পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হওয়ার সিঁড়ি ঢাবি শিক্ষক সমিতি
- ইরফান এইচ সায়েম
- প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২১, ০৩:২৯ PM , আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২১, ০৭:৫৯ PM
দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য️সহ শীর্ষ পদগুলোর সিঁড়ি হয়ে দাঁড়িয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। গত এক দশকে এই সমিতিতে যারাই আওয়ামীপন্থী নীল দল থেকে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছেন পরবর্তীতে তারাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ️পদ তথা উপাচার্য️, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বে এসেছেন। এছাড়া এই সময়ে ঢাবির শীর্ষ️ পদগুলোতে নিয়োগপ্রাপ্তরাও এই সমিতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
শিক্ষাবিদ এবং শিক্ষক রাজনীতি পর্যবেক্ষন করেন এমন ব্যক্তিরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষপদ পেতে শিক্ষকরা সক্রিয়ভাবে জাতীয় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। কিছু সুযোগ-সুবিধা লাভের জন্যই তারা এই দলীয় অবস্থান নেন। প্রশাসনিক পদে উপরে উঠার জন্য শিক্ষক সমিতি তাঁদের জন্য বড় সিঁড়ি|
প্রায় দুই মেয়াদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করা অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ১৯৯৪ ও ১৯৯৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং ২০০৪ ও ২০০৫ সালে ঐ সমিতির নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন। তিনি ২০০৯ সালের ১৭ জানুয়ারিতে সাময়িকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পান। পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্বে থেকে ২০১৩ সালে ফের উপাচার্য নির্বাচিত হন তিনি।
বর্ত️মান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ২০০৪, ২০০৫ ও ২০০৬ মেয়াদে তিন দফায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকীর পর ২০১৭ সাল থেকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইবার উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনিও এই সমিতির নেতা ছিলেন।
শুধু তাই নয়, দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করা শিক্ষক ছিলেন এই সমিতির নেতৃত্বে। সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন। তাছাড়া বর্তমানে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করা অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য️ অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এস এম ইমামুল হক, ঢাবির সাবেক উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সহিদ আখতার হুসাইন, সাবেক উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমাদ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম ওহিদুজ্জামান, বর্ত️মান প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানীও সমিতির বিভিন্ন পদে ছিলেন।
এদিকে, টানা ৪ বার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) হিসেবে নিয়োগ পান আওয়ামী লীগ সমর্থ️ক শিক্ষকদের নীল দলের শিক্ষক অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। ছিলেন দলটির আহবায়কও। আওয়ামীপন্থী এই শিক্ষক এর আগে সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয়েছিলেন।
শুধু তারাই নয়, ২০০৯ সালে বর্ত️মান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই সমিতিতে আওয়ামী লীগ সর্ম️ক শিক্ষকদের হয়ে নির্বাচনে যারাই জয়ী হয়েছেন পরবর্তীতে তারাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ️পদ থেকে শুরু করে প্রশাসনিক বিভিন্ন পদের নেতৃত্বে আসছেন। শুধু তাই নয়, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ️পদও নিয়োগের নজির রয়েছে।
সর্ব️শেষ বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর দে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির ২০২০ সালের কার্য️করী পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীপন্থী প্যানেল থেকে সদস্য পদে জয়ী হয়েছিলেন।
ওই কমিটিতে একটি ছাড়া বাকি সব পদে জয় পেয়েছিলেন আওয়ামীপন্থী নীল দলের প্রার্থীরা। সভাপতি পদে নির্বাচিত অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল বর্ত️মানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের (শিক্ষা) দায়িত্বে রয়েছেন। আর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া পরের বছরের নির্বাচনে (২০২১) সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছেন এবং আসন্ন নির্বাচনেও (২০২২) তিনি নীলদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী।
ওই কমিটির (২০২০) যুগ্ম সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক জেড এম পারভেজ সাজ্জাদকে চলতি বছরের শুরুতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জ এর প্রথম উপাচার্য️ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
আর ওই কমিটির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মুহাম্মাদ আবদুল মঈন বর্ত️মানে বিজনেস অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিনের দায়িত্ব পালন করছেন। তাছাড়া সদস্যদের মধ্যে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক কে এম সাইফুল ইসলাম খান বর্ত️মানে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ এফ রহমান হলের প্রভোস্ট, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধক্ষ, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মো. আফতাব আলী শেখ বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তার আগের বছর সমিতির ২০১৯ সালের কার্য️করী পরিষদ নির্বাচনে ১৫টি পদের মধ্যে ১৪ পদেই জিতেছিল আওয়ামী লীগ-সমর্থ️ক শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল৷ ওই কমিটিতে অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম পুননির্বাচিত হয়েছিলেন৷
এদিকে, ২০২০ সালের মে মাসে পুজিঁবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে নিয়োগ দেয় সরকার। ওই কমিটির নীল দল থেকে সহ-সভাপতি পদে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. ইমদাদুল হক বর্ত️মানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছেন।
সদস্য পদে জয়ী হওয়া অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাবিতা রিজওয়ানা রহমান বর্ত️মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেন্টার অফ এক্সিলেন্স ইন টিচিং এন্ড লার্নিংয়ের পরিচালক। এর আগে তিনি সুফিয়া কামাল হলের প্রভোস্টের দায়িত্বে ছিলেন। আরেক সদস্য অধ্যাপক মো. জিয়াউর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের দুই মেয়াদের প্রভোস্ট ছিলেন এবং বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ২০১৮ সালের কার্য️নির্বাহী পরিষদের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় পায় নীল দল। সভাপতি হিসেবে নীল দলের প্রার্থী অধ্যাপক মাকসুদ কামাল ও সাধারণ সম্পাদক পদে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম নির্বাচিত হয়েছেন। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষসহ কার্য️নির্বাহী পরিষদের ১৫ জনের মধ্যে ১৪ জন নির্বাচিত হয়েছেন নীল দল থেকে। ওই কমিটিতে নীল দল থেকে সদস্য পদে জয়ী হওয়া অধ্যাপক মুহাম্মাদ সামাদ বর্ত️মানে ঢাবির উপ-উপাচার্যের (প্রশাসন) দায়িত্ব পালন করছেন।
২০১৭ সালের কার্য️করী পরিষদ নির্বাচনে সব ক’টি পদে আওয়ামী লীগ সমর্থি️ত নীল দলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছিলেন। এতে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রহমত উল্যাহ। ওই কমিটিতে সদস্য পদে জয়ী হওয়া অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরীন বর্ত️মানে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য️ (শিক্ষা)।
এর আগের বছর ২০১৬ সালের নির্বাচনেও সব ছিলো আওয়ামীপন্থিদের হাতেই। সমিতির সভাপতি পদে তৃতীয়বারের অর্থ️নীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এবং সাধারণ সম্পাদক পদে অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে। বর্ত️মানে তিনি ২য় মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে আছেন।
২০১৫ সালের নির্বাচনেও সব ছিলো আওয়ামীপন্থিদের হাতেই। সমিতির সভাপতি পদে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এবং সাধারণ সম্পাদক পদে অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল নির্বাচিত হয়েছিলেন। এই কমিটিতে সহ-সভাপতি পদে নীল দলের জয়ী প্রার্থী ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের অধ্যাপক হাসিবুর রশিদ বর্ত️মানে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছেন।
২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫টি পদের মধ্যে ৯টিই আওয়ামীপন্থিদের হাতেই। এবারও সভাপতি পদে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এবং সাধারণ সম্পাদক পদে অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল নির্বাচিত হয়েছিলেন।
২০১৩ সালের নির্বাচনে সভাপতি ৮টি নীল দল এবং সাধারণ সম্পাদকসহ ৭টি বিনপিপন্থী সাদা দল জয়ী হয়েছিল। সভাপতি পদে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ নীল দলের পক্ষে জয়ী হয়েছিলেন।
শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, বর্তমানে যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ অবস্থানে যেতে চাই তারা ভীষণভাবে বাইরের রাজনৈতিক দল দ্বারা প্রভাবিত। তারা আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জামায়াতের সাথে যুক্ত। আমি মনে করি, কিছু সুযোগ-সুবিধা লাভের জন্যই তারা এই দলীয় অবস্থান নেয়।
“যদি তারা সৎভাবে দল করতো তাহলেই রাজনৈতিক দলগুলো চরিত্র আরও উন্নত হতো এবং শিক্ষকদের ভূমিকাও সঠিক থাকতো। কিন্তু বাস্তব অবস্থাটা একবারে ভিন্ন। একসময় অধ্যাপক আহমেদ শরীফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন। তিনি দল নিরপেক্ষ, বস্তুনিষ্ঠ অবস্থানে থেকে কথা বলতেন এবং কাজ করতেন। তিনিও শিক্ষক সমিতির নেতৃত্ব দিয়েছেন কিন্তু এরকম কিছু পাওয়ার জন্য কখনো মাথা নত করেননি।”
তিনি আরও বলেন, এখন শিক্ষক সমিতির নির্বাচন আসছে নির্বাচন হবে কিন্তু এই দলীয়করণটা থাকবে। দল করুক তাতে আপত্তির কিছু নেই কিন্তু দল করে দলের নেতৃত্ব এবং চিন্তাধারা সবার জন্য কাজ করে থাকলে তা হবে প্রসংশনীয়। কিন্তু বাস্তবতায় রাজনীতিবিদদের মধ্যে এরকম চিন্তা দুর্লভ। তবে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মার্যাদা উন্নত হোক, তাদের সফলতা হোক, সেটাই কামনা করছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়তপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলে আহবায়ক ও সমিতির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান বলেন, শিক্ষক সমিতির হওয়া উচিত ছিলো শিক্ষকবান্ধব এবং বিশ্ববিদ্যালয় বান্ধব। কিন্তু সবাইতো জানে সমিতি এই মুহুর্তে কোন অবস্থায় আছে। তারপর আমরা ভোটদের প্রতি যথেষ্ঠ শ্রদ্ধাশীল। তারা যে রায় দেবেন সেটি আমরা মেনে নেবো।
ঢাবির নীল দলের প্যানেল থেকে এবার সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ও পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষপদগুলো মূলত একাডেমিক এবং প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা দেখে সরকারের পক্ষ থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষক সমিতিতে না থেকেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। যেমন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য, উনি কিন্তু সমিতিতে ছিলেন না। আবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কিন্তু সমিতির সহ-সভাপতি ছিলেন।
ঢাবির নীল দলের আহবায়ক অধ্যাপক ড. আব্দুস সামাদ বলেন, সমিতির শীর্ষ পদে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পদে যাওয়ার নজির খুবই কম। তবে তারা যখন সমিতিতে থাকেন না তখন সেটি দেখা যায়।
তিনি আরও বলেন, সরকারের তো বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে হয়। একটি বিশ্ববিদ্যালয় চালানো মানে হচ্ছে, তাকে নেতৃত্বের গুণাবলী সম্পন্ন হতে হবে। অমাদের এখানে সমিতি যারা শীর্ষ পদে থাকেন তারা কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়ে আসেন। যেমন হলের হাউজ টিউটর থেকে শুরু করে প্রভোস্ট, সিনেট সদস্য, সিন্ডিকেট সদস্য, অনুষদের ডিন তারপর এসে সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হয়।
“একটি বিশ্ববিদ্যালয় চালানো জন্য প্রশাসনিক দক্ষতার একটি বিষয় থাকছে। এসব অভিজ্ঞতা না থাকলে কাউকে যদি হঠাৎ একাডেমিক দিক থেকে খুবই সিনিয়র তাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয় তিনি কিন্তু চালাতে পারবেন না।”
সাদা দলের সাবেক আহবায়ক ও ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে শিক্ষক সমিতি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ️ পদগুলোয় নিয়োগ পাচ্ছে সেটা সত্য। কিন্তু নিয়োগ পেয়ে তারা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছে কিনা সেটিই প্রশ্নবিদ্ধ। বিএনপির আমলেও এমন নিয়োগের কিছু কিছু নজির ছিল কিন্তু তারা চেয়ারে বসে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, আমরা নীল দলের শিক্ষকরা ঐক্যবদ্ধ আছি। আশা করছি, নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করবো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি ও বুদ্ধিস্ট স্ট্যাডিজ বিভাগের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ড. সুকুমল বড়ুয়া বলেন, এটাই সত্য যে, যেই সরকার ক্ষমতায় থাকে সেই সরকারের নিয়ন্ত্রণে সবাকিছু থাকে। সেটাই স্বাভাবিক।
বিএনপির আমলেও একই অবস্থা ছিল, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির সময় একটু অন্য ধরণের ছিল। কারণ তখন এস এম এ ফায়েজ স্যার (ঢাবির সাবেক উপাচার্য) ছিলেন। তখন নীল দল থেকে বিভিন্ন ধরণের দাবি-দাওয়া নিয়ে যেতো তা তিনি পূরণ করতেন। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে তাদের প্রাধান্য দিয়ে থাকতেন।
‘‘এখন শুধু শিক্ষকরা না, সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে আগের মতো অবস্থা এখন নেই। দিন দিন মানুষের নীতি-নৈতিকতা যেমন অধঃপতন হচ্ছে, সবকছিু মিলিয়ে কেমন সব জায়গায় একটি প্রশ্নবিদ্ধ তৈরি হচ্ছে। সেটি শিক্ষাঙ্গন থেকে শুরু করে সমাজের সব জায়গাতে। বর্তমানে সমাজের সামগ্রিক চিত্র হচ্ছে এটা। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও এদিক থেকে বাদ নয়।’’