রাবি কর্মচারীকে মারধরের পর হল ছেড়ে গেলেন ছাত্রলীগ নেতা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) এক কর্মচারীকে ডেকে নিয়ে মারধর করে গরু বিক্রি টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হল শাখা ছাত্রলীগ দুই নেতার বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (১৬ মে) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ৩৬৪ নং কক্ষে মারধরের এ ঘটনা ঘটে। 

ভুক্তভোগী রফিকুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের একজন কর্মচারী। আর অভিযুক্তরা হলেন- হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখা সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম এবং শহীদ শামসুজ্জোহা হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মমিন ইসলাম। মাজহারুল ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং মমিন সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশন। তিনি রাবি শাখার একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, এদের মধ্যে অভিযুক্ত মাজহারুল ইসলাম হল ছেড়ে পালিয়েছেন। একইসঙ্গে তার রুমকে সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে ও সকল সনদপত্র আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।

ভুক্তভোগী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের ১ম ও ২য় সেমিস্টার পরীক্ষা সামনে। মঙ্গলবার দুপুরের আগে বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলামের পরিচয় দিয়ে অসুস্থতার কথা বলে তার ফরম ফিল-আপের টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে কাগজপত্র নেওয়ার জন্য আমাকে সোহরাওয়ার্দী হলের ৩৬৪ নং কক্ষে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়। মমিন নিজে আরিফুল সেজে এই কাজ করে। আমি সেখানে গেলে রুমের দরজা জানালা বন্ধ করে মমিন এবং মাজহারুল মিলে আমাকে মারধর করে এবং মাথার পেছনে আঘাত করলে একপর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই।

তিনি আরও বলেন, আমার কিছু মানুষের কাছে ঋণ আছে। সেটা পরিশোধ করার জন্য গরুর বাছুর বিক্রি করা ৩৩ হাজার টাকা সাথে নিয়ে বের হয়েছিলাম। সেখান থেকে ৩ হাজার একজনকে দিয়েছি। বাকি ৩০ হাজার টাকা আমার সাথে ছিল। সেটাসহ তারা আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়েছে। অথচ মমিন বা মাজহারুলের সাথে আমার কোন অর্থিক লেনদেন ছিল না।

আরও পড়ুন: দোকানিকে মারধর করা জাবির সেই দুই নেতাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার

এদিকে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে মমিন বলেন, রফিকুল ভাই আমার বিভাগের কর্মচারী। তিনি সন্তানের অসুস্থতার কথা জানিয়ে আমার কাছ থেকে দুই তিন দিনের কথা বলে পাঁচ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন। কিন্তু দুইমাস পেরিয়ে গেলেও সেটা দিচ্ছিলেন না। টাকার জন্য আমি তাকে ডাকি এবং একসাথে চা খাওয়ার পর টাকাটা চাইলে তিনি বলেন টাকা তো আমি আরেকজনের মাধ্যমে দিয়ে দিয়েছি।

‘‘আমি বললাম আমি তো টাকা পাইনি। উনি বলল, ভাই তাহলে আমি পরে আপনাকে টাকা দিয়ে দেব একটু সময় দেন। তারপর আমি ওনাকে যেতে বললে উনি চলে যায়।’’

তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে মাজহারের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে ফোনে বা সরাসরি পাওয়া যায়নি। হলের শিক্ষার্থীরা জানান, ঘটনার পর থেকে সে হল ছেড়ে পালিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, গতকালের বিষয়টা আমি শুনেছি। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে আমরা ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।

এ বিষয়ে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অভিযুক্ত হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলামের নেতৃত্বে সিট বাণিজ্য, রুমে তোলা দেওয়া, ডাইনিং, ক্যান্টিনে বাকি খাওয়া ও জোর করে সিট দখল করাসহ অনেক অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সবশেষ মঙ্গলবার হলের ৩৬৪ রুমে সংস্কৃত বিভাগের কর্মচারী রফিকুল ইসলামকে নিয়ে এসে সে এবং পার্শ্ববর্তী জোহা হলের সাধারণ সম্পাদক মমিন তারা ওই কর্মচারীকে মারধর করে এবং এক পর্যায়ে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান।

তিনি আরও বলেন, আমার জানামতে মাজহারুল হল ছেড়ে পালিয়েছে। ৩৬৪নং রুমটাকে সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে এবং তার সকল সনদপত্র আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