১৮ হলের ১১০ দোকানের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছে ঢাবি

১৮ হলের ১১০ দোকানের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছে ঢাবি
১৮ হলের ১১০ দোকানের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছে ঢাবি  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ১৮টি আবাসিক হলের প্রায় ১১০টি দোকানের বছরের পর বছর বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করতে হয় না। হল সংলগ্ন এসব দোকানগুলো ভাড়া পরিশোধ করলেও তাদের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, দোকানগুলোতে বিদ্যুৎ বিলের ভর্তুকির বিষয়টি তাদের নজরে আছে। এতো বছর ভর্তুকি দিলেও এসব দোকানগুলোতে তারা এখন সাব মিটার স্থাপনের কথা ভাবছে।

ছেলেদের ১৩টি হল ও মেয়েদের ৫টি হল ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি হলের দোকানগুলোতে কোনো পৃথক বিদ্যুতের মিটার নেই। হল সংলগ্ন এসব দোকানগুলোতে রয়েছে মুদি, স্ন্যাক বার, স্টেশনারিসহ বিভিন্ন খাবারের স্টল।

হলের দোকানগুলো থেকে বিদ্যুৎ বিল নেওয়া নিয়ে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি দোকানে সাব মিটার স্থাপন করার মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল আদায় করা সম্ভব হবে। -অধ্যাপক ইকবাল, আহ্বায়ক, প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটি

এসব দোকানগুলোতে কমপক্ষে ৮০টি রেফ্রিজারেটর, বিভিন্ন ধরনের জুস তৈরির জন্য ১০০টিরও বেশি ব্লেন্ডার, ৪০টি ফটোকপিয়ার, প্রিন্টার এবং ২০টি ব্যক্তিগত কম্পিউটারসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক মেশিন রেখেছেন।

হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে সবচেয়ে বেশি রেফ্রিজারেটরের স্টল পাওয়া গেছে। এছাড়া, হল ও ক্যাম্পাসের অন্যান্য স্থানে ওয়াশিং মেশিন এবং ভেন্ডিং মেশিন বসানো প্রতিষ্ঠানও বিনামূল্যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে।

অন্তত ২০ জন দোকান-মালিকের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের দোকানে বিদ্যুতের মিটার নেই বলে আলাদাভাবে তারা বিলও পরিশোধ করছেন না। প্রতিটি দোকানে বিদ্যুতের মিটার স্থাপন করে দিলে তারা বিল পরিশোধ করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন।

হল সংলগ্ন এসব দোকানগুলোর সবচেয়ে সুবিধাভোগী আবাসিক শিক্ষার্থীরা। প্রশাসন বলছে, তারা শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করেই এসব দোকানগুলো থেকে আলাদাভাবে বিদ্যুৎ বিল নিচ্ছেন না। বিদ্যুৎ বিল নিলে খাবারের মান ও দাম দুটোতেই প্রভাব পড়তে পারে। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, এসব দোকানগুলোর দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে বাইরের দোকানের দ্রব্যমূল্যের খুব একটা পার্থক্য নেই।

হলের দোকানে বেশিরভাগ জিনিসপত্রের দাম ক্যাম্পাসের বাইরের দোকানের মতোই। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের জন্য অর্থ প্রদান করা উচিত নয়। -ভর্তুকি তুলে দেওয়ার পক্ষে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ

শিক্ষার্থীদের অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের অনুসন্ধানে। ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী এলাকা আজিমপুর, কাঁটাবন, নিউমার্কেটের অন্তত ৫০টির অধিক দোকান ঘুরে দেখা গেছে, দোকানে বিস্কুট, কেক, মিষ্টি, কফি, চা, বিভিন্ন পানীয়, শ্যাম্পু, টুথপেস্ট, সাবান এবং কিছু নিশ্চল পণ্যের মতো অন্তত ৩০টি জিনিসের দামের সাথে হলের জিনিসের মূল্যে কোনো পার্থক্য পাওয়া যায়নি।

মাস্টারদা সূর্য সেন হলের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সারজিল সাজিদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তুকি দিচ্ছে শিক্ষার্থীদের টাকায়। কিন্তু, শিক্ষার্থীরাই দেখবেন অবহেলিত হচ্ছে। একটা সময় ছিলো যখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সকল কিছুর মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেই পদ্ধতিটা ফিরিয়ে এনে পূর্ণ বাস্তবায়ন করা এখন সময়ের দাবি।

