ঢাবির এক নিয়োগে আদালতের ৪ বার স্থগিতাদেশ!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মনোবিজ্ঞান বিভাগে স্টোর-কিপার পদে একটি নিয়োগকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত ৪ বার স্থগিতাদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে বিষয়টি নিয়ে মুখোমুখি বক্তব্য দিচ্ছেন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন এবং রিটকারী শিক্ষক অধ্যাপক ড. একেএম রেজাউল করিম।

মনোবিজ্ঞান বিভাগের স্টোর-কিপার পদে একটি নিয়োগে চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে হাইকোর্টে রিট করলে আদালত ২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল ৬ মাসের জন্য  নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ দেয়। পরে রিটকারী শিক্ষক অধ্যাপক ড. একেএম রেজাউল করিমের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর ১ বছরের জন্য এবং ২০২৩ সালের ১৫ অক্টোবর পুনরায় আরও ১ বছরের জন্য স্থগিতাদেশের সময় বৃদ্ধি করেন। যার সময়সীমা চলতি বছরের ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত কার্যকর থাকার কথা।

তবে এরমধ্যেই গত ২৯ জুন পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে নিয়োগ বোর্ডের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। পরে রিটকারী শিক্ষক অধ্যাপক একেএম রেজাউল করিম বিষয়টিকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এবং উপাচার্যকে চিঠির মাধ্যমে অবহিত করেন। সমাধান না পেয়ে পুনরায় আদালতের দারস্থ হলে নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য গঠিত কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আদালত ২ সপ্তাহের জন্য নিয়োগের কার্যক্রম স্থগিত করে। 

বিষয়টি নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে মন্তব্য করেছেন চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামাল উদ্দিন এবং রিটকারী শিক্ষক অধ্যাপক ড. একেএম রেজাউল করিম। কামাল উদ্দিনের দাবি, অধ্যাপক রেজাউলের অসৎ উদ্দেশ্য ছিল বলেই নিয়োগ পরীক্ষার আগে প্রার্থীদের তালিকা নিয়েছেন। আর বর্তমানে গঠিত নতুন নিয়োগ কমিটি বৈধ। অপরদিকে রেজাউল করিমের দাবি, নিয়োগে দুর্নীতি হতে যাচ্ছিলো দেখে তিনি তালিকা নিয়ে রেখেছিলেন। আর চেয়ারম্যান বর্তমানে যে কমিটির অধীনে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে চেয়েছেন সেটি অবৈধ।

জানা যায়, ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর বিভাগটির স্টোরকিপার নিয়োগের জন্য অধ্যাপক ড. একেএম রেজাউল করিমসহ মোট পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরে ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারির নিয়োগ সংক্রান্ত সিএন্ডডি কমিটির সভায় ২ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। 

কিন্তু পরীক্ষার আগে অধ্যাপক রেজাউল করিম প্রার্থীদের তালিকা নিয়ে নিলে সেই নিয়োগ স্থগিত করেন বিভাগের চেয়ারম্যান। পরে ৩ ফেব্রুয়ারি অ্যাকাডেমিক কমিটি ও ২৩ ফেব্রুয়ারি সিএন্ডডি কমিটির সভায় অধ্যাপক রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে স্টোরকিপার পদে প্রার্থীদের নামের তালিকা বিভাগীয় প্রধানকে না জানিয়ে নেয়ার অভিযোগ এনে সেই নিয়োগের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামাল উদ্দিন। এ ঘটনায় অধ্যাপক রেজাউল করিমের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো সমাধান না আসা পর্যন্ত ‘নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে এবং নিয়োগ কমিটিও পুনর্গঠিত হবে না’ বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এরপর ২০২২ সালের ২ মার্চ সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানকে একটি চিঠি দেন বিভাগের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন। সেখানে তিনি নিয়োগ কমিটি থেকে রেজাউল করিমকে বাদ দিয়ে নতুন একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন। ওই চিঠিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ৩ ফেব্রুয়ারির অ্যাকাডেমিক কমিটির সভায় ১৭ সদস্যের মধ্যে ছয়জন শিক্ষক দ্বিমত পোষণ করেন। যদিও সভা সূত্র থেকে জানা যায়, সেখানে উপস্থিত আটজন শিক্ষক দ্বিমত পোষণ করেন। ভিসিকে দেওয়া ওই চিঠিকে সেসময় ‘মিথ্যা এবং প্রতারণামূলক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন বিভাগের বেশ কয়েকজন শিক্ষক।

অধ্যাপক ড. একেএম রেজাউল করিম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমার অবস্থান ছিল। চেয়ারম্যানের সাথে সমঝোতায় রাজি না হওয়ায় আমাকে বিভাগের ক্লাস থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল। আদালত রায় দিলেও রায় কার্যকর করতে টালবাহানা করেন অধ্যপক কামাল। কিন্তু আমি একা নই, দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিভাগের অন্য শিক্ষকগণও ভূমিকা রাখছেন। কর্তৃপক্ষ বিধি মোতাবেক সমাধান না করায় বারবার আমাদেরকে আদালতের দারস্থ হতে হয়েছে। আমি এখনও আশাবাদী বর্তমান প্রশাসন এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।  

বার বার আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবার আদালতে যাওয়ার পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বিষয়গুলো অবগত করেছি। প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। উলটো দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায় আমাকে মানসিকভাবে হেনস্তা করা হয়েছিল।

মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামাল উদ্দিনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, রিপোর্ট হওয়া উচিত একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হয়ে একটা স্টাফ নিয়োগের ক্ষেত্রে তিন-চার বার আদালতে মামলা করেন, তাঁর উদ্দেশ্য কি? আদালতের দৃষ্টিতে যখন কোন বিষয় নিয়ে সন্দেহ হয় তখন আদালত দুই সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দেয়। আদালতকে যেভাবে বোঝানো হয়েছে আদালত হয়ত সেভাবেই নির্দেশনা দিয়েছেন। সকল তথ্য উপাত্ত সঠিকভাবে তুলে ধরা হলে হতে পারে দুই সপ্তাহ পরে আদালত এই স্থগিতাদেশ তুলে দিবেন। 

স্থগিতাদেশ থাকা অবস্থায়ও কেন নিয়োগ বোর্ড আয়োজন করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়োগ বোর্ড আয়োজনের বিষয়টি উপাচার্যের অনুমতিক্রমেই করা হয়েছে। বিভাগের আরও অনেক শিক্ষক আছেন তারা এ বিষয়ে কিছু বলছেন না। একমাত্র তিনিই অর্থ খরচ করে বার বার আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নেন। নিশ্চয়ই এখানে তার কোনো উদ্দেশ্য আছে। 

এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন এবং রিটকারি শিক্ষক অধ্যাপক ড. একেএম রেজাউল করিম বিষয়টি নিয়ে ভালো জানবেন। তাঁদের সাথে কথা বলুন।’

তবে আদালতের স্থগিতাদেশ থাকা সত্ত্বেও উপাচার্যের অনুমতিক্রমে বোর্ড আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য জানান, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি এখনও তেমন কিছু জানি না। খোঁজ নিয়ে কথা বলতে হবে।’

 

সর্বশেষ সংবাদ