১৯২৩ সালে প্রথম, আজ ৫৩তম সমাবর্তন ঢাবির

  © ফাইল ফটো

আজ শনিবার (১৯ নভেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩তম সমাবর্তন। বেলা ১২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠসহ মোট তিনটি ভেন্যু অনুষ্ঠিত হবে এই সমাবর্তন। আলাদা ভেন্যুতে হবে সাত কলেজের সমাবর্তন। এবার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ৩০ হাজার ৩৪৮ জন গ্রাজুয়েট অংশ নেবেন। এবার ১৫৩টি স্বর্ণপদক দেওয়া হবে। তাছাড়া সমাবর্তনে ৯৭ জনকে পিএইচডি, ২ জনকে ডিবিএ এবং ৩৫ জনকে এমফিল ডিগ্রি দেওয়া হবে।

সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সভাপতিত্ব করবেন। এ সমাবর্তনে বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেবেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. জঁ তিরোল। সমাবর্তনে তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ ডিগ্রি প্রদান করা হবে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মোট ৫২ জনকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে। এবার ৫৩তম সমাবর্তনে অধ্যাপক ড. জঁ তিরোলকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ ডিগ্রি প্রদানের মাধ্যমে এ সংখ্যা ৫৩ জনে দাঁড়াবে।

এ দিকে সমাবর্তন উপলক্ষে উৎসবমুখর পরিস্থিতি বিরাজ করছে পুরো ক্যাম্পাসে। গাউন পরে, মাথায় হ্যাট লাগিয়ে সমাবর্তনের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন গ্র্যাজুয়েটরা। একে অপরের সাথে ছবি তুলছেন, কেউ আবার গাউন পরে কার্জন হল, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের পুকুরপাড়, টিএসসি, রাজু ভাস্কর্য, বটতলা, অপরাজেয় বাংলা, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনের ‘নূর চত্বর’, মধুর ক্যান্টিন, সিনেট ভবন, স্মৃতি চিরন্তন প্রভৃতি স্থান ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এক কথায় সমাবর্তনপ্রত্যাশী গ্র্যাজুয়েটদের পদচারণায় গোটা ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।

দেশের বিশ্ববিদ্যালসমূহের মধ্যে সমাবর্তন প্রথম শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের হাত ধরে। সমাবর্তনে এই বিশ্ববিদ্যালয়টির ইতিহাস বেশ উজ্জ্বল। ১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর ব্রিটিশ আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বপ্রথম নিয়মিত সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ১৯২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। আজকের মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত মোট ৫৩ বার সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে।

১৯২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বপ্রথম নিয়মিত সমাবর্তনে বাংলার তৎকালীন গভর্নর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর লর্ড লিটন (রোনাল্ডশে সিআইই) সমাবর্তন ভাষণ দেন। এরপর ১৯২৪ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরই (সর্বমোট ২৪ বার) সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশ আমলে শেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৬ সালের ২১ নভেম্বর।

পাকিস্তান আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৮ সালের ২৪ মার্চ। ২৪ মার্চের সেই সমাবর্তনে কার্জন হলে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠার দাবিকে নাকচ করে দিয়ে জঘন্যতম ভাষণ দিয়েছিলেন তার প্রতিবাদে সমাবর্তন স্থলেই তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এবং ছাত্ররা দাঁড়িয়ে নো নো বলে তীব্র প্রতিবাদ করেন, তারই ধারাবাহিকতায় পূর্ব পাকিস্তানে ভাষা আন্দোলন আরো বেশি গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। ১৯৫২ সালের সমাবর্তনের তারিখ নির্দিষ্ট ছিল ২৪ ফেব্রুয়ারি কিন্তু মহান ২১ ফেব্রুয়ারির ঐ ঘটনায় আর হতে পারেনি। সে বছর ১৭ ডিসেম্বর সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৮ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত মোট ১৫ বার সমাবর্তন হয়।

১৯৬৪ সালের সমাবর্তন ছিল এক পণ্ডময় সমাবর্তন, তখনকার তত্কালীন উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক ড. এম ওসমান গনি ও চ্যান্সেলর আবদুল মোনায়েম খান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সেবারই প্রথম কোন সমাবর্তনে চ্যান্সেলর ও ভাইস চ্যান্সেলর উভয়ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ছিলেন। কিন্তু মোনায়েম খানের কাছ থেকে ডিগ্রি নিতে ছাত্র-ছাত্রীরা অস্বীকার করলে এই সমাবর্তন পণ্ড হয়ে যায়। পাকিস্তান আমলে সর্বশেষ সমাবর্তন হয় ১৯৭০ সালে ৮ মার্চ; সেটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম সমাবর্তন।

স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো (৪০তম) সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাষ্ট্রপতি হিসেবে সমাবর্তন উদ্বোধন করার কথা ছিল; কিন্তু তার আগেই ভোররাতে ঘটে যায় সেই নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড, ১৫ আগস্ট ট্র্যাজেডি ফলে তখন সমাবর্তন স্থগিত করা হয়।

এরপর দীর্ঘ  ২৯ বছর বিরতির পর ১৯৯৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর স্বাধীন বংলাদেশে প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ২০০১, ২০০৪, ২০০৭, ২০০৮, ২০০৯, ২০১২, ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫, ২০১৭, ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে। 

৪০তম সমাবর্তনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক অমর্ত্য সেনকে সম্মাসূচক ডক্টরেট ডিগ্রিতে ভূষিত করা হয়। এরপর ২০০১, ২০০৪, ২০০৭, ২০০৮ ও ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত সমাবর্তনে যথাক্রমে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী তুন ড. মাহাথীর বিন মোহাম্মদ, শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কারে ভূষিত অধ্যাপক ড. মুহম্মদ ইউনূস, ভাষাসৈনিক আ ন ম গাজীউল হক ও ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন, নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী অধ্যাপক ইউয়ান টি লি, বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী অধ্যাপক আবুল হুসসাম এবং প্রসিদ্ধ ইতিহাসবিদ অধ্যাপক রণজিৎ গুহকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

২০১২ সালের মার্চ মাসে ৪৭তম সমাবর্তনে প্রধান বক্তা ছিলেন ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন-এর মহাসচিব প্যাসকেল ল্যামি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালে। এটিও সমাবর্তন ইতিহাসের এক অনবদ্য সংযোজন, সমাবর্তনের প্রধান বক্তা ছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে প্রথমবারের মত প্রথম সম্পূর্ণ বাংলায় সমাবর্তন ভাষণ দিয়েছিলেন। 

২০১৪ সালের ৭ এপ্রিল ৪৮তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউরোপীয় অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ (সার্ন)-এর মহাপরিচালক অধ্যাপক রোল্ফ হুয়ের। তাকে ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি ৪৯তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তা ছিলেন জেনেভাভিত্তিক মেধাস্বত্ব সংগঠন ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশনের মহাপরিচালক ফ্রান্সিস গ্যারি। ২০১৭ সালের ৪ মার্চ ৫০তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অন্টারিও’র প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক অমিত চাকমা। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তাকে ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

২০১৮ সালের ৬ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই সমাবর্তনে বক্তা হিসেবে জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৫২তম সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের কসমিক রে রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক তাকাকি কাজিতা। তাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি দেওয়া হয়।


সর্বশেষ সংবাদ