জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

‘হাতে ইট-একপায়ে দাঁড়িয়ে রেখে’ জুনিয়দের ম্যানার শেখাচ্ছেন সিনিয়ররা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জুনিয়র শিক্ষার্থীদের সাথে অকথ্য ভাষায় গালাগালি, কান ধরে উঠবস করানো, হাতে ইট দিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখাসহ আরো নানারকমের নির্যাতনের দৃশ্যের একটি ভিডিও সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে এক গণমাধ্যমের কাছে। সোমবার দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের গেস্টরুমে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। 

কান ধরে উঠবসসহ বিভন্ন ধরনের নির্যাতন করা হয়েছে বলে জানান নির্যাতনের শিকার হওয়া প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীরা।

প্রথমবর্ষের কিছু শিক্ষার্থী জানান, 'ভাইয়েরা এভাবে আমাদের ম্যানার শেখান।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থীরা জানান, হলে থাকতে হলে এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। বাধ্য হয়ে কান ধরে ওঠবস করাসহ এমন বিষোদগার শুনতে হয়।

তিনি বলেন, 'ভাইয়েরা আমাদের হলের সিনিয়র। তবে এমন আরও অনেক সিনিয়র থাকলেও তারা গেস্টরুমে ম্যানার শেখাতে আসেননি। আমি যতদূর জানি তাদের (যারা ম্যানার শিখিয়েছেন) প্রায় সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।'

এ ছাড়া ভিডিওটিতে যাদের গালি দিতে দেখা যাচ্ছিল তারা সবাই ছাত্রলীগকর্মী বলে নিশ্চিত করেছেন ওই হলের একাধিক শিক্ষার্থী।

বিভিন্ন সূত্রে যাদের চিহ্নিত করা গেছে তারা হলেন, জায়েদ (মার্কেটিং, ৪৯তম ব্যাচ), আজিম সাকিব (আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ৪৯তম ব্যাচ), রাসেল (মার্কেটিং, ৪৯তম ব্যাচ), রিজভী (৪৯তম ব্যাচ), লালন (ইংরেজি বিভাগ, ৪৯তম ব্যাচ), তানিম (পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স, ৪৯তম ব্যাচ), ইয়াসির মোহাম্মদ আমিন (নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা, ৪৯তম ব্যাচ)।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।

জুনিয়র শিক্ষার্থীদের বিষোদগার ও নির্যাতন করা মার্কেটিং বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জায়েদ বলেন, 'জুনিয়ররা গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়েছে। সেজন্য আমাদের ওপর একটা চাপ আসে। তাই ওদের আমরা ডেকেছিলাম। তাছাড়া হলের খেলা আছে এজন্য ওদের কিছু বলার জন্য আমরা ডেকেছিলাম।'

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন বলেন, 'এসব যখন চলছিল, তখন আমি ঘুমাচ্ছিলাম। গেস্টরুম করাইছে ঠিকাছে কিন্তু সেখানে কি কোনো ধরনের অসঙ্গতি ছিল বলে পাওয়া গেছে? যদি অসঙ্গতিপূর্ণ কিছু থাকে তাহলে আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখছি বিষয়টা।'

কানধরে উঠবস করানো শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কি না জানতে চাইলে ফোন কেটে দেন হাবিবুর রহমান।

গেস্টরুমে জুনিয়র শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ইস্রাফিল আহমেদ বলেন, 'রাতে দুইটা কল আসছিল। বুঝছি যে কোনো কিছু ঝামেলা হয়েছে। পরে হলে কল দিয়েছিলাম, ওরা কিছু বলেনি। তোমার কাছ থেকে শুনলাম, তুমি একটু সাহায্য কইরো।'  

তিনি আরও বলেন, 'এটা তো ছাত্রলীগের সেক্রেটারির হল। আমি বিষয়টি অবশ্যই তদন্ত করে দেখব।'

গেস্টরুমে প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের ম্যানার শেখানো হয়, এ বিষয়ে কিছু জানেন কি না জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, 'ম্যানার তো বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে শেখার কিছু নেই। ম্যানার শেখানো শুরু হয়েছে? বাবা-মা কিছু শেখায় না ম্যানার!'

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, 'আমি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট হল প্রভোস্টের সঙ্গে কথা বলব এবং অভিযোগের সত্যতা পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।'

গেস্টরুমে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম জানান, তিনি এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাননি। এরপর তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্টকে ফোন দিয়ে এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।


সর্বশেষ সংবাদ