সাঁতার জানার পরও কেন সুইমিংপুলে ডুবে মারা গেলেন ঢাবি ছাত্র সোহাদ?

নিহত মো. সোহাদ হক ও ঢাবি লোগো
নিহত মো. সোহাদ হক ও ঢাবি লোগো  © সম্পাদিত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সুইমিংপুলে সাঁতার কাটতে গিয়ে পানিতে ডুবে মো. সোহাদ হক (১৯) নামের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষ ও মহসিন হলের আবাসিক বাসিন্দা। সোমবার দুপুর ২টায় ঢাবির কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ সংলগ্ন সুইমিংপুলে এ ঘটনা ঘটে।

ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্পের সহকারী ইনচার্জ মো. মাসুদ মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সোহাদের মরদেহটি মর্গে রাখা হয়েছে। ঘটনাটি শাহবাগ থানা পুলিশ তদন্ত করছে। 

নিহত সোহাদের বাড়ি বগুড়া জেলায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগের ১ম বর্ষের এ শিক্ষার্থী থাকতেন হাজী মোহাম্মদ মহসিন হলে। সোহাদের সাঁতার জানা ছিল বলে নিশ্চিত করেছেন তাঁর সহপাঠীরা। তবে কীভাবে পানিতে তলিয়ে গেছে তা বলতে পারছেন সংশ্লিষ্ট কেউই। ফলে নিহত শিক্ষার্থীর সাঁতার জানার পরও মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

আরও পড়ুন: বন্ধুদের সঙ্গে সুইমিংপুলে গোসল করতে গিয়ে ঢাবি ছাত্রের মৃত্যু

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বন্ধুদের সঙ্গে সুইমিং পুলে সাঁতার কাটতে এসে পুলের ওপর (লাফ দেওয়ার স্থান) থেকে লাফ দেন নিহত শিক্ষার্থী। লাফ দেওয়ার পর পুলের পানিতেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন তিনি। এরপর পুলের পাশে থাকা সহপাঠী ও কর্মচারীরা উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) নিয়ে সেখানকার চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করে।

ঘটনার সময় সোহাদের পাশে উপস্থিত থাকা তার এক সহপাঠী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সোহাদ সাঁতার জানতো। সে সুইমিংপুলের একপাশ থেকে সাঁতার কেটে অন্যপাশে যাওয়ার সময় পানিতে হাবুডুবু খেতে থাকে। তার অ্যাজমার সমস্যা ছিল। আমি দ্রুত ওর কাছে গিয়ে ওকে তোলার চেষ্টা করলে ও আমাকে ধরেই নিচে চলে যাচ্ছিলো আমি অনেক চেষ্টা করেও ওকে তুলতে পারিনি। পরে সবাইকে ডেকে ওকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে আসি কিন্তু বাঁচাতে পারলাম না।

বিষয়টি নিয়ে ঢাবি শিক্ষার্থী মোল্লা তৈমুর রহমান জানান, সোহাদ তার জুনিয়র। সুইমিং পুলে গোসল করার সময় যখন পাড়ে ভিড় দেখেন, তখন সহপাঠীরাই তার পেট চাপাচাপি করে পানি বের করার চেষ্টা করছিল। ওখানকার কোনো স্টাফ বা কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের সাহায্য করেনি। অচেতন অবস্থায় সহপাঠীরা তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে চিকিৎসক বেলা ২টায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঢাবির শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের পরিচালক শাহজাহান আলী নিহত শিক্ষার্থীর সহপাঠীদের বরাত দিয়ে বলছেন, নিহত শিক্ষার্থী পুলে সাঁতার কাটার সময় ডুবে যেতে থাকলে তার সাথে থাকা সহপাঠীরা টেনে তোলে তাঁকে। এরপর তিনি এবং উপস্থিত কর্মকর্তারা মিলে নিহত শিক্ষার্থীর পেটে চাপ দিয়ে পানি বের করার চেষ্টা করে এবং প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

আরও পড়ুন: পুকুরের পানিতে ডুবে ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু

শাহজাহান আলী বলেন, নিহতের সহপাঠীদের সাথে কথা বলে ওই শিক্ষার্থীর অ্যাজমা আক্রান্ত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ঢামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক শাকিল মাহমুদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আগে থেকে কোনো ব্যক্তির অ্যাজমা থাকলে সাঁতার কাটার সময় হঠাৎ তীব্র শ্বাসকষ্ট হয়ে পানিতে ডুবে গিয়ে মৃত্যু হতে পারে আক্রান্ত ব্যক্তির। এছাড়া সাঁতার কাটতে গিয়ে মৃত্যু আরো অনেকগুলো কারণে হতে পারে। যার মধ্যে হৃদ্‌যন্ত্রের অনিয়মিত স্পন্দন, যাকে আমরা মেডিকেলের ভাষায় বলি আরিথ্রিমিয়া।

এ চিকিৎসক বলছেন, যখন কেউ অনেক বেশি শারীরিক অনুশীলন বা পরিশ্রম করে তখন মানুষের শ্বাসনালি সরু হয়ে যায় বা চেপে যায়। যার কারণে তীব্র শ্বাসকষ্ট বা কাশির সৃষ্টি হয়।এটি শারীরিক যেকোনো অনুশীলনের সময় সময় বা পরে হতে পারে, যাকে এক্সারসাইজ ইনক্লুড অ্যাজমা বলা হয়।

হাজী মোহাম্মদ মুহসিন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মাসুদুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমি মৃত্যুর সংবাদ শোনার সাথে সাথেই ঢাকা মেডিকেলে সোহাদকে দেখতে যাই। তদন্তের সময় থেকে এখন অবধি আমি তার পাশে আছি। বগুড়া থেকে তার বাবা মা এসেছে তাদেরকে নিয়ে আমি শাহবাগ থানায় এসেছি। আমরা এবং তারা বাবা মা চাচ্ছে যাতে পোস্ট মর্টেম না করা হয়। তাই আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, আমি যতটুকু শুনেছি,  ছেলে হিসেবে সে অনেক ভালো ছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড.মাকসুদুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সোহাদের বাবা-মা সহ শাহবাগ থানায় এসেছি। তার বাবা মা পোস্ট মর্টেম করতে অনিচ্ছুক। থানার তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হলে, হল প্রভোস্টের সাথে পরামর্শের মাধ্যমে মৃত লাশ গোসল করিয়ে ঢাবির মুহসিন হলের মাঠে ১ম জানাজার ব্যবস্থা করব। আনুমানিক সাড়ে ৭টার দিকে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করছি। এরপর নিহত শিক্ষার্থীর নিজ বাসা বগুড়ায় তার দাফন সম্পন্ন হবে বলেও জানান তিনি।

 

সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence