শেষ সময়ে নিয়োগে তাড়াহুড়ো জাবি ভিসির

জাবি ভিসি
জাবি ভিসি  © সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের মেয়াদের শেষ সময় চলছে। আগামী মার্চের ২ তারিখ তার মেয়াদ শেষ হবে। আর এই শেষ সময়ে এসে নিজের ইচ্ছে মতো শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দিতে বেশ বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন তিনি।

এবছরের জানুয়ারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৯ টি পদে শিক্ষক ও ১৪ টি পদে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। গত বছরের শুরুতেই ৪৭টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর মধ্যে ৩৭ জন শিক্ষক এবং ১০ জন কর্মকর্তা ছিলেন।

এসব নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। বিশ্ববিদ্যালয়-সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রয়োজনীয়তার বাইরেই এসব নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয়করণ কিংবা পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়োগ নিশ্চিত করতেই এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। সাধারণত রেওয়াজ প্রচলিত আছে শেষ সময়ে এসে ভিসিরা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন না কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তা মানছেন না ভিসিরা। সেই না মানা ভিসিদের কাতারেই নাম লেখালেন জাবির উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম।

আরও পড়ুন- জাবি ভিসি পদত্যাগে আল্টিমেটাম আন্দোলনকারীদের 

অনেকে বলছেন, দুই মেয়াদে ভিসির দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। ঠিক যেনো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের মতো। অধ্যাপক সোবহান ভিসি পদে বিদায়ের শেষ বেলায় ১৩৭ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন। গত ৬ মে (বৃহস্পতিবার) অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান তাদের নিয়োগ দেন। ঠিক অধ্যাপক সোবহানের পথেই কি হাঁটছেন জাবির ভিসি ফারজানা? এ প্রশ্ন এখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রীদের মনে ভিড় করছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভোটার ও লাঠিয়াল নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পর্যবসিত করেছে। গোষ্ঠি ও দলীয় স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এরকম শিক্ষকের নামে অনুগত আজ্ঞাবাহি দাস নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশকে ধূলিস্যাৎ করে দেবে। গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন সকল ছাত্র শিক্ষকের উচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্যুযাত্রা ঠেকাতে এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দলন গড়ে তোলা।

আরও পড়ুন- ছাত্রলীগ গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে আমাকে মুক্ত করেছে: জাবি ভিসি

দর্শন বিভাগের শিক্ষক ও প্রগতিশীল শিক্ষক মঞ্চের মুখপাত্র অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণে মনে হয়েছে শিক্ষকরা উপাচার্য হন এসব স্বার্থসিদ্ধির জন্য। তারা এটাকে একটা সুযোগ হিসেবে ভাবেন। শিক্ষার পরিবেশ নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। সম্প্রতি বেশ কয়েকজন উপাচার্যের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে এবং কোথাও কোথাও তদন্ত কমিটি হয়েছে, নিয়োগ স্থগিত হয়েছে। তবে এ ধরনের কিছু এখন পর্যন্ত হয় নি।

তবে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আইবিএ-জেইউ এর অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, আমার জানামতে যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে তা নিয়মিত প্রক্রিয়ার অংশ। এর বাইরে কোনো নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে বলে শুনি নাই।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ, প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নুরুল আলম ও উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয় নি।


সর্বশেষ সংবাদ