আরামে ঘুমাতে যে পন্থা অবলম্বন করে বিভিন্ন দেশের মানুষেরা

  © সংগৃহীত

একটি ভালো ঘুম আপনার শরীরকে সবচেয়ে ভালো কাজ করতে দেয় এবং ফুরফুরে মেজাজ উপহার দিতে পারে। এটি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, চাপ কমায়, মানসিক তীক্ষ্ণতা উন্নত করে এমনকি আপনার অতিরিক্ত খাওয়ার সম্ভাবনাও কমিয়ে দিতে পারে। তবে অনেকেই আছেন যারা নিদ্রাহীনতায় ভোগেন। এ অনিদ্রা থেকে বাঁচতে এবং সুস্থ স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লোকজন মজাদার কিছু পন্থা অবলম্বন করে থাকে। জেনে নেয়া যাক সেগুলো সম্পর্কে।

১. চীনারা ঘুমানোর আগে তাদের পা ধোয়
চায়নায় পা ম্যাসাজ এবং স্পা ট্রিটমেন্ট গুলো বহুলভাবে প্রচলিত। গরম তোয়ালেতে পা পেচিয়ে রাখার এ স্পা ট্রিটমেন্টটি চায়নায় এতোটাই জনপ্রিয় যে তারা বাসায় প্রত্যেকদিন রাতে ঘুমানোর আগে নিজে নিজে এটি করে থাকে। এটি শোবার আগে করা হয়, যেন পা শুকানোর পর শুয়ে পরলেও তা উষ্ণ থাকে। উষ্ণ পা থাকার ফলে শরীরের তাপমাত্রা কমে যেতে থাকে যা দ্রুত ঘুমিয়ে পরতে সাহায্য করে।

২. জার্মানরা আলাদা কম্বল ব্যবহার করে
দম্পতিদের মাঝে ঘুমানোর সময় একজনের কম্বলের অংশ আরেকজন দখল করে নেয়া খুব সাধারণ একটি সমস্যা। তবে জার্মান দম্পতিরা এর একটি সহজ সমাধান বের করেছে যেন রাতে কম্বল আরেকজন দখল করে নিলে ঠান্ডার কারণে ঘুম না ভাঙ্গে। তারা নিজেদের জন্য আলাদা আলাদা কম্বল ব্যবহার করে থাকে ঘুমানোর সময়। এতে তারা নিজের পছন্দ মতো পরিমাণ কম্বল নিয়ে আরাম করে ঘুমাতে পারে।

৩. গুয়াতেমালার লোকজন ‘উদ্বেগের পুতুল’ ব্যবহার করে 
গুয়াতেমালার একটি দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য রয়েছে যে, বাবা-মা তাদের বাচ্চাদের বালিশের নীচে একটি "উদ্বেগের পুতুল” রাখে যদি তারা অন্ধকারে ভয় পায় তবে পুতুলটি তাদের সান্ত্বনা দেয়।সে দেশের শিশুরা ঘুমাতে যাওয়ার আগে ছোট এ পুতুলটিকে তাদের উদ্বেগের কথা বলে থাকে। পুতুলটি রঙিন কাপড়ের তৈরি থাকে যা মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার লম্বা হয়। তাদের বিশ্বাস মতে এটি সকালের মধ্যে বাচ্চাদের উদ্বেগ দূর করতে পারে। কিন্তু এটা এখন শুধুমাত্র শিশুরা ব্যবহার করে না। মেক্সিকো-ভিত্তিক রিডার্স ডাইজেস্টের ল্যাটিন আমেরিকান সংস্করণের প্রধান সম্পাদক আদ্রিয়ানা ভিলাগ্রার মতে, সেই দেশে এবং মেক্সিকোতে প্রাপ্তবয়স্করা ক্রমবর্ধমান হারে পুতুলের উপর নির্ভর করছে।

৪. ব্রিটিশরা কাপড় না পরে ঘুমায়
২০১৩ সালে ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের এক জরিপ অনুযায়ী ব্রিটেনের ৩০ শতাংশ মানুষ নগ্ন হয়ে ঘুমায়। ব্রুসের মতে ঘুমানোর সময় কাপড় না পরার বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে। অন্যতম একটি হলো এভাবে ঘুমানোর ফলে একটি উষ্ণ অনুভূতি পায় যা একটি ভালো ঘুম দেয়। তিনি আরও বলেন এ ধরনের ঘুম দম্পতিদের মোঝে আরও গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

৫.অনেক আমেরিকান দম্পতি আলাদা ঘুমায় 
আমেরিকায় অনেক দম্পতি ঘুমানোর সময় আলাদা ঘরে ঘুমায় যাকে বলা হয় ‘স্লিপ ডিভোর্স’। প্রায় ২০০০ দম্পতি নিয়ে চালানো এক জরিপে দেখা যায় এক-তৃতীয়াংশ দম্পতি আলাদা ঘুমানোর ব্যাপারে আলোচনা করেছে এবং এর ১২ শতাংশ দম্পতি আলাদা ঘুমায়। এর বিভিন্ন কারণ গুলো হলো সঙ্গীর আলাদা ঘুমানোর সময়, নাক ডাকার অভ্যাস কিংবা বিছানায় যথেষ্ট জায়গা না থাকা। 

৬. জাপানিরা কর্মক্ষেত্রে এবং খোলা জায়গায় ঘুমায়
একটি সরকারি জরিপ অনুযায়ী ৪০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক জাপানিরা ৬ ঘন্টারও কম ঘুমায়। যে কারণে তাদের মধ্যে ‘ইনিমুরি’ বা যে কোনো জায়গায় ঘুমানোর একটি প্রচলন রয়েছে হতে পারে সেটা কোনো ক্যাফে হোক কিংবা পাবলিক ট্রান্সপোর্টে। অফিসের ডেস্কে ঘুমানো বিশ্বের অন্যান্য দেশে খারাপভাবে দেখা হলেও জাপানে এটি স্বাভাবিকভাবেই নেয়া হয় এবং তারা প্রায়ই এটি করে। তারা এটিকে নিজের কর্মক্ষেত্রের প্রতি আগ্রহী মনে করে। ২০২১ সালের একটি ফরাসি গবেষণায় দেখা গেছে যে ঘুমের ফলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা উন্নত হয়। অন্যান্য গবেষণায় দেখা গেছে যে ১০ থেকে ২০ মিনিটের ঘুম আপনার মেজাজকেও উন্নত করে।

৭. কানাডিয়ানরা তাদের পোষাপ্রাণীর সাথে ঘুমায়
কানাডিয়ানরা তাদের পোষা প্রাণীকে এতটাই ভালবাসে যে, ২০১৯ সালে ১৮০০ পোষা প্রাণীর মালিকদের নিয়ে করা এক সমীক্ষায় দেখা যায়, যাদের পোষাপ্রাণী হিসেবে কুকুর আছে তার তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি মানুষ কুকুরদের বিছানায় যেতে দেয়। আর যারা বিড়াল পোষে তাদের অর্ধেকে বিড়ালকে নিয়ে ঘুমায়। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাজ্যের প্রায় অর্ধেক থেকে দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ তাদের পোষাপ্রাণীকে নিয়ে ঘুমায়।  

টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক এবং আওয়ার ট্রাইবাল ফিউচারের লেখক ডেভিড স্যামসন বলেন, ‘মানুষ তাদের পোষাপ্রাণী নিয়ে ঘুমানোর পেছনে একটি ভালো কারণ রয়েছে’। তিনি যে বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করেন তার মতে, কুকুর আমাদের পূর্বপুরুষদের বেঁচে থাকতে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। রাতে যখন কোনো বিপদ আসতো কুকুর ঘেউ ঘেউ করে তাদের সতর্ক করে দিতো। তিনি বলেন, ‘কুকুর এবং মানুষের মধ্যে সম্পর্ক সম্ভবত ৫৫,০০০ বছর আগের।’ এতে বোঝা যায় যে কিছু লোক সহজাতভাবে নিরাপদ বোধ করে, তাই কুকুরের আশেপাশে আরও ভাল ঘুমায়। মায়ো ক্লিনিকের ২০১৭ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে যারা কুকুরকে তাদের ঘরে ঘুমাতে দেয় তারা ভাল ঘুমায় অপরদিকে যারা কুকুরকে তাদের বিছানায় ঘুমাতে দেয় তারা খারাপ ঘুমায়। 

সোর্স: রিডার্স ডায়জেস্ট ম্যাগাজিন


সর্বশেষ সংবাদ