ঋণ নিয়ে কোচিং করে ঢাবিতে ২৮৭তম জাহিদ, এখনো জোগাড় হয়নি ভর্তির টাকা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২২, ১২:২৪ PM , আপডেট: ০২ জুলাই ২০২২, ০১:০৬ PM
বিভিন্ন ব্যক্তি ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে কোচিং ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য টাকা সংগ্রহ করে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছেন জাহিদ হাসান। অভাব অনটনেও হার মানেননি জাহিদ ও তার দিনমজুর বাবা। তাদের কষ্ট বিফলে যায়নি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভর্তি পরীক্ষায় ‘খ’ ইউনিটে মেধা তালিকায় ২৮৭তম হয়েছেন জাহিদ।
কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েও দুশ্চিন্তায় তিনি। তার দিনমজুর বাবার পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির টাকা সংগ্রহ করা এখনো সম্ভব হয়নি। জাহিদের পড়াশোনার জন্য নেয়া আগের ঋণই এখনো শোধ করতে পারেননি তার বাবা। এরমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির টাকা যোগাড় প্রায় অসম্ভব তাদের পক্ষে।
মেধাবী জাহিদ হাসান ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের শাহজাহান আলীর ছেলে। ২০১৮ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পান জাহিদ। তার আগে পিএসসি পরীক্ষায় রঘুনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ এবং রঘুনাথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেন। সবশেষ জাহিদ মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উর্ত্তীণ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেন।
জানা যায়, অত্যন্ত মেধাবী জাহিদ হাসান। বাবা শাহজাহান আলী আগে রিকশা চালাতেন। বর্তমানে স্থানীয় একটি ইট ভাঙার গাড়িতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। মা গৃহিণী। দুই ভাই এবং এক বোন জাহিদরা। ৫ শতক জমিতে ছোট্ট দুটি ঘরে বসবাস পাঁচ সদস্যের এ পরিবারের। জাহিদের বাবা শাহজাহান আলী যা আয় করেন তা দিয়ে সংসারই ঠিকমতো চলে না।
গত দুই বছর বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সহযোগিতায় জাহিদ এ পর্যন্ত এসেছেন। কিন্তু ঢাকায় গিয়ে ভর্তি ও বইসহ অন্যান্য খরচ কিভাবে সংগ্রহ করবেন সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় জাহিদ ও তার পরিবার। তার ছোট ভাই জিহাদও এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেবে।
জাহিদ হাসান জানান, পড়াশোনা শেষ করে বিসিএস দিয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়ে দেশসেবার স্বপ্ন তার। কিন্তু আর্থিক সংকটে তার স্বপ্ন ভাঙার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জাহিদের বাবা শাহজাহান আলী বলেন, আমার জমিজমা বলতে ভিটে বাড়ির এই পাাঁচ শতক মাত্র। আগে রিকশা চালিয়ে ছেলের লেখাপড়ার খরচ এবং সংসার চালিয়েছি। আমার দুইটা ছেলে ও একটা মেয়ে। ছেলে দুইটা খুব মেধাবী। আমি অনেক কষ্ট করে ছেলে দুইটার লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছি। এত কষ্টের মাঝেও ছেলে দুইটা মানুষ হলে আমার সব কষ্ট স্বার্থক হবে।
রস্তমআলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমান জানান, জাহিদ হাসান অনেক মেধাবী ছাত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েও টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারছে না সে। এজন্য জাহিদের পাশে দাঁড়াতে সমাজের বিত্তবানদের প্রতি অনুরোধ করছি।
রাখালগাছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলাম মন্টু জানান, সে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির সুযোগ পেয়েও টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারছে না বিষয়টি আমার জানা নেই। জাহিদ অথবা তার বাবা এখনো পর্যন্ত আমার কাছে আসেনি। তারা যদি আমার কাছে আসে তাহলে যতটুক পারি সাহায্য করবো।