ঢাবির বাসে শিক্ষার্থীকে মারধর নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

ঢাবির টঙ্গী-গাজীপুর রুটের পরিবহন ক্ষণিকা বাস
ঢাবির টঙ্গী-গাজীপুর রুটের পরিবহন ক্ষণিকা বাস  © সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টঙ্গী-গাজীপুর রুটের পরিবহন ক্ষণিকা বাসে এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। নিজেকে ভুক্তভোগী দাবি করা শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের মাসুম বিল্লাহ শাওন প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। তবে অভিযোগকারী শাওন নিজে ‘অপরাধী’ বলে দাবি করেছেন বাসে অবস্থান করা শিক্ষার্থীরা। 

গত সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারী ) ক্ষণিকার ৬২১৩ নম্বর বাসে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার জেরে গতকাল বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারী ) শাওন প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। বাসে অবস্থান করা একাধিক শিক্ষার্থীর দাবি, শাওন নিজে এ ঘটনার জন্য দায়ী। তিনি সিনিয়র ভাইদের সঙ্গে চরম মাত্রায় বেয়াদবি করায় তাকে ধমক দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলেও না বুঝে উল্টো বেয়াদবি করতে থাকে।

তাদের দাবি, সিনিয়র ভাইদের অমান্য করে তাদের সামনেই সিগারেট খাওয়া শুরু করে (কথাটি শাওন নিজেই অভিযোগপত্রে স্বীকার করেন), যা ক্যম্পাসে চরম বেয়াদবি বলে গণ্য। এতে বাসের সবাই তার উপর ক্ষিপ্ত হয়। লিখিত অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যমূলক বলেও দাবি তাদের।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ‘এ ঘটনায় যারা যারা যুক্ত ছিল সবাইকে না চিনলেও আমি কয়েকজনকে শনাক্ত করতে পেরেছি। তারা হলো- ক্ষণিকা বাস কমিটির সভাপতি আতিকুল ইসলাম আতিক, সাবেক সভাপতি রবিউল ইসলাম সানি, সাবেক পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের এহসান সাদি খান, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান।’

মাস্টার্সে অধ্যয়নরত রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমি পাঁচ বছর ধরে ক্ষণিকার যাত্রী। সাধারণ বাসের ওপর ক্ষণিকা লেখা থাকলেও অন্য রুটে বাস চলাচল করে। বাইরের ছাত্ররা উঠায় বাসের শিক্ষার্থীরা বসার জায়গা পায় না। সেজন্য শিক্ষার্থীরা গেটে দাঁড়িয়ে পরিচয় জিজ্ঞেস করে যে, সে কোন বাসের। আইডি কার্ড দেখতে চাওয়াটা আইনের অংশ এটা প্রক্টর স্যারও জানেন। কিন্তু সে সেসব না শুনে বেয়াদবি কিরতে থাকে। সবাইকে কন্ডাক্টর বলায় শিক্ষার্থীরা রেগে যায়। কিন্তু শাওন বেয়াদবি করতেই থাকে। আমি বাসের সিনিয়র হিসেবে তাদের শান্ত করি। কিন্তু শাওন স্যরি বলতে না চাওয়ায় সবাই ক্ষিপ্ত হয়।’

তিনি আরাও বলেন, ‘উত্তরা থেকে সভাপতি আতিক ভাই উঠে তাকে শান্ত করতে গেলে সে কিছু না শুনে বাইরে নেমে সিগারেট খাওয়া শুরু করে। এতে সবাই আবার ক্ষিপ্ত হলেও আতিক ভাই সবাইকে শান্ত করেন। পরে বিষয়টি সমাধান করতে তার বাবাকে কল দিতে চাইলে নাম্বার না দেয়ায় তাকে টঙ্গী থানার পুলিশ কর্মকর্তা হাফিজুল ভাইয়ের মাধ্যমে শাওনের বাবার উপস্থিতিতে সমাধান করা হয়। কিন্তু সমাধানের পরেও শাওন উলটো আতিক ভাই সহ অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে।’

