ঢাবির ‘গ’ ইউনিট: শেষ সময়ের জন্য ভর্তিচ্ছুদের কিছু পরামর্শ

  © টিডিসি ফটো

প্রিয় ভর্তিচ্ছু যোদ্ধারা, নতুন ১টা দিন, নতুন কিছু গাইডলাইন। তোমরা ইতোমধ্যে জেনে গেছো ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়ে গেছে। ‘গ’ ইউনিটের যারা পরীক্ষা দিবে তোমরা অবগত আছো যে আগামী ১৩ মে তোমাদের পরীক্ষা প্রত্যেকের বিভাগীয় শহরে অনুষ্ঠিত হবে। 

আজকে তোমাদের জন্য ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শেয়ার করবো। ভর্তি পরীক্ষা সম্পর্কে তোমরা অনেকে হয়তো একটু দুশ্চিন্তায় আছো; কিভাবে হবে, কত মার্কস, লিখিত কত, এমসিকিউ কত, বোর্ড মার্কস কিভাবে কাউন্ট হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আসো নাম্বারের মান বন্টন দেখে নেয়া যাক- 

পরীক্ষার সর্বমোট ১২০ নাম্বরের হবে। এমসিকিউ অংশে থাকবে ৬০ নাম্বার। ৬০টা এমসিকিউ, প্রতিটির জন্য থাকবে এক নাম্বার। ভুল দাগালে (.২৫)  কাটা যাবে। সময় ৪৫ মিনিট (প্রত্যেক এমসিকিউ ৪৫ সেকেন্ড)। লিখিত ৪০ নাম্বার (৪৫ মিনিট)। বোর্ড নাম্বার এসএসসি+এইচএসসি মিলিয়ে ২০ নাম্বারে ভাগ করা হয়। যেহেতু ভর্তি পরীক্ষার এখনো ১৫ দিনের মতো সময় বাকি আছে তাই প্রস্তুতি একদম তুখোড় করে নিতে হবে। কারণ এই পরীক্ষায় বাঘা বাঘা শিক্ষার্থীও পাশ করে উঠতে পারে না। পাশের হারের একটা পরিসংখ্যান দেখতে পারো। 

গত বছরের ভর্তি পরীক্ষায় ১৪.৩০% পাশ করেছিল, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ ২১.৭৫% এর মতো। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ ১৫.৭৯%। ৩০ হাজারের কাছাকাছি শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়ে ১৪.৩০% পাশ করে। এখানে যে যত বেশি পরিশ্রমী, টেকনিক্যালি পরিশ্রম করবে সেই সফল হবে। 

আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে প্রস্তুতির কিছু দিকনির্দেশনা ব্যাখ্যা করছি। যত পারো প্রশ্ন ব্যাংক ঘাটো, যতবার করা যায়, বুঝে বুঝে করবা সমাধানগুলো। এতে বুঝে যাবা তোমার দুর্বলতা কোথায়। সেগুলোতে জোর দিবা, মানে ওই না পারা বিষয়ে গুরুত্ব দিবে। ভর্তি পরীক্ষায় প্রত্যেক এমসিকিউ প্রশ্নের জন্য সময় ৪৫ সেকেন্ড থাকবে। সময় মেইনটেইন করাটা খুব জরুরি। তার জন্যে আমি একটা সিকুয়েন্স ফলো করতাম। তোমাদের ভালো লাগলে ফলো করতে পারো। 

আমি আগে কমার্সের বিষয়গুলো (হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং/মার্কেটিং) শেষ করতাম। ১ টা ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থী এই বিষয়গুলো নবম শ্রেণি থেকে পড়ে আসছে। তাই এই ৩টি বিষয়ের ৩৬টি এমসিকিউ দাগাতে সর্বোচ্চ ২০ মিনিটের বেশি লাগবে না। এখনও হাতে সময় থাকবে ২৫ মিনিট। এই যে শুরুতে সময় বাঁচিয়েছো, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে ইংরেজি/বাংলা দিয়ে শুরু করে। খারাপ না, তবে যদি প্রথমে সময় বেশি চলে যায় আর এমসিকিউ খারাপ হয় তখন মানসিকভাবে হতাশ হয়ে পড়বে। যেটা বাকি পরীক্ষায় ব্যপক বিপর্যয় ঘটাতে পারে। 

তাই আগে তোমার সব থেকে 'স্ট্রং জোন' যেটা, যেই সাবজেক্ট পারো বেশি, সময় কম লাগবে ওইটা আগে দাগাবে। ফলে ভালোভাবে শুরু হলে মেজাজ ফুরফুরে হবে। এতে করে পরীক্ষাও ভালো হবে। 

কমার্সের বিষয়গুলোর পর বাংলা দাগাতে পারো। ওখানেও খুব একটা সময় লাগে না। কারণ খুব বেশি গ্রামার থাকে না বাংলায়। বেশির ভাগই বেসিক (ধ্বনিতত্ব,,শব্দতত্ব, বানান ও সমাস)। ওখানেও সময় বাঁচবে। তারপর দেখবা ইংরেজির প্রত্যেকটা এমসিকিউর জন্যে ১ মিনিটেরও বেশি সময় পাবে, যেটা তোমার প্রয়োজন। এটা সময় বাঁচানোর কৌশল। এখন পরীক্ষার জন্যে কিভাবে প্রস্তুতি নেয়া যায় সেটা নিচে শেয়ার করি-

হিসাববিজ্ঞান 
এডমিশনে শর্ট সিলেবাস বলতে কিছু নেই। দেখলা তো, মেডিকেল এক্সাম ফুল সিলেবাসে প্রশ্ন হয়েছিল + ঢাবি তে কখনোই শর্ট সিলেবাসে প্রশ্ন হয়নি। তাই যে কয়েকটা অধ্যায় দেয়া আছে তার বেসিক ক্লিয়ার রাখতে হবে। ঢাবির প্রশ্নই হয় বেসিকের দক্ষতার উপর। হিসাব বিজ্ঞানের ২টা পার্ট, একটা হচ্ছে থিউরিটিক্যাল আরেকটা ম্যাথেমেটিক্যাল। হিসাববিজ্ঞানে কিছু সিলেকটিভ জায়গা থেকে প্রশ্ন হয়। প্রশ্ন ব্যাংক অন্তত ৫ বার বুঝে শেষ করো। সম্ভব না হলে ৩ বার করলেই বুঝে যাবে কোন কোন জায়গা থেকে প্রশ্ন হয়। প্রশ্ন কিছু সিলেকটিভ টপিকের বাইরে যায় না বললেই চলে। 

আর তোমাকে কিছু শর্টকাট পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। তোমরা এতদিনে বুঝেও গেছো যে অনেক শর্টকাট টেকনিক মুখস্থ করতে হবে বুঝে বুঝে। নিয়মিত হিসাববিজ্ঞানের কোন চ্যাপ্টারের অর্ধেক পড়ে রাখতে হবে, না হলে ভুলে যাবে। হিসাব সমীকরণ ও লাভ-ক্ষতি হার নির্ণয়ের সূত্র যেন সব ঠোঁটস্থ থাকে; এই দুইটা সবচেয়ে বেশি পরীক্ষায় আসে। বেশি বেশি অনুশীলন করবে আর সিলেক্টেড কিছু শর্টকাট ট্রিকসের অনুসরণ করবে। তাহলে প্রশ্ন দেখলেই মাথায় খেলে যাবে কিভাবে করবে। 

ব্যবস্থাপনা 
ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র ও ২য় পত্র মিলিয়ে মোট ২৪টা অধ্যায়। সবগুলোতেই বেসিক ক্লিয়ার থাকা আবশ্যক। তুলনামূলক ২য় পত্র থেকে প্রশ্ন বেশি হয়। বিগত বছরের প্রশ্ন দেখলেই বুঝবে কোন কোন জায়গায় বারবার হিট করে। আবার বলছি প্রশ্ন ব্যাংকের কোনো বিকল্প নাই। সবচেয়ে বেশি কমন পাবা এই বিষয়ে। এতে তোমার সময় বেঁচে যাবে। 

ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং
সব বেসিক লেভেল থেকে প্রশ্ন হবে। কিন্তু ভালো প্রস্তুতিতে ফিন্যান্সে ভালো মার্ক উঠানো একটু কঠিন। কারণ হলো থিউরির পাহাড়। বিমা টপিকটা অবশ্যই ভালো করে দেখবে,ঝুঁকি ও আয়ের হার দেখতে ভুলবে না, বন্ড, হস্তান্তরযোগ্য দলিল, স্বল্প মেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেখে যাবে। এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ; মিস করা যাবে না। লিখিতের জন্যেও এই অধ্যায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ। রেগুলার পরীক্ষা দিয়ে যেকোনো ভালো প্রতিষ্ঠানে নিজেকে ও নিজের প্রস্তুতি যাচাই করতে হবে। 

মার্কেটিং 
সব টপিকস পড়া লাগে না, প্রশ্ন ব্যাংক দেখলে বুঝবে মার্কটিং ২য় পত্র পড়লেই চলবে। প্রশ্ন অধ্যায় ভিত্তিকভাবে যেগুলা আছে মুখস্থের মত করবে। অনেক কমন পড়বে। বই দাগিয়ে পড়তে হবে। কিভবে দাগাবে? মনে করো ১টা অধ্যায় পড়লে, আগে ওই অধ্যায়ের বিগত বছরের আসা প্রশ্নগুলা দেখবে, তারপর পড়া শুরু। 

এরপর এক রং-এর কলম দিয়ে প্রথমে একবার অধ্যায়টা পড়ে দাগাবে; রেস্ট নেবে না। সাথে সাথে দাগানো লাইনগুলার দিকে নজর দিবে; এই সময়ে অন্য বাকি সব স্কিপ। দেখবে কিছু মুখস্থ আছে কিছু নাই। এইবার পড়তে হয়তো ২০ মিনিট লাগবে। যেগুলো কঠিন পাবে একেবারে মুখস্থ হয় না ওগুলোর নিচে আরো একটা অন্য রং-এর কালি দিয়ে দাগ দিবে। পড়া শেষ করলে থামবে না। এখন ডাবল দাগানো লাইনগুলা পড়বে, দেখবে কমে আসছে কঠিন অংশ। এভাবে ৫-৬ মিনিটের মধ্যেই ১টা করে অধ্যায় পড়ার সক্ষমতা তৈরি হবে। 

বাংলা
বাংলায় যত ভালো প্রিপারেশন হোক না কেন, ছোট্ট ১ টা ধরা মোটামুটি অনেকেই খায়। কেননা প্রশ্ন একটু কঠিন হয়। বাংলা ৩টি পার্ট থেকে প্রশ্ন হয়। যথা: বাংলা প্রথম পত্র, বাংলা দ্বিতীয় পত্র, মুখস্থ পার্ট। বাংলায় ভালো করার জন্য গদ্য ও পদ্যের শব্দার্থ, শব্দতত্ত্ব, সমার্থক শব্দ দেখার কোন বিকল্প নেই। 

ইংরেজি 
আমরা সবাই জানি যে ইংরেজি এমসিকিউ তে পাস না করলে রিটেন খাতা দেখা হবে না। সি ইউনিটে ইংরেজি প্রথম পত্র থেকে কোন প্রশ্ন হয় না। শুধু ইংরেজি গ্রামার এবং মুখস্থ পার্ট দেখলেই চলে। চোখ বুলাতে হবে Conditional Sentence,Subject-verb Agreement,Spelling। 

সবশেষে বলবো পরীক্ষা দিবে প্রচুর। তাহলে সময় মেইনটেইন করার দক্ষতা বাড়বে। মডেল টেস্ট দিবে বেশি বেশি। দেখো কোন কোন জায়গায় তোমার সমস্যা ঠিক ওই জায়গাগুলোতে জোর দিবে । ক্যালকুলেটর যেহেতু নেই, হাতে-কলমে হিসাব করার জন্যে প্রচুর প্রাকটিস করতে হবে। তাহলে খুব ইজিলি হাতে-কলমেই করতে পারবে আশা করি। 

এই কয়েকদিন একটু কষ্ট করো। তুমি তোমার লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে ইনশাআল্লাহ। আর সবাই নিজ নিজ ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হও, দোয়া করো। কান্না করো সৃষ্টিকর্তার কাছে। তোমার চাহিদা জানান দিবে তাকে। শুভকামনা তোমাদের জন্য। দেখা হবে ক্যাম্পাসে ইনশাআল্লাহ।

লেখক: শিক্ষার্থী, ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়