স্মৃতি জাগানিয়া ‘ভাষা শহীদ আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর ও সংগ্রহশালা’

ভাষা শহীদ আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর ও সংগ্রহশালা
ভাষা শহীদ আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর ও সংগ্রহশালা  © ফাইল ফটো

মায়ের মুখের ভাষা বাংলাকে রক্ষায় জীবন দিয়েছেন এদেশের অনেক তাজা প্রাণ।একমাত্র বাংলা ভাষা ছাড়া ভাষার জন্য জীবন দিয়েছেন এরকম কোন জাতি ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এসব ত্যাগী, জীবন উৎসর্গকারী মহৎ প্রাণদের আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এবং ভাষা আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাস সংরক্ষণে রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ২০১২ সালে 'ভাষা শহীদ আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর ও সংগ্রহশালা'টি প্রতিষ্ঠা করা হয়।

স্মৃতি জাগানিয়া এই জাদুঘর ও সংগ্রহশালাটিতে ভাষা আন্দোলন ও শহীদ আবুল বরকতের স্মৃতির বেশ কিছু দুর্লভ সংগ্রহ রয়েছে।

শহীদ আবুল বরকতের জন্ম ১৯২৭ সালের ১৬ জুন ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলায়। তার ডাকনাম ছিল আবাই। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৮ সালে আবুল বরকত ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। ভাষা আন্দোলন যখন শুরু হয় তখন তিনি স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।

জহুরুল হক হলের পেছনের গেট দিয়ে ঢুকলেই হাতের বাঁয়ে এই জাদুঘর। এটি ২০১২ সালের ২৫ মার্চ উদ্বোধন করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান।৩৩ শতাংশ জায়গার ওপর নির্মিত এ জাদুঘর ও সংগ্রহশালাটি শুক্র, শনি ও সরকারি ছুটির দিন বাদে সপ্তাহের রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

জাদুঘরের ভবনের সম্মুখে স্থাপন করা হয়েছে আবুল বরকতের প্রতিকৃতি। এরপর ভিতরে ঢুকলেই প্রথমে চোখে পরবে তার জীবনী। এই স্মৃতিফলক পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলে দেয়ালে বিশাল ক্যানভাসে আঁকা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ দাবিতে ছাত্রদের মিছিল। মিছিলে সরকারি বাহিনীর গুলি বর্ষণ। গুলিতে শহীদ ও তাঁদের স্মরণে প্রথম শহীদ মিনার এবং তারপর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, শ্রদ্ধাঞ্জলি ও প্রভাতফেরি। ডান পাশে নিদর্শন ও আলোকচিত্র। নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে ভাষা শহীদ আবুল বরকতের ব্যবহৃত একটি খেলনা, তিনটি কাপ-পিরিচ, বাবাকে লেখা বরকতের তিনটি চিঠি, বরকতের ডিগ্রির সনদ।

১৯৪৮ সালের ২ সেপ্টেম্বর বরকত তাঁর বাবাকে লেখা চিঠিতে বলছেন, ‘ University তে এখনও ভর্তি হওয়া হয় নাই। তবে দু-চার দিনের মধ্যেই ভর্তি হইবো।’ ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় টাকা চেয়ে তিনি লিখেছেন, ‘আপনি যে টাকা দিয়াছেন উহাতে হইবে না।কারণ ভর্ত্তি হইতেই প্রায় ৬০/৭০ টাকা লাগিবে। তার ওপর একখানি তক্তপোষ,লণ্ঠন ও আরও দু’একটা জিনিসপত্রও কিনিতে হইবে। আপনি ৫০ টাকা ধার করিয়া পাঠাইয়া দিবেন। আপনারা এখন কেমন আছেন জানাইয়া আমার চিন্তা দূর করিবেন। আমি এখন খোদার ফজলে ভালো আছি।অধিক আর কি লিখিব...।'

এই সংগ্রহশালায় ২১ ফেব্রুয়ারি বরকতের কবরে তাঁর বাবা-মায়ের শ্রদ্ধাঞ্জলি, মুর্শিদাবাদ জেলার বরকতের বাড়ির ছবি,সেই সময়ের কিশোর বরকতের ছবি, ভাষা আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোতে ঘটে যাওয়া মিছিল, সভার আলোকচিত্র, ভাষা শহীদদের আলোকচিত্র, প্রিয়জনের কাছে লেখা চিঠি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের প্রভাতফেরি, মাওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রভাতফেরির ছবি, একুশের গানসহ নানা ঘটনার আলোকচিত্র রয়েছে। ঐতিহাসিক এসব ছবি যে কারও মনে শিহরণ জাগাবে।

এছাড়া এ জাদুঘরের দ্বিতীয় তলায় রয়েছে একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি। এ লাইব্রেরিতে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর পাঁচ শতাধিক বই রয়েছে। বইগুলো সবার পাঠের জন্য উন্মুক্ত। ভাষা আন্দোলনের ওপর ডকুমেন্টারি, একুশে পদক (মরণোত্তর) ও তাঁর ছবি রয়েছে এখানে।

এছাড়াও মাতৃভাষা বাংলার জন্য আত্মোৎসর্গের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০০ সালে আবুল বরকতকে একুশে পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত করে সরকার। সেই পদকও আছে এখানে।


সর্বশেষ সংবাদ