বাবুর হোটেলে সর্বোচ্চ ২৯ হাজার টাকা বাকি খেয়েছেন ছাত্রলীগের নেতারা

রাবি, ছাত্রলীগ লোগো
রাবি, ছাত্রলীগ লোগো  © ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবির) শহীদ জিয়াউর রহমান হলের সামনে ২০০০ সাল থেকে হোটেল পরিচালনা করে আসছেন মানিক হোসেন বাবু। তার হোটেলের নাম 'বাবু হোটেল।’ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার কাছে তিনি জনপ্রিয় ‘বাবু ভাই’ নামে। তার দোকান থেকে ছাত্রলীগের বিপুল পরিমাণ অযাচিত বাকির কারণে বন্ধই হয়ে গেল বাবু হোটেল। এ বিষয়ে বাবু জানান, বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন মেহেরচণ্ডী এলাকায় তার বাড়ি। হলের ডাইনিং-ক্যানটিনের বাইরে তার দোকানে খেয়ে থাকেন অন্তত পাঁচটি হলের শিক্ষার্থীরা। তার দোকানে যেসব কর্মচারীরা কাজ করতেন দোকান বন্ধ হওয়ায় কাজ হারিয়েছেন তারাও।

এ নিয়ে বাবু বলেন, আমার দোকানের ১৩ জন কর্মচারীর দৈনিক ৪-৫ হাজার টাকা দেওয়া লাগে। কিন্তু বর্তমানে আমাকে বাকি বিক্রি করার কারণে লাভের বদলে লোকসান গুনতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের বাকি খাওয়াতে গিয়ে যেখানে হোটেলের জন্য বাজার করি সেখানেও আমার অনেক টাকা বাকি হয়ে গেছে। দোকানে যারা খায় আমি তো তাদেরকে কখনো না করি না। শিক্ষার্থীদের কাছে আমার দাবি এই অভাবের সময় বাকির টাকা যেন পরিশোধ করে দেয়। তিনি আবার নতুন করে ব্যবসাটা শুরু করতে চান বলেও জানান। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ ২৯ হাজার টাকা পাব এক নেতার কাছে। শিক্ষার্থীদের কাছে সব মিলিয়ে বাকি পাব প্রায় দুই-আড়াই লাখ টাকা ওপরে।

তিনি বলেন, ছাত্রলীগের কমিটি কমিটি করে তারা খেয়েছে গত দুই মাস ধরে। তারা বলেছে, কমিটির পরে দেব। ১২ নভেম্বর কমিটি না হওয়ায় ম্যালা টাকা বাঁইধা গেছে। আমারও এখন বাজার করার টাকা নাই। প্রায় আড়াই লাখ টাকা পাব আমি তাদের কাছে। খাতায় সবার নাম লেখা আছে; দু-একজন কিছু কিছু দিচ্ছে, আবার বাকি খাচ্ছে। কিছু বলতেও পারি না। এখন তো আমার ক্যাশপাতি একেবারে শ্যাষ। যে দোকান থেকে বাকিতে জিনিস কিনতাম, তারা আর বাকি দিচ্ছে না। ওখানে আমারও ম্যালা টাকা বাইড়া গেছে বলেও জানান তিনি।

বাবু আরও বলেন, তার দোকান থেকে জোর করে কেউ বাকি খায়নি। তারা নানা অজুহাতে বাকি খেয়েছে। আমরা তো শিক্ষার্থীদের সেবাই দিচ্ছি এত বছর ধরে। মুখের ওপর কাউকে ‘না’ করতে পারি না। অনেকের বাকি পড়ে গেছে অনেক টাকা। তাদের একজনের কাছে ২৯ হাজার, ২১ হাজার, একজনের কাছে ১৮ হাজার, ৭ হাজার, ৫ হাজার করে ম্যালা টাকা বাকি আছে। এভাবে প্রায় আড়াই লাখ টাকা বাকি রয়েছে।

আর এ বিষয়ে এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি তাসনীম আলম ও সেক্রেটারি আহমাদ আব্দুল্লাহ। যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেছেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের সামনে মানিক হোসেন বাবু ওরফে বাবু একটি খাবার হোটেল চালান। তিনি ২০০০ সাল থেকে এই খাবার হোটেল পরিচালনা করে আসছেন। আশেপাশে পাঁচটি হলের ছাত্রদের তিনি খাবার খাইয়ে থাকেন। দুই মাস ধরে তাঁর নিকট ছাত্রলীগের নেতারা নানাভাবে বাকি খেয়ে আসছিলেন। কমিটির আশ্বাস দিয়ে ছাত্রলীগ নেতারা মানিক হোসেন বাবুকে বলতেন, কমিটি হলেই তারা সব টাকা পরিশোধ করে দেবে; অথচ প্রায় দুই মাস হয়ে গেল। কিন্তু কোনো কমিটিও নেই, টাকা পরিশোধ করার নামও নেই। বাকির খাতায় প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা হয়ে গিয়েছে, যার পুরো হিসাব তিনি তাঁর খাতায় লিখে রেখেছেন। এমন বাকি খাওয়া একদিকে যেমন ছাত্রসমাজের জন্য লজ্জার নজির সৃষ্টি করেছে, অন্যদিকে জাতীয় পত্রিকায় উঠে আসার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনামও ক্ষুণ্ন হয়েছে বলেও জানান তারা।


সর্বশেষ সংবাদ