কবি জসীমউদ্দীন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. শাহীন খান বলেন, প্রতিমাসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দোকানগুলোর হয়ে মোটা অঙ্কের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছে। শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে দোকানগুলো থেকে বিদ্যুৎ বিল নেওয়া হয় না। যাতে খাবারের মূল্য শিক্ষার্থীদের অনুকূলে থাকে। এরপরও যদি দোকানের খাবারের মান নিয়ে শিক্ষার্থীদের কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. নাজমুন নাহার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, হল প্রশাসন থেকে প্রতিমাসে বাড়তি বিদ্যুৎ বিলের ভর্তুকির বিষয়ে উপাচার্য মহোদয় খুবই সচেতন। এ বিষয়ে প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিংয়ে আলাপ-আলোচনা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ বিল নেওয়ার মাধ্যমে মোটা অঙ্কের অর্থ সাশ্রয় করতে পারে, এটি সত্য। কিন্তু একইসাথে আমাদের মনে রাখতে হবে যে কোনো অতিরিক্ত চার্জ দোকান মালিকদের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে।

ক্যান্টিন, মসজিদ ও সেলুনের হয়ে প্রতি মাসে অন্তত ৫০ হাজার টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে প্রশাসন। সে হিসেবে ১৮টি হলের এসব দোকান-ক্যান্টিনের পেছনে মাসে অন্তত ৯ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের।

এতদিন এসব দোকান-ক্যান্টিনের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করলেও দাম-মান নিয়ে অসন্তোষের কথা উল্লেখ করে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ভর্তুকি তুলে নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।

জসিমউদ্দীন হলের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, হলের দোকানে বেশিরভাগ জিনিসপত্রের দাম ক্যাম্পাসের বাইরের দোকানের মতোই। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের জন্য অর্থ প্রদান করা উচিত নয়। তিনি বলেন, ফ্রিজে রাখা পানীয় জিনিসের দাম এবং অন্যান্য প্যাকেটজাত খাবারের দাম সারাদেশে একই। যে ক্যান্টিনগুলো আমাদের খাবার তৈরি করে সেগুলোতে ভর্তুকি দেওয়া উচিত, কিন্তু দোকানে নয়।

রমজানে আকাশচড়া খাবারের দাম, ভোগান্তিতে ঢাবি হলের শিক্ষার্থীরা

বিদ্যুতের বিলে ইউনিট প্রতি ভিন্নতা রয়েছে। এগুলোকে তিনভাগে ভাগ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকা ও বাণিজ্যিক এলাকা। তিন এলাকার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ইউনিট প্রতি সবচেয়ে কম দাম। আর বাণিজ্যিক এলাকায় সবচেয়ে বেশি।

শুধু দোকান নয়, হলগুলোর ক্যান্টিন, মসজিদ ও সেলুনেরও নিজেদের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে দোকান, ক্যান্টিন, মসজিদ ও সেলুনের হয়ে প্রতি মাসে অন্তত ৫০ হাজার টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে প্রশাসন। সে হিসেবে ১৮টি হলের এসব দোকান-ক্যান্টিনের পেছনে মাসে অন্তত ৯ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের।

প্রতিমাসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দোকানগুলোর হয়ে মোটা অঙ্কের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছে। শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে দোকানগুলো থেকে বিদ্যুৎ বিল নেওয়া হয় না। -অধ্যাপক শাহীন খান, প্রভোস্ট, কবি জসীমউদ্দীন হল

প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইকবাল রউফ মামুন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, হলের দোকানগুলো থেকে বিদ্যুৎ বিল নেওয়া নিয়ে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি দোকানে সাব মিটার স্থাপন করার মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল আদায় করা সম্ভব হবে। আমরা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি কার্যকরে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, হলের প্রতিটি দোকানে মোটা অঙ্কের বিদ্যুৎ বিলের ভর্তুকি প্রসঙ্গে আমাদের আলাপ-আলোচনা হয়েছে। শুধু দোকানের বিদ্যুৎ বিল নয়, যারা অবৈধভাবে বাড়িভাড়া দিয়েছে, তাদের কেউ আইনের আওতায় আনা হবে। এ ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা গেলে বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্নভাবে উপকৃত হতে পারে।


সর্বশেষ সংবাদ