টানা ৫ প্রিলি ব্যর্থ, বন্ধুর অনুপ্রেরণায় শিক্ষা ক্যাডারে প্রথম ঢাবি ছাত্র মোহাম্মদ উল্লাহ

মোহাম্মদ উল্লাহ
মোহাম্মদ উল্লাহ  © টিডিসি সম্পাদিত

টানা ৫ বিসিএসে ব্যর্থতার পর ৪৪তম বিসিএসে জয় করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী মোহাম্মদ উল্লাহ। ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলে তিনি শিক্ষা ক্যাডারে (রসায়ন) প্রথম হয়েছেন। তিনি ঢাবির রসায়ন বিভাগের ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। বর্তমানে তিনি আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে রসায়নের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছেন। বিসিএস প্রস্তুতির শুরু, সফলতা, ব্যর্থতা নিয়ে তিনি মুখোমুখি হয়েছেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের। তার গল্প শুনেছেন চবি প্রদায়ক শেখ আব্দুল্লাহ্ ইয়াছিন—

আপনার বিসিএস প্রস্তুতি কবে থেকে শুরু?
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই বিসিএস প্রস্তুতি শুরু করি। ২০১৭ সালের ৩৮ তম বিসিএস থেকেই আমার বিসিএস প্রস্তুতির যাত্রা শুরু। 

বিসিএস ক্যাডার হওয়ার পেছনে অনুপ্রেরণা কী ছিল?
ইন্টারমিডিয়েটে পড়ার সময় আমার রসায়নের প্রতি ভালোবাসা জন্মায়। তখন থেকে সিদ্ধান্ত নেই রসায়ন নিয়েই বাকি জীবন থাকবো। তাই ইন্টারমিডিয়েট থেকেই আমার টিচার হবার স্বপ্ন। সে সাথে  আব্বু-আম্মু দুজনে টিচার ছিলেন। তাদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছি। বিসিএস দেওয়ার স্বপ্নটা তৈরি হয় ভাইয়াকে দেখার পর। ভাইয়া ৩৪ বিসিএস পাস করার পর কীভাবে  প্রশংসা কুড়িয়েছে আমার মনে ছিল। আর আমার বাবা-মা আর চারপাশে মানুষজন আমাকে বারবার মনে করিয়ে দিয়েছে কলেজের চাকরি থেকে বিসিএস দেওয়াটা অনেক সম্মানের। সেখান থেকেই বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন শুরু।

প্রিলি, রিটেন ও  ভাইভা নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা জানতে চাই?
আমি ৩৮ তম বিসিএস থেকে প্রিলিমিনারি দেওয়া শুরু করি। কিন্তু একবারও সফল হয়নি। শেষ পর্যন্ত ৪৪ বিসিএসের  প্রিলিতে উত্তীর্ণ হই। ঠিক তখন থেকে আমি সিদ্ধান্ত নিই, আমি আর প্রিলি পরীক্ষা দিতে চাই না। ইতোমধ্যে আমি তখন চাকরি জীবন নিয়ে অনেক ব্যস্ত এবং দ্বিতীয় সন্তানের বাবা হতে চলেছি। তাই ঠিক করলাম এবারই শেষ। যেভাবেই পারি লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় পাস করার চেষ্টা করব। সেই লক্ষ্য মাথায় নিয়ে আমি পরবর্তী বিসিএসগুলোতে আবেদনই করিনি। 

কলেজের ব্যস্ততার কারণে লিখিত পরীক্ষার জন্য কোনো কোচিংয়ে ভর্তি হব সেই সুযোগ পাইনি। তাই বিভিন্ন অনলাইন কোর্সে ভর্তি হয়েছিলাম। নিয়মিত ক্লাস করতে পারতাম না কিন্তু ক্লাস রেকর্ড করে রাখতাম এবং পরবর্তীতে সেগুলো প্র্যাকটিস করতাম। এরপর যেদিন লিখিত পরীক্ষায় পাশ করলাম, সেদিন থেকে সম্পূর্ণভাবে  ভাইভা প্রস্তুতিতে মনোনিবেশ করি। আমি জানতাম এটাই আমার শেষ বিসিএস। 

তাই পূর্বে যারা ভাইভা পাস করেছে তাদের সাথে কথা বলে অভিজ্ঞতা অর্জনের চেষ্টা করি। ভাইভা প্রস্তুতি হিসেবে একটি কোচিংয়ে দুটি মক ভাইভায় অংশগ্রহণ করি যা আমার ছোট ছোট ভুল সংশোধন করতে উপকার করেছে। সেইসঙ্গে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। পরীক্ষার দিন প্রথম ভাইভাই আমার ছিল। সম্পূর্ণ ভাইভা ছিল ইংরেজিতে। বেশির ভাগই সাবজেক্ট রিলেটেড। কিছু ভুল উত্তরও দিয়েছিলাম। সবশেষে বোর্ডের চেয়ারম্যান স্যারের হাসিমুখে ‘আপনি আসতে পারেন’ শুনে বুঝতে পারি আমি ভালোই করেছি। আলহামদুলিল্লাহ এখন তারই ফলাফল পেলাম। 

এমন কোনো ব্যক্তি আছে যিনি আপনাকে সফল হতে অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন?
আমি রিটেন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর আমার বন্ধু জোবায়ের (৪১তম বিসিএস- সাধারণ শিক্ষা) প্রায় এক ঘণ্টা ধরে আমাকে অনুপ্রেরণা দেয়। একইসঙ্গে ভাইভার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করে দেয়। সে আমাকে মক ভাইভা দেওয়ার পরামর্শ দেয়। আমার মধ্যে ওভার কনফিডেন্স যেন না আসে, সেই ব্যাপারে সতর্ক করে। ‘তুমি ভাইভায় ফার্স্ট হবা’—তার এই কথাটা টনিকের মতো কাজ করেছিল। 

বিসিএস প্রস্তুতিতে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছিল কী?
চকলেজের একটা চাপ ছিল, বাসায় ফিরে বাচ্চার সাথে খেলাধুলা, সংসার সামলানোর কাজ তো ছিলোই। কিন্তু তাতে পড়াশোনায়  ক্ষতি হতে দেইনি। আমার স্ত্রী আমাকে সবরকম সহযোগিতা করেছে। আমার কষ্টের সময়গুলোতে সাহস দিয়েছে, পাশে থেকেছে। 

আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
দেশের সকল শিক্ষার্থী যেন সহজে রসায়ন শিখতে পারে তা নিয়ে কাজ করা। আর খুব দ্রুতই পিএইচডি সম্পন্ন করা। রসায়ন বিষয়ে দেশের সেরা শিক্ষক হতে চাই।

বিসিএস প্রত্যাশীদের উদ্দেশ্যে আপনার পরামর্শ কী?
লেগে থাকুন। নিজের শক্তিশালী এবং দুর্বল দিকগুলো বোঝার চেষ্টা করুন। মানুষ আপনাকে টেনে নিচে নামাতে চাইবে। নিজেকে উঁচুতে রাখুন। তবেই সফল হওয়াটা সহজ।


সর্বশেষ সংবাদ