ইউসিএসআই’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাষ্ট্রপতি-মন্ত্রণালয়ে চিঠি যাচ্ছে
- শিহাব উদ্দিন
- প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২৩, ১০:৪৯ AM , আপডেট: ০৭ জুন ২০২৩, ১২:০৪ PM
একাডেমিক কার্যক্রম অনুমোদন ছাড়াই শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞাপন দেওয়ায় মালয়েশিয়ার ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটির ঢাকা ক্যাম্পাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাষ্ট্রপতি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠাবে তদারকি সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।
জানা গেছে, সম্প্রতি শাখা ক্যাম্পাস পরিচালনার অনুমোদন পায় ইউসিএসআই। তবে একাডেমিক কার্যক্রম ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজের অনুমোদন পায়নি প্রতিষ্ঠানটি। এরপরও শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞাপন দেয় বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিষয়টি ইউজিসির নজরে আসলে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশের জবাব দিয়েছে ইউসিএসআই। তবে নোটিশের জবাবে সন্তুষ্ট হতে পারেনি ইউজিসি।
শোকজের জবাবে ইউসিএসআই জানিয়েছে, বিওটি তারা নিজেরাই গঠন করেছে। এখন ইউজিসি এই পর্ষদকে অনুমোদন দিলেই হয়ে যায়। ইউসিএসআই এর এই বক্তব্য প্রচলিত আইনের সাথে অসামঞ্জস্য।
ইউজিসি বলছে, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস পরিচালনার জন্য স্পষ্ট আইন রয়েছে। আইন অনুযায়ী ইউজিসিতে আবেদন করার পর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের অনুমোদন নিতে হয়। তবে ইউসিএসআই সেটি না করেই নিজেদের ইচ্ছেমতো বিওটি পরিচালনা করছে। যা আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। প্রতিষ্ঠানটির এমন কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি পাঠানো হবে।
ইউজিসির একটি সূত্র জানিয়েছে, বিওটি গঠন নিয়ে ইউসিএসআই যে বক্তব্য দিয়েছে সেটি গ্রহণযোগ্য নয়। প্রতিষ্ঠানটি তাদের শোকজের জবাবে জানিয়েছে, বিওটি তারা নিজেরাই গঠন করেছে। এখন ইউজিসি এই পর্ষদকে অনুমোদন দিলেই হয়ে যায়। ইউসিএসআই এর এই বক্তব্য প্রচলিত আইনের সাথে অসামঞ্জস্য।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার আইনের অনেক কিছুই প্রতিষ্ঠানটি মানছে না। আমরা যেসব বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছি তারা সেসব বিষয়ের কোনো উত্তর দিতে পারেনি। সেজন্য প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাষ্ট্রপতি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হবে— ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানোর পর তারা যে জবাব দিয়েছিল, আমরা তা পর্যালোচনা করে দেখেছি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার আইনের অনেক কিছুই প্রতিষ্ঠানটি মানছে না। আমরা যেসব বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছি তারা সেসব বিষয়ের কোনো উত্তর দিতে পারেনি। সেজন্য প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাষ্ট্রপতি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হবে।
এর আগে গত ৩ মে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ (বিওটি), রেজিস্ট্রেশন না থাকাসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগে ইউসিএসআইকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায় ইউজিসি। ইউজিসির পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘‘বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার পরিচালনা বিধিমালা, ২০১৪’-এর বিধি ৪(১), ৪(৬), ৭(চ) ও (ঞ), ১১(১) (গ), ১২(২) এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ধারা এবং উপধারাসমূহের) UCSI University Bangladesh Campus-কর্তৃক ব্যত্যয় ঘটেছে বলে কমিশনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এছাড়া ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত পত্রের শর্তসমূহ প্রতিপালন করা হয়নি। এ বিষয়ে যথোপযুক্ত জবাব আগামী ৩ কর্মদিবসের মধ্যে কমিশনের প্রেরণের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।’’
ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি চারটি ধারা লঙ্ঘন করেছে। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা আইন-২০১৪ এর ৪(১), (৬); ৭(চ), (ঞ); ১১(১), (গ) এবং ১২(২) ধারা লঙ্ঘন করেছে ইউসিএসআই।
বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা আইন-২০১৪ এর ৪(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘‘কোন ব্যক্তি কমিশনের নিকট হইতে সাময়িক অনুমতিপত্র বা, ক্ষেত্রমত, সনদপত্র গ্রহণ ব্যতিরেকে কোনো শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনা করিতে পারিবে না।’’
৪(৬) ধারায় বলা হয়েছে, ‘‘উপবিধি (৪) এর অধীন আবেদন প্রাথমিকভাবে মঞ্জুর করা হইলে কমিশন সংশ্লিষ্ট আবেদনপত্র সরকারের নিকট উহার সুপারিশসহ পেশ করিবে এবং সরকার প্রত্যেকটি মঞ্জুরকৃত আবেদনপতত্রের জন্য একটি করে রেজিস্ট্রেশন ইস্যু করিবে।’’
৭(চ)-তে বলা হয়েছে, ‘‘বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কিত কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত একটি পরিকল্পনা থাকিতে হইবে।’’ (ঞ)-তে বলা হয়েছে, কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত তিন (০৩) সদস্য সমন্বয়ে একটি বোর্ড অব ট্রাস্টিজ থাকিতে হইবে।’’
১১(১) এর (গ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘‘কমিশন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জীবন বৃত্তান্ত পর্যালোচনাপূর্বক শিক্ষক, বা কর্মচারী হিসাবে নিয়োগের অনুমতি প্রদান করিবে।’’
১২(২) ধারায় বলা হয়েছে, ‘‘কমিশন, উপ-বিধি (১) এর অধীন প্রাপ্ত আবেদনপত্র যাচাই বাছাইপূর্বক যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, আবেদনকারী বিধি ৭ এ বর্ণিত শর্ত পূরণ করিয়াছে তাহা হইলে সরকারের নিকট সেই মর্মে একটি প্রতিবেদন পেশ করিবে এবং সরকার, কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত সুপারিশের ভিত্তিতে, আবেদনকারীর অনুকূলে শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার স্থাপন বা পরিচালনার জন্য সনদপত্র ইস্যু করিবে।’’