বিল উত্তোলন জটিলতায় গবেষণা প্রকল্পে অনীহা রাবি শিক্ষকদের

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

প্রকল্প পাওয়ার পর গবেষণার বিল উত্তোলন নিয়ে জটিলতায় পড়ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষকরা। এ কারণে গবেষণা প্রকল্প নেওয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন তারা। অথচ আগে কেউ কেউ গবেষণা বাজেট ঘাটতির কথা বলতেন। আর এখন গবেষণায় ব্যয় না হওয়ায় প্রতিবছর বরাদ্দকৃত অর্থের বড় অংশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছে ফেরত যাচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে কিছু প্রস্তাব করেছেন তারা।

গবেষণা খাতে খরচের হিসাব মেলানো একটি সাধারণ সমস্যা জানিয়ে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন ড. মো. ইলিয়াস হোসাইন বলেন, এ খাত, সে খাত নানাবিধ হিসাবনিকাশে জটিলতা হচ্ছে। এছাড়া গবেষণায় বরাদ্দের টাকার তুলনায় খরচ বেশি হচ্ছে। একজন রিসার্চ ডিরেক্টর দরকার, যে এগুলোর দায়িত্বে থাকবে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত ইউজিসির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১০ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ থেকে ২০২১-২২ পর্যন্ত পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে শুধু ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা বরাদ্দের তুলনায় বেশি অর্থ ব্যয় করেছিল। এছাড়া বাকি চার অর্থবছরেই ৪০-৭০ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ অব্যয়িত ছিল।

২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১০ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ থেকে ২০২১-২২ পর্যন্ত পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে শুধু ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা বরাদ্দের তুলনায় বেশি অর্থ ব্যয় করেছিল। এছাড়া বাকি চার অর্থবছরেই ৪০-৭০ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ অব্যয়িত ছিল।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে মোট বরাদ্দ ছিল ৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এর বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয়টি ব্যয় করেছিল ১ কোটি ২৫ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। অব্যয়িত ছিল প্রায় ৭০ দশমিক ৩৮ শতাংশ অর্থ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং প্রকৃত ব্যয় ছিল ১ কোটি ৯৯ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। 

এ বছরে অব্যয়িত ছিল ৫৭ দশমিক ৫২ শতাংশ অর্থ। ২০২০-২১ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৫ কোটি টাকা এবং প্রকৃত ব্যয় ছিল ২ কোটি ৭২ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। ব্যয় করতে পারেনি ৪৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৮ কোটি টাকা এবং প্রকৃত ব্যয় ছিল ৪ কোটি ৬৪ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। ব্যয় হয়নি ৪১ দশমিক ৯০ শতাংশ অর্থ।

গবেষণার বিল উত্তোলনে বিভিন্ন জটিলতা, গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার সরঞ্জাম সরবরাহে প্রশাসনের ব্যর্থতা থাকায় প্রকল্প হাতে নিতে অনাগ্রহের অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ গবেষণা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। 

গবেষণার প্রক্রিয়া আরো সহজ হওয়া উচিত জানিয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব বলেন, যারা প্রকল্পের জন্য আবেদন করেন, তাদের চিন্তা থাকে গবেষণায়। পেপার ওয়ার্ক করার সঙ্গে সব ডকুমেন্টস প্রস্তুত রাখা এক ধরনের জটিলতা। কত শতাংশ ভ্যাট, ট্যাক্স কত টাকার ওপরে গেলে টেন্ডারে যেতে হবে, কত কমে গেলে যেতে হবে না, কোন আইটেম রিসার্চ গ্রেন্টের মাঝে থাকতে পারে, কোনটায় পারে না; এ ব্যাপারে পরিষ্কার একটা নির্দেশনা থাকা দরকার।

এ অধ্যাপকের ভাষ্য, একটা সুনির্দিষ্ট পরামর্শ হলো- এখানে আরেকটা পক্ষ দরকার। সেটা স্টোর কিপার। যারা আমার পরামর্শ অনুযায়ী চলবে, তারাই কাগজপত্র প্রস্তুত করবে। আমি যখন প্রজেক্ট সাবমিট করব তখন ওই কাগজগুলোর সাথে এটাও সাবমিট করব। তখন স্বচ্ছতাও নিশ্চিত থাকে। 

তিনি বলেন, এমনটি হলে গবেষণায় গতি আসে। যিনি গবেষণা করবেন, তাকে এ সব বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে না। প্রক্রিয়াটা তাহলে অনেক সহজ হয়ে যাবে। আমাদের গবেষণাতেও আগ্রহ বাড়বে।

প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. খালেদ হোসাইন উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, মূলত আমাদের গবেষণার আগ্রহ কমছে। তবে বিল ভাউচারেও ঝামেলা হচ্ছে, অস্বীকার করা যাবে না। এটা ছোট সমস্যা। আলাদা একটা বিভাগ কাজ করলে প্রক্রিয়াটা সহজ হয়ে যেত।

শিক্ষকদের দাবি গবেষণার বিল উত্তোলনের কাজগুলো সম্পন্ন করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা সেল বা অফিস থাকা দরকার। গবেষণা সেল চালু হওয়ার কথা থাকলেও এখনো তা আলোর মুখ দেখেনি। গবেষকরা প্রস্তাব করছেন, গবেষণা প্রকল্পের কাজগুলো একজন অধ্যাপকের অধীনে বাস্তবায়ন হবে। গবেষকরা অনুমোদন পেলে সহজে এ সেলের মাধ্যমে তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা চলে যাবে। ফলে শিক্ষকরা গবেষণায় সময় দিতে পারবেন। এতে স্বচ্ছতাও নিশ্চিত হবে।

আরো পড়ুন: টিউশন মিডিয়ার ফাঁদে টাকা খোয়াচ্ছেন কুবি শিক্ষার্থীরা

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মো. সাখাওয়াত হোসোইন বলেন, আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, গবেষণায় বরাদ্দকৃত টাকা ফেরত যাচ্ছে কেন? আমাদের গবেষণার আগ্রহ কমছে কেন? তবে আলাদা আলাদা খাতে হিসাব মিলাতেও সমস্যা হচ্ছে। বিল ভাউচারের স্বচ্ছতাও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এখানে আলাদাভাবে লোক রাখা উচিত, যারা অফিসিশিয়াল কাজগুলো করবে। আর গবেষকরা গবেষণায় সময় দেবে।

গবেষণা সেল তৈরি ও প্রকল্পের বিল উত্তোলনের সমস্যা উত্তরণে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, সমস্যাগুলো সমাধানে প্রয়োজনে ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমরা পরামর্শ করে নেব। যতটুকু সম্ভব, সহজীকরণের চেষ্টা করা হবে। 

তিনি আরও বলেন, শিক্ষকের কাজ দু’টি- শিক্ষাদান ও গবেষণা। গবেষণার বিকল্প নেই। কিন্তু প্রতিনিয়ত শিক্ষকদের গবেষণায় আগ্রহ কমছে, যা আশঙ্কাজনক। গবেষণার পাশাপাশি দক্ষ ও পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থাপনার সামর্থ্য থাকতে হবে। কখনো হাল ছাড়া যাবে না।


সর্বশেষ সংবাদ