আবাসিক হল

নিম্ন মানের খাবারে আর ছারপোকার কামড়ে ঢাবি জীবন ‍শুরু নবীন শিক্ষার্থীদের

বিজয় একাত্তর হলের গণরুম
বিজয় একাত্তর হলের গণরুম  © টিডিসি ছবি

গেল সপ্তাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে এসেছেন ৭ হাজারেরও বেশি নবীন শিক্ষার্থী। এরা সবাই ২০২২-২৩ সেশনে ভর্তি হয়েছেন। যাদের একটা বড় অংশ ঢাকার বাইরে মফস্বল কিংবা গ্রাম থেকে এসেছেন। একরাশ স্বপ্ন নিয়ে ক্যাম্পাসে আসা এসব নবীন শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলই ঢাকা শহরে তাদের অনেকের মাথা গুজার একমাত্র জায়গা। তাই অনেকেই ‘ছাত্রলীগের সিনিয়র ভাইদের’ মাধ্যমে আবাসিক হলের গণরুমে উঠেছেন।

গেস্টরুম-প্রোগ্রামে যাওয়ার শর্ত দিয়ে গণরুমে উঠা এসব শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, হলে তাদের সিনিয়র ভাইদের পক্ষ থেকে এরকম কোন চাপ এখনও আসেনি। বর্তমানে সমস্যা শুধু ক্যান্টিনের খাবারের নিম্ন মান আর গণরুমের ছারপোকার কামড়ে। এছাড়া আর কোনো সমস্যার মুখোমুখি হয়নি বলে জানান এসব শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বে প্রথম বর্ষের একজন শিক্ষার্থীকে হলে ওঠানো হয় না। তাই এ সুযোগটা নেয় ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। তারা নবীন শিক্ষার্থীদের ‘গেস্টরুম-প্রোগ্রাম’ করার শর্তে হলের গণরুমে থাকার ব্যবস্থা করেন। ফলে তাদেরকে সকল প্রোগ্রামে যতটা সম্ভব উপস্থিত থাকতে হয়। আবার যদি কেউ প্রোগ্রামে অনুপস্থিত বা নিয়মিত ফাঁকি দিয়ে থাকেন, তাহলে রাতে তাদের গেস্টরুমে জিজ্ঞাসাবাদ ও জবাবদিহি করতে হয়।

হল ও গণরুম সম্পর্কে জগন্নাথ হলের একাধিক নবীন শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হয়েছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের। তারা জানায়, এক রুমে এখন তারা ১২ জন করে থাকছেন। তবে থাকার কোনো রকমের সমস্যা হচ্ছে না।

নবীন শিক্ষার্থীরা বলেন, একেকজন একেক জায়গা থেকে আসার ফলে তাদের প্রথম প্রথম খাপ খাইয়ে নিতে কষ্ট হয়েছে। কিন্তু এখন সব ঠিক আছে। হলের নিয়মনীতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তারা জানায়, এখনো হলে তাদের ওপর কোনো রকম রাজনৈতিক চাপ বা তারা যে ধারণা করতো ‘গেস্টরুমে অনেক বকাঝকা’ শুনতে হয় সে ধরনের পরিস্থিতিতে তাদেরকে এখনও পড়তে হয়নি।

আরও পড়ুন: ঢাবির হলে ওঠা নিয়ে শঙ্কা নবীনদের, নিরাপত্তার আশ্বাস প্রশাসনের

জগন্নাথ হলের মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ২০২২-২৩ সেশনের নবীন শিক্ষার্থী জয় চন্দ্র শীল বলেন, আমি পটুয়াখালী থেকে এসেছি। আমার বন্ধুরা বিভিন্ন জন বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছে। আমরা মিলেমিশে থাকছি। পাশের রুমে আমাদের সিনিয়ররা থাকলেও তারা আমাদের কোনো রকমের চাপ সৃষ্টি করে না। কোনো ধরনের প্রোগ্রাম গেস্ট রুমের চাপ আপাতত নেই। তবে ছারপোকার উপদ্রব আছে।

জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অন্তু বর্মন বলেন, নতুন শিক্ষার্থীদেরকে আমরা প্রথমে ক্যাম্পাস চেনার সুযোগ দেই। তাদের যেকোনো প্রয়োজনে পাশে থাকি। আমরা তাদেরকে জোর করে ছাত্রলীগের পতাকাতলে আনি না। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের চেতনা ছড়িয়ে আছে। যে কেউ মুজিবের আদর্শে আদর্শিত হয়ে ছাত্রলীগের পতাকাতলে আসলে তখনই তাকে রাজনীতির সাথে সংযুক্ত করা হয়। তাছাড়া বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিটা শিক্ষার্থীর পাশে আছে।

আরও পড়ুন: গেস্টরুম-গণরুমে নির্যাতনের ভয়, ঢাবি ছেড়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে

স্যার এ এফ রহমান হলের নবীন শিক্ষার্থীরা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, তাদের ২টি গণরুম রয়েছে। আপাতত তারা একটা রুম ব্যবহার করছেন। তারা ছোট্ট একটি রুমে ১৮ জন থাকেন। হল সম্পর্কে ক্যাম্পাসে আসার আগে তাদের কাছে হল পলিটিক্স ও গেস্টরুম সংক্রান্ত খারাপ অভিজ্ঞতার কথা শুনলেও এখনো পর্যন্ত এমন কোনো অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়নি।

