ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
কোথাও নেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা, ক্লাসে ফিরতেও ভয় পাচ্ছেন
- জুবায়ের হোসাইন, ঢাবি
- প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৪৬ PM , আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:০১ PM
১ম বর্ষে থাকাকালীন অসুস্থ থাকায় প্রোগ্রাম থেকে ছুটি নিতে গেলে এক ছাত্রলীগকর্মী রাজনৈতিক ক্ষমতাবলে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এবং ছুটি না দিয়ে সারাদিন প্রোগ্রাম করতে বলে। অশ্রুসিক্ত চোখে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে কথাগুলো বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় বর্ষের এক শিক্ষার্থী। তবে সেসময় ফুরিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি)। ক্যাম্পাসের কোথাও এখন ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মীদের দেখা মিলছে না। ভয় পাচ্ছে তারা ক্লাসরুমে ফিরতেও।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কেউই নেই ক্যাম্পাসে। গত ৫ আগস্টের পর থেকে কেন্দ্রীয় ও ঢাবির প্রধান নেতাকর্মীদের কন্টাক্ট নাম্বার ও হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ রয়েছে। দেখা যাচ্ছে না মধ্যম পর্যায়ের কোনো নেতা বা কর্মীকেও।
আন্দোলনের শুরু থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান করছিল ছাত্রলীগ। ১৪ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হলেও সংঘাতে জড়ায়নি দুপক্ষ। কিন্তু ১৫ তারিখের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে ছাত্রলীগ।
এতে করে আন্দোলনকারী অনেক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। ১৬ তারিখ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারে এবং ছাত্রলীগ অস্ত্র হাতে টিএসসিতে অবস্থান করলেও সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ধরনের সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি। ১৭ তারিখে একই সময়ে ঢাবির সকল হল থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদেরকে বের করে দেয় আন্দোলনকারীরা। পরবর্তীতে তারা শাহবাগসহ আশে পাশে অবস্থান নিলেও আর ফিরতে পারেনি ক্যাম্পাসে।
জুলাই আন্দোলনে ঢাবিতে বহিরাগতদের নিয়ে এসে এভাবেই হামলা চালায় ছাত্রলীগ
গত ৩ আগস্ট রাতে পরেরদিন মাঠে থাকার ঘোষণা দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তবে পরেরদিনও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদেরকে কোথাও দেখা যায়নি। ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লং মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে শেখ হাসিনার পতন হয়। সেদিন কোথাও কোথাও ছাত্রলীগের গুলাগুলির খবর শোনা গেলেও ঢাবি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মী হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যায়। সকল নেতাকর্মীর মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। একই সাথে খোঁজ নেই মধ্যম ও নিম্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরও।
এরপর ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ছাত্র জনতার উপর আক্রমণ, প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যাসহ নানা অভিযোগে কেন্দ্রীয় থেকে হল পর্যায়ের প্রায় সকল নেতা ও নেত্রীদের নামে মামলা করা হয় বলে জানা গেছে। ঢাবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে পালাতে গিয়ে বিমান বন্দরে আটক হন ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত পরবর্তীতে নিকুঞ্জ থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আরও পড়ুন: তবুও থামল না সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের রমরমা মাদকের কারবার
ছাত্রলীগের কয়েকজন মধ্যম পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিভাগগুলোতে শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করায় এবং আক্রমণাত্মক থাকায় ক্লাসে ফিরতেও ভয় পাচ্ছেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। তাদের ভাষ্য, ক্লাস শুরু হলেও তারা ক্লাসে ফিরতে পারবে না। বিভাগের সহপাঠী থেকে সিনিয়র এবং জুনিয়র সবাই তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান করছে এবং তাদের মধ্যে আক্রমণাত্মক মনোভাব বিরাজ করছে।
নাম না প্রকাশ করা স্বার্থে এক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, পরিস্থিতি ঠান্ডা না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরতে পারবো না। আমাদের মাথার উপরে কোনো ছাদ নাই। এখন ক্লাসে গেলেও সবাই আমাদেরকে প্রহার করবে। তাই সব কিছু শিথিল হলেই ক্লাসে ফিরবো। সেক্ষেত্রে দুই বছর গ্যাপ দিতে হলেও আমার সমস্যা নাই।
আরেকজন ছাত্রলীগ কর্মী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়তো আর পড়াই হবে না। দেশের বাইরে যাওয়ার চিন্তা করছি। অলরেডি হয়তো আমার নামে মামলাও হয়ে গেছে। বিভাগের সকল শিক্ষার্থীরা মিলে আমাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছে বিভাগ থেকে। দুই এক বছরের মধ্যে ক্যাম্পাসে ফিরতে পারবো বলে মনে হচ্ছে না।