ট প্রক্টর। এর মধ্যে আমার মা ও বাবা কয়েকবার আমাকে কল দেন। কিন্তু তারা আমাকে কল ধরতে দেননি এর মধ্যে প্রক্টর স্যার আমার বাবার সাথে কথা বলতে রাজি হন। আমার বাবা নিজেও দেশের একটি নামকরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার। তথাপি তাকে অপমান করা হয়

সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence