ঢাবিতে ঐতিহাসিক পতাকা উত্তোলন দিবস পালিত

ঢাবিতে ঐতিহাসিক পতাকা উত্তোলন দিবস পালিত
ঢাবিতে ঐতিহাসিক পতাকা উত্তোলন দিবস পালিত  © সংগৃহীত

দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে স্মরণীয় করে রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ঐতিহাসিক পতাকা উত্তোলন দিবস পালিত হয়েছে।

আজ শনিবার (২ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন সংলগ্ন বটতলা পাদদেশে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল ও উপ উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। এ সময় সংগীত ও নৃত্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন।

উপ উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদের সভাপতিত্বে প্রধান ‌অতিথির বক্তব্যকালে  উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ২রা মার্চ পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমেই বিশ্বকে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের অস্তিত্ব জানান দেয়া হয়েছিলো। যে ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল তার নেতৃত্বে ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধ ও দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পতাকা উত্তোলন দিবসের তাৎপর্য অপরিসীম।

তিনি বলেন, আজ ঐতিহাসিক পতাকা উত্তোলন দিবস। এই পতাকা উত্তোলনের তাৎপর্য হল এটি একটি দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। সুতরাং, একটি দেশের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত হয়ে যায় ১৯৭১ সালে, এটি পাকিস্তানি শাসকদের জন্য ছিল একটি মৃত্যু পরোয়ানা। এটি বুজতে পেরেই পাকিস্তানি সরকার ক্র্যাকডাউনের পরিকল্পনা করে। অন্যদিকে শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে নিয়ে গিয়েছেন মুক্তির সংগ্রামে দিকে।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হল ভুঁইয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার ও কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির প্রমুখ।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় এক ছাত্রসমাবেশে ছাত্রনেতা আ স ম আব্দুর রবের নেতৃত্বে ডাকসু নেতারা বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। সেই পতাকার মাঝখানে ছিল বাংলাদেশের মানচিত্র।

আমাদের জাতীয় পতাকা স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা ও গৌরবের স্মারক। বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে এটি অর্জিত হয়। বর্তমানে আমাদের যে জাতীয় পতাকা রয়েছে এর আগে মুক্তিযুদ্ধে আমাদের অন্য একটি পতাকা ছিল। এতে সবুজ জমিনের ওপর লাল বৃত্তের মাঝখানে বাংলাদেশের সোনালি মানচিত্র খচিত ছিল। এ-পতাকাটির ডিজাইন করেন শিবনারায়ণ দাশ। পতাকাটি ১৯৭১ সালে ২রা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলাসংলগ্ন কলাভবনে ডাকসু (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) নেতৃবৃন্দ প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলন করেন। পতাকাটি এরপর বাঙালির মুক্তির প্রতীকে পরিণত হয়।

৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) শোভা পায় এ পতাকা। ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসে পাকিস্তানের পতাকার পরিবর্তে সারাদেশে অফিস-আদালতে, ঘরে ঘরে ও যানবাহনে শোভা পায় এ পতাকা। ঐ দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসায় এ পতাকা উত্তোলন করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ দিবসের উদ্বোধন করেন। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস জুড়ে এ পতাকাই মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাকামী বাঙালি জাতিকে প্রেরণা জোগায়।

স্বাধীনতার পর পতাকা থেকে মানচিত্রটি বাদ দিয়ে পতাকার মাপ ও রঙ নির্ধারণ করে এর পরিমার্জন করা হয়, যা আজ বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। সবুজ আয়তক্ষেত্রের মাঝখানে লাল বৃত্ত, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার এই রূপটি ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি সরকারিভাবে গৃহীত হয়।


সর্বশেষ সংবাদ