রাবিতে দু’বছরে শিক্ষার্থীসহ চার মৃত্যু, দায় নেয় না কেউ

রাবিতে নির্মাণাধীন এ এইচ এম কামারুজ্জামান হল
রাবিতে নির্মাণাধীন এ এইচ এম কামারুজ্জামান হল  © টিডিসি ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) নির্মাণাধীন এ এইচ এম কামারুজ্জামান হলে কাজ করছিলেন ইউনুস আলী নামের এক নির্মাণ শ্রমিক। একপর্যায়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় তার। ঘটনাটি গত বছরের ২৬ অক্টোবরের। এর আগে ২০২২ সালের ৩১ মে নির্মাণাধীন অ্যাকাডেমিক ভবনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নির্মাণ শ্রমিক সাগর মারা যান। 

একই বছরের ১ ফেব্রুয়ারি ট্রাকের ধাক্কায় নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদ হাবিব হিমেল। তার আগে ৮ জানুয়ারি কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের সংস্কার কাজে ছাদ থেকে পড়ে আরেক শ্রমিক আলেক আলীর মত্যু হয়। দু’বছরের কম সময়ে তিন শ্রমিক ও এক শিক্ষার্থীর প্রাণ ঝরে গেলেও এসব ঘটনায় নির্মাণ সংশ্লিষ্ট বা কর্তৃপক্ষ, দায় নেয়নি কেউ।

যদিও শ্রমিক মৃত্যুর এসব ঘটনায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা সরঞ্জামাদির অভাব ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলাকে দায়ী করেছে বিশ্ববিদ্যালয়র ছাত্র সংগঠনগুলো। আর শ্রমিকদের অভিযোগ, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী না করেই তাদের দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। জীবন রক্ষার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয় না প্রতিষ্ঠানগুলো। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনেরও কোনো চিন্তা নেই।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী এহসানুল হক মিলন বলেন, প্রতি বছরই নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এসব তাজা প্রাণ ঝরে যাওয়ার পেছনে নির্মাণ শ্রমিকদের সাবধানতার অভাব ছিল, এতে সন্দেহ নেই। তবে এ মৃত্যুগুলোর পেছনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনা এড়িয়ে গেলেও চলবে না। এসব মৃত্যুর পেছনে তাদেরও দায় আছে। 

শ্রমিক মৃত্যুর এসব ঘটনায় ভবনগুলোর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা সরঞ্জামাদির অভাব ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলাকে দায়ী করেছে বিশ্ববিদ্যালয়র ছাত্র সংগঠনগুলো। আর শ্রমিকদের অভিযোগ, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী না করেই তাদের দিয়ে কাজ করাচ্ছেন।

আরেক শিক্ষার্থী ফয়সাল আলম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেখানে শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে উদাসীন, সেখানে নির্মাণ শ্রমিকদের দেখভালের জন্য তারা দায়িত্বশীল কীভাবে হবেন? ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো অধিক মুনাফার লোভে অনেক সময়ই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সরঞ্জামের ব্যবস্থা করে না। ফলে মৃত্যুর ঘটনাগুলো পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠে এক শ্রমিকের মৃত্যুর পর কেন আরেক শ্রমিকের মৃত্যু হলো? একজনের মৃত্যুর পর কেন তারা সতর্কতা অবলম্বন করলেন না? এখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ঠিকাদারদের সমান দায়ভার রয়েছে। এ মৃত্যুর জন্য তাঁরাই দায়ী।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ডিপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, যত ধরনের নিরাপত্তার প্রয়োজন, তার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভবন নির্মাণকাজের কারিকুলামের বাইরে গিয়ে কাজ করায় সাগর নামের শ্রমিকের অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। শ্রমিকদের আরও প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বাড়াতে চেষ্টা করছে কোম্পানি।

আরো পড়ুন: ঢাবির ট্রান্সজেন্ডার বা হিজড়া কোটা নিয়ে বিতর্ক, ব্যাখ্যা দিল কর্তৃপক্ষ

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনা কাউকে বলে আসে না। এতে সৃষ্টিকর্তার হাতে রয়েছে। তারপরও এটা মানতে হবে যে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কিছু ভুল আছে। তাছাড়া যারা শ্রমিক, তাদেরও কিছু অসতর্কতা রয়েছে। শ্রমিকদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত।

তিনি আরো বলেন, ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেজন্য ঠিকাদারদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। মিটিংয়ে তাদেরকে কঠোরভাবে নির্দেশনাও দিয়েছেন। পরবর্তীতে এরকম ঘটনা আর পুনরাবৃত্তি হবে না।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence