ঢাবি হলের অপরিচ্ছন্ন ও অপুষ্টিকর খাবারে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আছেন চরম আবাসন সংকটে। রাজনৈতিক শেকলে আবদ্ধতা, রেজিস্ট্রার বিল্ডিং বিড়ম্বনাসহ নানাবিধ সমস্যার নিয়মিত ভুক্তভোগী তারা। তার মধ্যে অন্যতম একটি সমস্যা হলো চড়া মূল্যে খাবার কেনা। তাও অত্যন্ত নিম্নমানের খাবার। যা প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের অপুষ্টি ও স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বারবার অবহিত করা হলেও তাদের কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ক্যান্টিন, ক্যাফেটেরিয়া ও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টের খাবারের দোকানগুলোতে নিয়মিত নিম্ন মানের খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে এবং সে খাবার প্রস্তুতের পদ্ধতি নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। এসমস্ত খাবার খেয়ে শিক্ষার্থীরা পুষ্টি চাহিদা তো মেটাতে পারছেনই না বরং প্রতিনিয়তই পেটের অসুখে ভুগছে। বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে এ রোগ নিয়েই বিরাট একটা অংশকে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়।

আরও পড়ুন: ঢাবির ১৫০ গণরুমের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছাত্রলীগের

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি হলের ক্যান্টিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্যান্টিনের রান্নাঘরগুলোতে অস্বাস্থ্যকর ও সেঁতসেঁতে পরিবেশে খাবার প্রস্তুত করা হচ্ছে। রান্নায় ব্যবহার করা হচ্ছে খুবই নিম্নমানের তেল, টেস্টিং সল্টসহ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন উপকরণ। পুষ্টিবিজ্ঞানের মতে যা মানুষের জন্য খুবই ক্ষতিকর। সবচেয়ে লক্ষণীয় ব্যাপার হল খোলা জায়গায় রাখা খাবারগুলোতে বারবার মাছি বসছে । সেই খাবারগুলোই আবার শিক্ষার্থীদের পরিবেশন করা হচ্ছে। ক্যান্টিন, ক্যাফেটেরিয়া বা দোকানগুলোতে যারা কাজ করে তাদের অধিকাংশই শিশু, যাদের স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে নেই কোন ধারণা।

ক্যান্টিনের খাবারের টেবিলগুলোও অনেক সময় স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে থাকে, যা দেখে খাবারের রুচি চলে যায়। বেশিরভাগ হল ক্যান্টিনেই খুবই পাতলা এবং নামমাত্র ডাল দেয়া হয়, যা নিয়ে ঘোর আপত্তি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা । ঢাবির প্রায় প্রতিটি হলেই হাত মোছার জন্য মাত্র একটি তোয়ালে রাখা হয়, সবাই এসে সেটিতেই হাত মোছেন। হাত মুছতে মুছতে তোয়ালেটি তৈলাক্ত ও ব্যাকটেরিয়ায় ভরপুর হয়ে যায়। যা এই করোনাকালে চরম স্বাস্থঝুঁকি বৃদ্ধি করছে।

কিছুদিন পূর্বেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা খাবারের দাম কমানো ও পুষ্টিমান বাড়ানোর জন্য কয়েক দফায় আন্দোলন করেছেন। কিন্তু তারপরও ক্যান্টিনগুলোতে কোন পরিবর্তন ঘটেনি।

এদিকে খাবারের মানের কোন উন্নতি না হলেও দামের উন্নতি হয়েছে। ক্যান্টিনগুলোতে এক বেলা খাবার (মাছ, ডিম ও ছোট্ট এক টুকরো মুরগী দিয়ে ভাত) খেতে ন্যূনতম খরচ হয় ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। কেউ সবজি বা ভর্তা খেতে চাইলে আরও ৫ টাকা যোগ হয়। আবার মুরগির রোস্ট, খাশি বা গরুর মাংস তো আভিজাত্যপূর্ণ খাবারে পরিণত হয়ছে। এগুলোর মধ্যে ছোট্ট এক/দুই টুকরো খেতে শিক্ষার্থীকে গুনতে হয় ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। কোন কোন ক্যান্টিনে আবার পোলাও পাওয়া যায়। যার এক প্লেটের দাম (মুরগির মাংসসহ) ৬০ টাকা। অতিরিক্ত ভাত নিলে নিলে ৭০ টাকা। যা নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীর জন্য একটি আকাঙ্খার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঢাবিতে খাবারের মান নিয়ে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের হলের ক্যান্টিনের খাবারগুলোতে মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন ধরনের পোকা পাওয়া যায়, এতেই বুঝা যায় যে, ক্যান্টিনগুলোর খাবার কতটুক নিরাপদ।

আরও পড়ুন: ঢাবি ছাত্রলীগের হল কমিটিতে আলোচনায় যারা

দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমার হলে আমি একদিন মুরগির লটপটি দিয়ে ভাত খাচ্ছিলাম। খেয়াল করে দেখি মুরগির পায়ের আবরণ ছাড়ানো হয়নি এবং মুরগির গিলা ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয়নি, এমনকি চামড়ার লোমও রয়েই গেছে। ছোট মাছের সাথে থাকা বিভিন্ন ধরনের পানি পোকা বাছাই করেননি এবং খরকুটার মত বেশ কিছু ময়লাসহই রান্না করেছে। অধিকাংশ সময়ই দেখা যায় তারা পঁচা আলু বা সবজি ব্যবহার করে থাকে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, দেশের সেরা মেধাবী শিক্ষার্থীরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকে। সুতরাং হেলথ প্রটোকল ও হেলথ হাইজেনিং আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে ভালভাবে অনুসরণ করবে এটাই তো প্রত্যাশা। খাবার প্রস্তুতের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি বিনম্র আহ্বান থাকবে যে খাবার প্রস্তুত প্রক্রিয়াসহ সবকিছুতে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টা মাথায় রাখবে এবং সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা প্রায়শই প্রভোস্ট মিটিংয়ে খাবারের ব্যাপারটা এজেন্ডা হিসেবে রাখি। হলের ক্যান্টিনগুলোতে স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের গুনগত মান বজায় রাখা, প্রস্তুতের প্রক্রিয়া, পরিবেশন ও গ্রহণসহ সব ক্ষেত্রেই হল প্রশাসন কর্তৃক সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখার ব্যাপারটি আমরা নিয়মিত মনিটরিং করি। তারপরও যদি কখনো কোথাও ব্যত্যয় ঘটে তাহলে সেটি একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। যদি কোন হলে খাবার নিয়ে ব্যতিক্রম কিছু ঘটে তাহলে আমাদের আবাসিক শিক্ষকগণ এবং হল প্রাধ্যক্ষ অবশ্যই তা দেখবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।


সর্বশেষ সংবাদ