মাস্টার্সে অধ্যয়নরত ক্ষণিকা বাসের আরেক নিয়মিত যাত্রী মিম বলেন, ‘আমি বাসের সামনেই ছিলাম। বাসের গেটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা যারা স্টপেজ ছাড়া বাসে উঠছিল সবাইকেই জিজ্ঞেস করছিলো তারা বাসের কি-না বা ভার্সিটির শিক্ষার্থী কি-না। কারণ নিয়মিত অনেক বাইরের শিক্ষার্থী বাসে ওঠায় ক্যাম্পাসের ছাত্ররা সিট পায় না। তেমনি শাওনকেও জিজ্ঞেস করায় সে ক্ষিপ্ত হয়, গায়ে পড়ে রাগ দেখানো শুরু করে। তবে সে-ই বারবার বলছিলো আমাকে মারেন, দেখি কেমন 'হেডাম' আপনাদের।’

তিনি আরো বলেন, ‘পরে আতিক ভাই উত্তরা থেকে বাসে উঠে সবাইকে শান্ত করে বিষয়টি সমাধান করতে চাইলে শাওন নিচে নেমে সবার সামনেই বেয়াদবি করে সিগারেট খাওয়া শুরু করে। এতে বাসের সব শিক্ষার্থী তার ওপর ক্ষিপ্ত হলেও তাকে কেউ মারেনি। শাওন নিজেই অপরাধী হয়েও কমিটির ভাইদের বিপক্ষে অভিযোগ দিয়েছে। অথচ আতিক ভাই অত্যন্ত ভালো মনের মানুষ এবং গত ১ বছরে এই কমিটির আন্ডারে কোনো খারাপ ঘটনা ঘটেনি।’

ক্ষণিকা বাস কমিটির সভাপতি আতিকুল ইসলাম আতিক বলেন, ‘আমি ঝামেলা দেখে উত্তরা থেকে বাসে উঠে সেটা সমাধান করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ছেলেটি জুনিয়র হয়েও সিনিয়রের সামনে বেয়াদবি করেছে। আমি সব ঘটনা তাৎক্ষণিক বাস ম্যানেজার ও প্রক্টর স্যারকে জানিয়েছি। আমরা সমস্যার সমাধান করে তাকে তার বাবার কাছে তুলে দিই। আমি তাকে মারধর করিনি, সে আমাদের বিরুদ্ধে অযথাই অভিযোগ করেছে।’

অভিযোগকারী মাসুম বিল্লাহ শাওন বলেন, ‘আমার বাসা উত্তরা। আমি পাবলিক বাসেই যাতায়াত করি বলে তারা আমাকে চেনে না। আমি ঢাবির ছাত্র এবং ক্ষণিকার অনিয়মিত যাত্রী হওয়া সত্বেও যারা আমাকে মারধর করেছে। তাদের সাময়িক বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি, যেন পরবর্তীতে এমন ঘটনা ঘটানোর আগে সবাই ১০ বার ভাবে। এখন এ কমিটির বিলুপ্তির পাশাপাশি কমিটিবিহীন বাস চালানোর দাবি জানাচ্ছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমি শাওনের কাছ লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। মারধর করাটা সম্পূর্ণ আইনবিরোধী। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঢাবির পরিবহন ম্যানেজারকে জানিয়েছি।’ ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন ম্যানেজার কামরুল ইসলাম বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। বাস কমিটির ছাত্রদের এমন কাজ করার এখতিয়ার নেই। তারা সর্বোচ্চ করতে পারে যে, বহিরাগত কেউ না উঠে। শাওন যেহেতু আমাদের ক্যাম্পাসের, সুতরাং তাদের কিছু করার অধিকার নেই। আমি আবারও প্রক্টর স্যারের সঙ্গে কথা বলে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। তবে শাওন নিজে অভিযুক্ত হলে এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে করলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence