‘আবরার কায়দায় আমাদেরকে নির্যাতন করেছে ছাত্রলীগ’

  © সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মাস্টারদা সূর্যসেন হলের চার শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পেটানোর পর জোরপূর্বক মুচলেকা নিয়ে হলছাড়া করেছেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। গতকাল মঙ্গলবার (২৩ মে) বিকেলে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমানের নেতৃত্বে তাদের কক্ষে ডেকে নিয়ে মারধর, জেরা ও শেষে মুচলেকা নিয়ে হল থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ তুলেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার (২৪ মে) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের আলম বাদশা, একই বিভাগের লুতফুর রহমান, আরবি বিভাগের আশিকুর রহমান এবং মনোবিজ্ঞান বিভাগের আল আমিন উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, একজন অবৈধ শিক্ষার্থীকে হলে রাখাকে কেন্দ্র করে আমাদের মতো নিয়মিত শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেক বেশি নির্যাতন করা হয়েছে। বলা যায় আবরার (বুয়েট ছাত্র) কায়দায়। যেভাবে হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় মারধর শুরু করছিল আমরা জীবন নিয়ে শঙ্কিত ছিলাম।

আরও পড়ুন: ঢাবির হলে চার শিক্ষার্থীকে মারধর ছাত্রলীগের

এসময় আলম বাদশা বলেন, হলের অবৈধ শিক্ষার্থী সুমন আহমেদকে হলে রাখাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার আনুমানিক ৩টার সময় আব্দুল আহাদ (হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক) আমাদেরকে রুম থেকে ডেকে নিয়ে ৪৫০ নম্বর রুমে নিয়ে যান, যেখানে সিয়াম রহমান থাকেন। সেখানে গেলে দেখতে পাই সিয়াম রহমান এবং সুমন আহমেদের সঙ্গে আগে থেকেই লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান করছিলেন। এছাড়া হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ জামান অভি, উপ আইন সম্পাদক মুহাম্মদ তালহা, সহ-সভাপতি হামিদ কারজাই এবং আপ্যায়ন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম নীরব সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, আমরা রুমে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়। আমাদের মোবাইল চেক করতে থাকে। কিন্তু কোনো কিছুই পাননি তিনি। শুধুমাত্র লুতফুর ভাইয়ের একটা পোস্ট পেয়েছে পদ্মা সেতু নিয়ে। সেটাও ছিল খুব লজিক্যাল। কিন্তু তারা কোনো লজিক শুনার আগেই মারধর শুরু করে। এটা নাকি সরকারবিরোধী ছিল। কিল, ঘুষি ও লাথি দিতে থাকেন আমাদের চারজনকে।

তিনি আরও বলেন, সিয়াম রহমান দফায় দফায় আমাকে মারধর করে। বলা যায় মধ্যযুগীয় কায়দায়। আমাকে চুল ধরে টানে, বুকে লাথি দেয়, চড়-থাপ্পড় মারে। আমাদের চারজনকেই তিনি মেরেছেন। পরে হামিদ কারজাই আমাকে শিবির করিস বলে অতর্কিতভাবে নির্যাতন শুরু করে।  

মুচলেকা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, পরে আমাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক আলাদা চারটি মুচলেকা নেয় এই বলে যে, 'আমরা বর্তমানে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে একমত নই। অন্যায়ভাবে সুমন আহমেদকে রুম থেকে বের করেছি। হল থেকে স্বেচ্ছায় বের হয়ে যাব।' নির্যাতনের এক পর্যায়ে আমরা লিখতে বাধ্য হই।

বিচার দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বলেন, নির্যাতন করতে করতে আমাদের ৫ ঘণ্টা পর রাত ৮টার সময় বের করে দেয়। আমরা ভয়ে হলে আর অবস্থান করিনি। রাতেই আমরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিই। আজ আমরা প্রভোস্ট স্যারকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি, প্রক্টর স্যারের কাছেও যাব। আমরা সঠিক বিচার চাই এবং হলে থাকতে চাই। নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে হলে থাকা আমাদের অধিকার।

এ বিষয়ে সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের ভিত্তিতে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছি। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটির তিন সদস্য হলো, আবাসিক শিক্ষক শহীদ কাজী, মাহমুদুল হাসান ও সহকারী আবাসিক শিক্ষক আরিফুল ইসলাম।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence