কোরবানী ঈদ: কী করবেন, কী করবেন না

  © প্রতীকী ছবি

ঈদুল আজহা ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় দুটো ধর্মীয় উৎসবের দ্বিতীয়টি। চলতি কথায় এই উৎসবটি কোরবানীর ঈদ নামেও পরিচিত। এই উৎসবকে ঈদুজ্জোহাও বলা হয়। এই উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল ত্যাগ করা। চলুন জেনে নেয়া যাক বিশেষ এই দিনটিতে কি কি করণীয় এবং কি কি বর্জনীয়।

করণীয় হলো-
গোসল করা: ঈদের দিনে ঘুম থেকে উঠে সর্ব প্রথম কাজ হলো গোসল করা। নামাজের আগে গোসল করা সুন্নত। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে গোসল করতেন। (মুয়াত্তা ইমাম মালিক)

উত্তম পোশাক পরিধান: ঈদের দিন যার যার সামর্থ মতো ভালো কাপড় পরিধান করা উচিত। রাসুল (সা.) ভালো পোশাক পরিধান করতেন। হাদিসে আছে, রাসুল (সা.)-এর লাল ও সবুজ ডোরার একটি চাদর ছিল, তিনি তা দুই ঈদ ও জুমার দিন পরিধান করতেন।

সুগন্ধি বা আতর ব্যবহার: সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নত। আর ঈদের দিনে রাসুল (সা.) বিশেষভাবে সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। রাসুল (সা.)-এর তিনটি পছন্দনীয় জিনিসের মধ্যে একটি হলো সুগন্ধি। তাই ঈদের দিনের পোশাক পরিধানের পর সুগন্ধি ব্যবহার করা উচিত। তবে নারীদের এটি ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

ঈদের দিনে খাওয়া: বাঙ্গালী মুসলমানরা নামাজের পরে পুরো পরিবার একত্রে সকাল বেলা মিষ্টিজাতীয় খাদ্য দিয়ে নাস্তা করে। সকালের এই নাস্তাতে থাকে নানান ধরনের মিষ্টান্ন। কোরবানির দিনে ঈদের নামাজের আগে কিছু না খাওয়া মোস্তাহাব। নবী করিম (সা.) ঈদুল আজহার দিন ঈদের নামাজ আদায় পর্যন্ত কিছুই খেতেন না। (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)

ঈদের নামাজ আদায়: সকল মুসলিম ছেলেদের জন্য এই ঈদের দুই রাকাত নামাজ আদায় করা ওয়াজিব এবং মহিলাদের জন্য এই নামাজ সুন্নৎ। ঈদের নামাজ সব নফল নামাজের মধ্যে ফজিলতপূর্ণ। ঈদের নামাজের আগে ও ফজরের নামাজের পরে কোনো নামাজ নেই। ঈদের নামাজের কোনো আজান ও ইকামত নেই।

শুভেচ্ছা বিনিময়: ঈদের দিনে ছোট-বড় সবার সঙ্গে কোলাকুলি ও বিভিন্ন মাধ্যমে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা হয়। এটি সুন্নত। ঈদের দিনে সাহাবায়ে কিরামদের সম্ভাষণ ছিল ‘তাকাব্বাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা’।

কোরবানী করা: ঈদুল আজহার দিনে সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। কোরবানির গোশত নিজে খাবে, নিজের পরিবারবর্গকে খাওয়াবে, আত্মীয়স্বজনকে হাদিয়া-তোহফা দেবে ও গরিব-মিসকিনকে দান করবে। মোস্তাহাব হলো, কোরবানির গোশত তিন ভাগে ভাগ করা। ১. নিজ পরিবার-পরিজনের জন্য এক ভাগ। ২. আত্মীয়স্বজনের জন্য এক ভাগ। ৩. দরিদ্রদের জন্য এক ভাগ। আর যদি পরিবারের লোকসংখ্যা বেশি হয়, তাহলে কোরবানির সব গোশত খেলেও অসুবিধা নেই। (শামি : ৫/২০৮)

বর্জনীয় হলো-
ঈদের নামাজ না পড়ে আনন্দ-ফুর্তি: অনেকে ঈদের আনন্দে মশগুল হয়ে নতুন জামা-কাপড় পরিধান, সেমাই, ফিরনি ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, ঈদের নামাজ আদায় করার কথা ভুলে যায়। অথচ এই দিনে ঈদের নামাজ ও কোরবানি করাই হচ্ছে মুসলমানদের মূল কাজ।

কোরবানির কোনো কিছু বিক্রি করা: কোরবানির গোশত, চামড়া ও এর কোনো অংশ বিক্রি করা যাবে না। অর্থাৎ বিক্রি করে নিজে উপকৃত হওয়া যাবে না। এমনকি কসাইকে পারিশ্রমিকস্বরূপ গোশত দেওয়া নিষিদ্ধ। (বোখারি, হাদিস : ১৭১৭, মুসলিম, হাদিস : ১৩১৭) তবে সাধারণভাবে তাকে খেতে দেওয়ায় অসুবিধা নেই।

মুসাফাহা-কোলাকুলি এই দিনে জরুরি মনে করা: ঈদগাহে বা ঈদের দিন সাক্ষাৎ হলে মুসাফাহা ও মুআনাকা (কোলাকুলি) করতেই হবে এমন বিশ্বাস ও আমল করা বিদাআত। তবে এমন বিশ্বাস না করে সালাম ও মুসাফাহার পর মুআনাকাতে (গলায় গলা মেলানো) কোনো অসুবিধা নেই। কারণ মুসাফাহা ও মুআনাকা করার মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘একদা হাসান ইবনে আলী (রা.) নবী করিম (সা.)-এর কাছে এলেন, তিনি তখন তাকে জড়িয়ে ধরেন ও মুআনাকা (কোলাকুলি) করেন।’

ঈদের দিনকে কবর জিয়ারতের জন্য নির্দিষ্ট করা: ঈদের দিনকে কবর জিয়ারতের বিশেষ দিন মনে করে জিয়ারত করা বিদআত (সহিহ ফিকহুস সুন্নাহ : ১/৬৬৯), তবে পূর্বনির্ধারিত রুটিন ছাড়া হঠাৎ সুযোগ হয়ে গেলে একাকী কেউ জিয়ারত করলে দোষণীয় নয়।

ঈদের দিনে রোজা: ঈদের দিনে রোজা রাখা হারাম। ‘রাসুল (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনে রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন। (সহিহ বোখারি ও মুসলিম)


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence