চবির উপ-উপাচার্য হওয়া কে এই অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন?

অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন ও চবি লোগো
অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন ও চবি লোগো  © ফাইল ছবি

আমেরিকা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করেনি। প্রকৃতপক্ষে মানুষের অধিকারই আমেরিকাকে প্রতিষ্ঠা করেছে। এমনটাই বলেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার। তবে বিগত দশকগুলোতে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি একেবারে তলানীতে এসে পৌঁছেছে। মানুষ হারিয়েছে তাঁদের বাকস্বাধীনতা।  মানবাধিকার সংগঠন 'অধিকারের' তথ্যমতে, ২০০৯-২০২৩ সালে দেশের প্রায় আড়াই হাজার নাগরিক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। আর মানুষের অধিকার লঙ্ঘনের সেই ফিরিস্তি নিয়ে ধারাবাহিক গবেষণা করে গিয়েছেন অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন। সম্প্রতি তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি চবি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে শিক্ষকতা করছেন।

ড. কামাল সুইজারল্যান্ডের জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সংস্থার উপর অ্যাডভান্সড মাস্টার্স এবং সিটি ইউনিভার্সিটি অফ হংকং এর এশিয়ান অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ বিভাগ থেকে 'বাংলাদেশে আওয়ামী সরকারের আমলে পুলিশের কার্যক্রমে মানবাধিকার বিপর্যয়' শিরোনামে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন ২০১৫ সালে। 

বিভিন্ন গবেষণায় গত ১৫ বছর ধরে স্বৈরাচার সরকারের বিভিন্ন অনিয়ম, মানবাধিকার লঙ্ঘন, গুম-খুন, দুর্নীতি ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি নিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জার্নালে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেন এ অধ্যাপক। বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের দায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পটভূমিতে তার গবেষণা নিবন্ধের ভূমিকা ছিল অন্যতম।

চবিতে গবেষক হিসেবেও সমাদৃত তিনি। ২০২২ ও ২০২৩ সালে চবির সমাজবিজ্ঞান অনুষদের শীর্ষ গবেষক নির্বাচিত হন। ২০২৩ সালের শ্রেষ্ঠ গবেষণা অ্যাওয়ার্ডের জন্যও মনোনীত হয়েছেন। এছাড়াও ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অফ সাইন্স এন্ড টেকনোলজির ক্রাইম অ্যান্ড জাস্টিস সেন্টার কর্তৃক ইয়াং রিসার্চার এওয়ার্ড পেয়েছেন। নবনিযুক্ত এ উপ-উপাচার্যের স্কোপাস ইনডেক্স জার্নালে ২৫টিরও বেশি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। 

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পুলিশ বাহিনীর আচরণ সর্বোচ্চ মানবাধিকার লঙ্ঘন। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর কার্যক্রম যে মানবাধিকার লঙ্ঘন তা নিয়ে ২০১৫ সালে এক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন ড. কামাল। গবেষণাটি "বাংলাদেশী পুলিশিংয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন: জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সুরক্ষার ক্ষমতা" শিরোনামে, ২০১৭ সালে স্প্রিন্গার ন্যাচার এর হিউম্যান রাইটস রিভিউ জার্নালে প্রকাশিত হয়।

এছাড়া বাংলাদেশের পুলিশী কার্যক্রমে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের উপর" বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত পুলিশী হত্যার দক্ষিণী দৃষ্টিভঙ্গি" শিরোনামে একটি বুক চ্যাপ্টার প্রকাশ করেন ২০১৮ সালে।

শেখ হাসিনার শাসনে সবচেয়ে ভয়াবহতার মধ্যে ছিলো জোরপূর্বক গুম ও খুন। মতের বিপরীত ব্যক্তিকে জোরপূর্বক গুম করে রাখতেন আয়নাঘরে। যা স্বৈরাচারের পতনের পর এর ভয়াবহতা উপলব্ধি করেছে দেশ ও বিশ্ববাসী। এ অধ্যাপক এসব জোরপূর্বক গুম, খুন নিয়ে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর আরেকটি গবেষণা পরিচালনা করেন।গবেষণাটি " বাংলাদেশী পুলিশিংয়ে অপহরণ এবং নিখোঁজ" অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস পুলিশিং: এ জার্নাল অফ পলিসি অ্যান্ড প্র্যাকটিস, ভলিউম ১৪, ইস্যু ৪, সেপ্টেম্বর ২০২০, পৃষ্ঠা ৬৪৩-৬৫৬ এ প্রকাশিত হয়। 

বাংলাদেশের গুম ও খুনের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাকে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরার জন্য তিনি নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন। 

এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ২০২১ সালে আরেকটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। যেটি, ২০২২ সালে ক্রিমিনোলোজি এন্ড ক্রিমিনাল জাস্টিস জার্নালে ‘‘বাংলাদেশে পুলিশিং অনুশীলনে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ফৌজদারি বিচার’’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়।

বাংলাদেশের মানবাধিকারকে মানবাধিকার সংগঠনের দৃষ্টিভঙ্গিতে আরো ভালোভাবে বুঝবার জন্য একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন, গবেষণাটি বিখ্যাত ডেভেলপমেন্ট পলিসি রিভিউ জার্নালে "মানবাধিকারের প্রতি এনজিওদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং বাংলাদেশে চ্যালেঞ্জ" শিরোনামে প্রকাশিত হয় ২০২২ সালে।

তিনি ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর বাংলাদেশের মানুষের মানবাধিকার শিক্ষা, রাজনৈতিক অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আরো একটি গবেষণা পরিচালনা করেন। উক্ত গবেষণাটি প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। 

এছাড়াও টেকসই উন্নয়নের জন্য পরিবেশ শিক্ষা, নারী অভিবাসীদের দুর্দশা, রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার'সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। 

এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক সম্পৃক্ততার মধ্যে তিনি বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম ইউনেস্কো জেলা ক্লাব এর সভাপতি, দক্ষিণ রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতির (SPSA) সদস্য, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সদস্য, পূর্ব এশিয়ান পুলিশিং স্টাডিজ ফোরামের সদস্য, এশিয়ান পুলিশ ফোরামের চেয়ারপারসন, গ্রিন ফিউচার বাংলাদেশের সভাপতি ও পরিবেশ মানবাধিকার আন্দোলন বাংলাদেশের সদস্য।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence