ঢাবির মাস্টার্সে ভর্তিতে শর্তের মারপ্যাচ, শুভঙ্করের ফাঁকি—বলছেন ভর্তিচ্ছুরা
- ফাতেমা-তুজ-জিনিয়া
- প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:২৪ AM , আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৪:০৫ PM
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অনেকের কাছেই এটি স্বপ্নের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। একসময় বিশ্ববিদ্যালয়টির স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) পর্যায়ে বাইরের শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ থাকলেও কয়েক দশক বন্ধ ছিল এ প্রক্রিয়া। সম্প্রতি ডিনস কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে আবারও এই প্রক্রিয়া শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তবে শর্তের মারপ্যাচে মাস্টার্সে ভর্তি হতে পারবেন খুব কম সংখ্যক শিক্ষার্থী। এ কারণে এটিকে শুভঙ্করের ফাঁকি বলছেন ভর্তিচ্ছুরা। তাঁদের মতে, যেসব শর্ত আরোপ করা হচ্ছে, তাতে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর ভর্তির স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে।
সিন্ডিকেটে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঢাবির নিয়মিত শিক্ষার্থীরা ভর্তি হওয়ার পর যত সংখ্যক আসন ফাঁকা থাকবে, কেবলমাত্র ওই কয়টি আসনেই বাইরের শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হবে। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের স্নাতকে অন্তত ৩ দশমিক ২৫ সিজিপিএ থাকতে হবে এবং ঢাবির স্নাতক প্রোগ্রামে ভর্তি হতে এসএসসি ও এইচএসসির যে ন্যূনতম ফলাফল দরকার তা থাকতে হবে।
সব শর্ত পূরণ হলে ভর্তিচ্ছুদের ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা ও ভাইভা পরীক্ষা দিতে হবে। তবে বিগত কয়েকবছরে ঢাবির স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষার্থী ভর্তির পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঢাবিতে বিভাগ ভেদে সাধারণত ৫ থেকে ২০টি আসন শূন্য থাকে। বিশেষত সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, আইন অনুষদ, কলা অনুষদের বিভাগসমূহে অত্যন্ত কম সংখ্যক আসন ফাঁকা থাকে।
এমনকি কোনো কোনো বিভাগে আসন শূন্য থাকে না। এছাড়া, শর্ত অনুযায়ী বিভাগসমূহে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হবে নিজ শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়া শেষে। ফলে প্রক্রিয়াটি অপেক্ষাকৃত সময় সাপেক্ষ হবে এবং এসকল কারণে ঢাবির স্নাতকোত্তরে ভর্তির ঘোষণা অনেকটাই শুভঙ্করের ফাঁকির ন্যায়।
২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে এই তিন অনুষদের কয়েকটি বিভাগে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ভর্তি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ১৮৫ টি আসনের বিপরীতে ১৭২ জন, লোক প্রশাসন বিভাগে ১১০ টি আসনের বিপরীতে ৯৬ জন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ২০০ আসনের বিপরীতে ১৮৫ জন, বাংলায় ১২৫ জনের বিপরীতে ১১৪ জন, ইতিহাসে ১৩০ টি আসনের বিপরীতে ১২৬ জন এবং আইনে ১৩৫ টি আসনের বিপরীতে ১৩৫ জন ভর্তি হয়েছেন।
সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করার চিন্তা করলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাধারণত এখান থেকেই মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী হয়ত চাকরি কিংবা বিদেশে চলে যাওয়ার কারণে ভর্তি হন না। তবে এই সংখ্যাটা খুবই কম।
এ কারণে আসন খালি থাকা সাপেক্ষে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভর্তির যে কথা বলা হয়েছে সেখানে খুব বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন না। এমনকি অনেক বিভাগে বাইরের কোনো শিক্ষার্থীই ভর্তির সুযোগ পাবেন না।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভর্তিচ্ছু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, স্নাতক পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ইচ্ছে থাকলেও পছন্দের বিষয় না পাওয়ায় ভর্তি হওয়া হয়নি। ঢাবি স্নাতকোত্তরে বাইরের শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ দিবে জানার পর বেশ আনন্দিত হয়েছিলাম। কিন্তু তাদের শর্ত দেখে মনে হচ্ছে এটা শুভঙ্করের ফাঁকি।
তিনি আরও বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। ঢাবির আসন খালি থাকা সাপেক্ষে শর্তের কারণে দেখা যাবে আমরা সময় ব্যয় করে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি কিন্তু আসন ফাঁকা নেই। এর চেয়ে যদি নূন্যতম ১০টি আসনও নির্দিষ্ট করে আসন খালি থাকা সাপেক্ষে এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করতো সেটি যৌক্তিক হত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সভাপতি আবু মো. দেলওয়ার হোসেন বলেন, আমদের বিভাগে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে নিজেদের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হওয়ার পর খুব কম সংখ্যক আসন ফাঁকা থাকে। কিন্তু আমরা যদি এই আসনের তুলনায় অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি নেই তাহলে সেটি আমাদের জন্যই কঠিন হয়ে যাবে।
অধ্যাপক দেলওয়ার হোসেন বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কিছু বিভাগ রয়েছে যাদের স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বেশ ভালো সংখ্যক আসন ফাঁকা থাকে। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীরা মূলত এসব বিভাগে ভর্তির সুযোগ পাবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ঢাবিতে বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শর্ত সাপেক্ষে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তি হতে পারবে। যদি কোনো বিভাগের আসন খালি না থাকে, তাহলে ওই বিভাগ সার্কুলার নাও দিতে পারে। তবে যদি কেউ তাদের আসন খালি সত্বেও ভর্তি বিজ্ঞপ্তি না দেয় তাহলে তাদের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য জোর দেয়া যেতে পারে।