শিক্ষার্থীদের আবাসন ছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান চায় না ইউজিসি
- খাঁন মুহাম্মদ মামুন
- প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:০৫ AM , আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:২৯ PM
দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য একটি স্বতন্ত্র জাতীয় র্যাংকিংয়ের সুপারিশসহ নতুন করে ডজনখানেক সুপারিশ জানিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থাটির ৪৯তম বার্ষিক প্রতিবেদনের সুপারিশে এ প্রস্তাব জানানো হয়েছে। দেশের উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে আরও বেশ কিছু প্রস্তাবনা জানিয়ে শীঘ্রই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য এবং রাষ্ট্রপতির কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে কমিশনের পক্ষ থেকে।
এর মধ্যে দেশের নতুন অনুমোদিত সরকারি বা পাবলিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ন্যূনতম অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যতীত পাঠদান শুরু না করার প্রস্তাব জানানো হয়েছে ইউজিসির পক্ষ থেকে। কমিশন বলছে, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান শুরুর জন্য একটি অ্যাকাডেমিক ভবন, একটি প্রশাসনিক ভবন এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আলাদা আবাসিক ভবন অর্থাৎ মোট চারটি ভবন না হলে তাতে পাঠদান শুরু না করার বিষয়টি সুপারিশে রাখা হয়েছে।
সেজন্য আগে একজন প্রজেক্ট ডিরেক্টর (পিডি) নিয়োগ করে অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। একই সাথে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পর উপাচার্যসহ প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগের কথা বলছে দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থাটি। শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ প্রাপ্তি নিশ্চিতে এমন উদ্যোগ—বলছে কমিশন।
আরও পড়ুন: উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে ডজন খানেক সুপারিশ ইউজিসির
এর আগে গত বছর দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থাটির পক্ষ থেকে মোট ১৭টি সুপারিশ জানানো হয়েছিল। এর মধ্যে এবারের প্রস্তাবনায় বেশ কিছু নতুন বিষয়ের পাশাপাশি রাখা হয়েছে বাস্তবায়ন হয়নি এমন প্রস্তাবনাগুলোও। দেশের উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে প্রতিবছরই একটি বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইউজিসি।
এবারের প্রস্তাবনায় ইউজিসির সুপারিশে রাখা রয়েছে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ র্যাঙ্কিং তৈরির উদ্যোগের বিষয়টি। সেজন্য একটি নীতিমালা তৈরির সুপারিশ করা হয়েছে কমিশনের পক্ষ থেকে। ইউজিসি বলছে, দেশের সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ১৭০টির মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে একটি আভ্যন্তরীণ র্যাঙ্কিং হওয়া প্রয়োজন।
এছাড়াও দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং ট্রেজারার নিয়োগের নীতিমালার বিষয়টি রয়েছে কমিশনের এবারের বার্ষিক প্রতিবেদনে। সেজন্য একটি স্বতন্ত্র কমিশন গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে ইউজিসির পক্ষ থেকে। এই কমিশন উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং ট্রেজারার থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করবে।
আরও পড়ুন: একক ভর্তি পরীক্ষা: ঢাবি-বুয়েটসহ ১০ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নিয়ে কমিটি, নেতৃত্বে ইউজিসি
দেশে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষকদের কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। ফলে দেশের উচ্চশিক্ষালয়ের শিক্ষকদের জন্য ন্যূনতম কোনো নির্দিষ্ট মান কোনো কোনো ক্ষেত্রে ধরে রাখা সম্ভব হয় না। একজন ভালো শিক্ষার্থী যেন প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে ভালো মানের শিক্ষক হতে পারেন সেজন্য কমিশন এবার ইউনিভার্সিটি টিচার্স ট্রেনিং একাডেমি (ইউটিটিএ) দ্রুত চালু করার বিষয়টিতে জোর দিচ্ছে। দেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষকদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেবে ইউটিটিএ।
প্রতিবেদনে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আরও বেশি গবেষণামুখী হতে উদ্যোগী করার প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে কমিশনের পক্ষ থেকে। সেজন্য এতে গবেষণা কার্যক্রম বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে ইউজিসির পক্ষ থেকে।
পাশাপাশি অনুমোদনের পরই কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান শুরুর পক্ষে নয় ইউজিসি। সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো তৈরি, শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগসহ ন্যূনতম অবস্থানের প্রেক্ষিতে একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান শুরুর প্রস্তাবনা জানানো হয়েছে এবারের প্রতিবেদনে। এছাড়া পর্যাপ্ত ক্লাসরুম, ল্যাবরেটরি, গবেষণাগার তৈরির পর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করার সুপারিশও জানানো হয়েছে ইউজিসির তরফ থেকে।
আরও পড়ুন: র্যাংকিং-ট্রাস্ট-রাজনীতি-সেমিস্টার ইস্যুতে সরগরম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
এবারের বার্ষিক প্রতিবেদনে কমিশন দেশে প্লেজিয়ারিজম বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগের কথা জানিয়েছে। দেশে প্রচলিত ব্যবস্থায় একদিকে কম গবেষণা এবং তার বিপরীতে গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির মতো ঘটনা বন্ধ করতে চায় কমিশন।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, দেশের উচ্চশিক্ষার উন্নয়নে আমরা ১০-১২টি সুপারিশ প্রস্তাবনা আকারে প্রস্তুত করেছি। সামগ্রিক বিচারে উচ্চশিক্ষার মান বাড়াতে এসব প্রস্তাবনা দ্রুত বাস্তবায়ন করা দরকার। ইউজিসি আশা করছে, এসব প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন হলে দেশের উচ্চশিক্ষার মান আরও বৃদ্ধি পাবে।