ওই হলের ২০২২-২৩ সেশনের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিটিউটের শিক্ষার্থী মাহাবুব হোসেনসহ আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, তারা গ্রাম থেকে অনেকে প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে আসছে। হলের সাথে মানিয়ে নিতে তাদের অসুবিধা হচ্ছে না। তাদের উপর এখনো কোনো রাজনৈতিক চাপ আসেনি। কিন্তু তাদের অভিযোগ গণরুমে অনেক বেশি ছারপোকা। ছারপোকার কামড় খেতে না পেরে তাদের বন্ধুদের মধ্য থেকে একজন বাড়ি চলে গেছে বলে জানান এসব নবীন শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হলে হলে ছাত্রলীগের ‘গেস্টরুম আদালত’

স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, নবীন শিক্ষার্থীরা এসেছে। তাদের সকল সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা হল প্রশাসন থেকে দেওয়া হয়েছে। আমরা যারা ছাত্রলীগ করি আমরা তাদেরকে স্বাগত জানিয়েছি। তাদের যেকোনো সমস্যায় আমরা সবার আগে থাকবো। এটাই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অঙ্গীকার।

হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের নবীন শিক্ষার্থীরা জানান, হলে উঠার আগে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে নেগেটিভ কথা শুনা গেলেও হলে উঠার পর তাদেরকে এখনো কোনো সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়নি। তারা ৮ জন এক রুমে থাকেন এবং কোনো ধরনের রাজনৈতিক চাপ তাদেরকে দেওয়া হয়নি। 

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী মামিন অর রশিদ বলেন, খাবারের মান খারাপ আর ছারপোকা সমস্যা ছাড়া হলে আর কোনো ধরনের সমস্যার মুখোমুখি আমরা হয়নি। এখনো পর্যন্ত তাদের হল ও ক্যাম্পাস লাইফ ভালোই লাগছে।

হাজী মুহম্মাদ মুহসীন হল ছাত্রলীগের সভাপতি শহিদুল হক শিশির বলেন, নতুন শিক্ষার্থী যারা এসেছে তাদের সাথে আমরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী নয় বড় ভাই হিসেবে যতটুকু করা দরকার ততটুকু করি। তাদেরকে নিয়ে রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা আসলে আমাদের নেই। তারা ক্যাম্পাসে কীভাবে ভালো থাকবে সেদিকে আমরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী সব সবসময় নজর রাখবো।

আরও পড়ুন: ঢাবি শিক্ষার্থীদের গ্যাং কালচারে জড়ানোর নেপথ্যে ‘গেস্টরুম’ ও ‘বড়ভাই’

এছাড়া ৭১ ও জসিমউদদীন হলের নবীন শিক্ষার্থীরা জানায় হলে আসার আগে হল সম্পর্কে তাদের ধারনা খুব বেশি ভালো ছিলো না। কিন্তু হলে উঠার সময় তারা সিনিয়রদের থেকে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা পেয়েছে এবং এখনও পর্যন্ত তারা মুক্তভাবে চলাফেরা করছে। হল সম্পর্কে তারা যে গল্পগুলো শুনেছে তাদের সিনিয়ররা সেগুলো কে অস্বীকার করেছে বলে জানান নতুন শিক্ষার্থীরা।

বিজয় একাত্তর হলের নবীন শিক্ষার্থী মারুফ হোসেন জানান, গণরুমে এখনও পর্যন্ত আমরা এবং আমাদের সিনিয়ররা একই রুমে ঘুমাচ্ছি। অনেক সিনিয়র আমাদেরকে জায়গা দিতে মসজিদে গিয়ে ঘুমাচ্ছেন। আমাদের জন্য তারা অনেক কষ্ট করছে। কিন্তু ছারপোকা সমস্যাটা আমাদের জন্য একেবারে নতুন। আমাদের হাত-পা ফুলে যাচ্ছে। তাছাড়া ক্যান্টিনে খাবার কোনোভাবেই খাওয়া যাচ্ছেনা। তবে হল সম্পর্কে যেসব বাজে ধারণা ছিলো তার সম্মুখীন এখনও হয়নি বলে জানান এই নবীন শিক্ষার্থী।

আরও পড়ুন: ঢাবিতে গেস্টরুম, চাপাতি ও ডালের নামে পানি উৎসব!

বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু ইউনুস দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রতিটা নবীন শিক্ষার্থীর কাছে আমরা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মহিমান্বিত বাণী পৌঁছে দিতে চাই। পরবর্তীতে যারা স্বেচ্ছায় আমাদের সাথে আসবে এবং তাদেরকে নিয়েই আমরা আমাদের সংগঠন এগিয়ে নিয়ে যাবো। এজন্য প্রতিবছর যারা নতুন শিক্ষার্থী আমাদের হলে আসে তাদেরকে বরণ করার জন্য হল প্রশাসন এবং ছাত্রলীগ মিলে একটি ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের আয়োজন করে থাকি। 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence