স্বাক্ষরের জন্যও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি নেন অধ্যাপক জিয়া

অধ্যাপক জিয়া রহমান ও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল
অধ্যাপক জিয়া রহমান ও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল  © ফাইল ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রতিটি আবাসিক হলের প্রভোস্টরা নিয়মিত রুটিন ওয়ার্ক হিসেবে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কাগজপত্রে স্বাক্ষর দেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়টির মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান স্নাতক প্রথম বর্ষ ও স্নাতকোত্তরে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সেই স্বাক্ষরের গত চার বছরে ফি হিসেবে আদায় করেছেন সাড়ে তিন লাখ টাকা।

নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া এসব ছাত্রদের ভর্তির কাগজপত্রে স্বাক্ষর করার জন্য তিনি এই চার্জ নিয়েছেন। তবে ভর্তির কাজের ‘হ্যান্ডেলিং চার্জ’ নামক এই অদ্ভুত চার্জের কোন অনুমোদন নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের।

হল সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর স্নাতক প্রথম বর্ষ এবং স্নাতকোত্তরে ভর্তি হওয়া ছাত্রদের কাছ থেকে হ্যান্ডেলিং চার্জ বাবদ একটি নির্দ্দিষ্ট ফি হলের ব্যাংক একাউন্টে জমা হয়। ২০১৭ সালে এই চার্জ ছিল ছাত্র প্রতি ৪০০ টাকা। ২০১৮ সালে এই ফি বাড়িয়ে করা হয় ৬০০ টাকা। এই ফি হলের কোন প্রশাসনিক সভায় নয়, বরং প্রভোস্ট নিজের মর্জিতে বাড়িয়েছেন। দেখা গেছে প্রতি ছাত্রের কাছ থেকে ৬০০ টাকা নেয়া হলে তার অর্ধেক জমা পড়েছে প্রভোস্টের একাউন্টে। অর্থাৎ প্রভোস্ট প্রতি ছাত্রের কাগজে স্বাক্ষরের জন্য নিচ্ছেন ৩০০ টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলের একজন কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ভর্তি হওয়া ছাত্রদের কয়েকটি কাগজে প্রভোস্টকে সাক্ষর করতে হয়। পাশাপাশি তাদের কাগজপত্রগুলো ঠিকঠাক করে রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে পাঠাতে হয়। এ কাজের জন্য বরাদ্দকৃত ফির নাম দেয়া হয়েছে হ্যান্ডেলিং চার্জ।

অধ্যাপক জিয়া রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রভোস্ট হিসেবে নিয়োগ পান ২০১৫ সালের ৫ মে। এই চার্জের নামে ২০১৪-১৫ এবং ২০১৫-১৬ সেশন থেকে টানা চার বছর তিনি মোট ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৯২৮ টাকা ৫০ পয়সা হলের বিবিধ খাত থেকে নিয়েছেন। প্রতি বছর এ চার্জ বাবদ আদায়কৃত অর্থের অর্ধেক বা ৫০ শতাংশ প্রভোস্ট নেন।

বাকি অর্ধেকের মধ্যে ৮ থেকে ১০ শতাংশ হলের উন্নয়ন কাজে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে নথিপত্রে উল্লেখ আছে। আর ৪০-৪২ শতাংশ অর্থ হলের ১৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। অবশ্য এ অর্থের কোন ভাগ হলের আবাসিক ও সহকারী আবাসিক শিক্ষকরা পান না।

হল থেকে পাওয়া নথিগুলোতে দেখা গেছে, ২০১৪-১৫ এবং ২০১৫-১৬ সেশনে সেশনে হ্যান্ডেলিং চার্জ বাবদ ছাত্রদের কাছ থেকে নেয়া হয় ১ লাখ ১১ হাজার ৭৭২ টাকা ৫০ পয়সা। নথিতে দেখা গেছে, প্রথমে প্রভোস্টের ভাগ ধরা হয় ৪০ শতাংশ। পরে প্রভোস্ট নিজেই সে ভাগ বাড়িয়ে করেন ৫০ শতাংশ। অর্থাৎ প্রথমে প্রভোস্টের ভাগ দাঁড়িয়েছিল ৪৭ হাজার ৯০২ টাকা ৫০ পয়সা। পরে ১০ শতাংশ বেড়ে আরো ১৬ হাজার ৭৬৫ টাকা প্রভোস্টকে দেয়া হয়। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ সেশনে এ খাতে ছাত্রদের কাছ থেকে আয় হয় ১ লাখ ৬৯ হাজার ৯৮০ টাকা, যার মধ্যে প্রভোস্ট পান অর্ধেক বা ৮৪ হাজার ৯৯০ টাকা। ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ সেশনে এসে প্রভোস্ট পান ৯২ হাজার ৬৭৫ টাকা। এ সেশনে এ খাতে আয় হয় ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৫০ টাকা। সবশেষ ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ সেশনে এসে প্রভোস্টের আয় লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এ সেশনের ২ লাখ ৩২ হাজার ৭৫০ টাকার মধ্যে তিনি নিয়েছেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৩৭৭ টাকা ৫০ পয়সা।

জানা গেছে, হ্যান্ডেলিং চার্জের ৫০ শতাংশ প্রভোস্ট নিয়ে নিলেও বাকি ৫০ শতাংশ কিভাবে খরচ হবে সে সিদ্ধান্ত প্রভোস্ট নেন। ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ এবং ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ এর দুটি নথিতে দেখা গেছে, প্রভোস্ট নিজ হাতে কর্মচারীদের বরাদ্দ ইচ্ছে মাফিক হ্রাস–বৃদ্ধি করেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হলের একজন আবাসিক শিক্ষক জানান, হলের বড় ধরনের আর্থিক লেনদেন হলের প্রশাসনিক মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলেই এটি হয়ে থাকে। কিন্তু জিয়াউর রহমান হলের কোন মিটিংয়ে এ ধরনের হ্যান্ডেলিং চার্জের কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তাছাড়া প্রভোস্ট ইচ্ছেমতো হ্যান্ডেলিং চার্জের নামে যে অতিরিক্ত ফি নিয়েছেন তা হলের প্রশাসনিক সভায় অনুমোদনকৃত নয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘হ্যান্ডেলিং চার্জ’ নামক এ ধরনের কোন ফি আছে কিনা আমার জানা নেই।

এ বিষয়ে অধাপক ড. জিয়া রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অভিযোগটি যেভাবে সেভাবে নয়। আমি প্রভোস্ট হওয়ার আগ থেকে এ চার্জ চালু ছিল। যখন শুনছি এটি নেওয়া ঠিক নয় তারপর আমিই টাকা হল ফান্ডে জমা দিয়ে দিছি। আর এই ধরনের ফি শুধু মাত্র জিয়াউর রাহমান হলে নয়, আরো কয়েকটি হলেও চালু আছে।

তবে আগামীতে এ অদ্ভুত ফি নেওয়া বন্ধ হবে কিনা- এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি অধ্যাপক জিয়া রহমান।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence