‘হলে ২৪ ঘণ্টা কি হয়, এগুলো আমরা দেখব নাকি’
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২২, ০৪:৩৭ PM , আপডেট: ১১ মার্চ ২০২২, ০৭:১৩ PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষক ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মাদ রাকিব উদ্দীন ভূঁইয়া বলেন, ‘হলে কি হচ্ছে না হচ্ছে ২৪ ঘণ্টাই কি আমরা এগুলো দেখব নাকি? আমাদের তো ক্লাস রয়েছে,পরিবার রয়েছে।’
আজ শুক্রবার (১১ মার্চ) বিকাল সাড়ে তিনটায় ওই হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. আকরাম হোসেনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে ওই হলের এক শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের নির্যাতনের ঘটনায় আবাসিক শিক্ষকদের ভূমিকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: বিয়ের আগেই শারীরিক সম্পর্কের অভিযোগ ঢাবি ছাত্রীর
রাকিব উদ্দীন বলেন, ‘আমাদের কাজ তো ২৪ ঘণ্টা ছাত্রদের সাথে থাকা না।গেস্টরুমে কোন ছেলে কীভাবে দাঁড়িয়ে আছে সেটা চেক করার দায়িত্ব কি আমাদের?’
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তালেবের (ভুক্তভোগী) মুখে জোর পূর্বক সিগারেট জ্বালিয়ে দিয়ে তা হাত দিয়ে ধরা ছাড়া, মুখ থেকে নামানো ছাড়া ও মুখ দিয়ে ধোঁয়া না ছেড়ে পুরো সিগারেট খেতে বলে শান্ত ও বাঁধন (অভিযুক্ত)। তাকে (ভুক্তভোগী) হাত পিছনের দিকে রাখতে বাধ্য করা হয়। জ্বলন্ত সিগারেট মুখে, আর তার সব ধোঁয়া নাক দিয়ে যাচ্ছিল।
এরকম অমানবিক নির্যাতনে যখন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী (তালিব) কান্না করছিল তখন অভিযুক্ত (বাঁধন) তাচ্ছিল্য করে বলে, ‘কান্দস ক্যান, তুই কি মেয়ে নাকি?’এভাবে সিগারেটের দুই তৃতীয়াংশের ধোয়া নিতে বাধ্য করার পর একপর্যায়ে বাঁধন বলে উঠে - ‘এই তুই তো মরে যাবি।’
সূত্র জানায়, আবু তালিবকে এই চারজন সবচেয়ে বেশি যন্ত্রনা দেয়৷ এছাড়াও প্রোগ্রামে উপস্থিত না থাকার অভিযোগে ১০-১২ জন শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয় এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য (পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ৩০১(ক) নম্বর রুম গত তিনদিন থেকে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ফলে ওই কক্ষের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা থাকা সত্বেও তারা বিভিন্ন হলে ঘুরে ঘুরে রাত কাটাচ্ছেন।
অভিযুক্ত নির্যাতনকারীরা সবসময় গেস্টরুমে নির্যাতন করে, হয়রানি করে। গালি দেয় বাবা-মা তুলে। তাদের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে দ্বিতীয় বর্ষের ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে হল ছেড়ে দিয়েছেন।
হল ছাত্রলীগ সূত্রে আরো জানা যায়,এই নির্যাতনগুলো করা হচ্ছে ময়মনসিংহ অঞ্চল ছাড়া বাকি অঞ্চলের যারা আছেন তাদের বেছে বেছে। এমনকি হল ছাত্রলীগের চেইন ভেঙ্গে তথাকথিত গেস্টরুম দ্বিতীয় বর্ষ না নিয়ে প্রথম বর্ষের গেস্টরুমও তৃতীয় বর্ষ নিচ্ছে।
এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আকরাম হোসেন বলেন, ‘আমাদের গেস্টরুমে ক্যামেরা লাগানো আছে। আমি ক্যামেরা আমার ফোনে দেখি। এ ধরণের অভিযোগের তো প্রমাণ থাকতে হবে। একটা ঝাপসা কথার উপর তো কোনো কিছু করা যায় না। আমরা অভিযোগ পাই। কিন্তু প্রমাণ পাই না।’
আরও পড়ুন: আল্লাহর উপর ভরসা করেছি, তিনি ফল দিয়েছেন—মেডিকেলে প্রথম মিশোরী
নির্যাতিতরা ভয়ে প্রশাসনের কাছে এসব বিষয়ে অভিযোগ করতে পারে না, তাদের ব্যাপারে কী করা হবে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্দিষ্ট অভিযোগ নেই বলে আমরা বলতে পারছি না। আপনারা বিষয়টি আমাদের বলেছেন। আমরা নজরে রাখব।’
শিক্ষার্থী নির্যাতনে অভিযুক্তরা হলেন- সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী শেখ শান্ত আলম, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ইমদাদুল হক বাঁধন, তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শাহাবুদ্দিন ইসলাম বিজয় ও আইন বিভাগের নাহিদুল ইসলাম ফাগুন।তারা চারজনেই ওই হলের তৃতীয় বর্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং হল শাখা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী।এরা হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান শান্তের অনুসারী। মেহেদী হাসান শান্ত ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের অনুসারী।ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম আবু তালিব। তিনি অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।