মনের যুদ্ধে হৃদয় জয় করে দ্বিতীয় রানার আপ ইউআইইউর ‘নিউরনস’

‘ব্যাটল অব মাইন্ড’ প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় রানার আপ হয়েছে ইউআইইউ-এর তিন শিক্ষার্থী
‘ব্যাটল অব মাইন্ড’ প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় রানার আপ হয়েছে ইউআইইউ-এর তিন শিক্ষার্থী  © সংগৃহীত

রাজধানীর নতুন বাজার থেকে পূর্বদিকে কিছুদূর এগোলেই হাতের ডান পাশে চোখে পড়বে সবুজ খোলা প্রান্তর। সবুজ প্রান্তরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে সুউচ্চ সুরম্য ভবন। আশপাশে খেলার মাঠ ও অন্যান্য স্থাপনা। অত্যন্ত সুন্দর ও পরিপাটি করে সাজানো জায়গা। এটি বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ইন্টারন্যশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ)। সম্প্রতি এই ক্যাম্পাসে গেলে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন গর্বিত শিক্ষার্থীর সঙ্গে। আন্তর্জাতিক এক প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় রানার আপ হয়েছেন তারা। তাদের অর্জন ও সাফল্য ইউনাইটেড ইন্টারন্যশনাল ইউনিভার্সিটিকে (ইউআইইউ) যেমন গর্বিত ও আনন্দিত করেছে, তেমনই সাড়া জাগিয়েছে তরুণদের মাঝে।

সারা বিশ্বেই নতুন প্রজন্মের মধ্যে মেধাবী ও সৃজনশীল ব্যবসায়িক নেতৃত্ব গড়ে তোলার স্বনামধন্য প্ল্যাটফর্ম ‘ব্যাটেল অব মাইন্ড’। এ প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় রানার আপ হয়েছে ইউনাইটেড ইন্টারন্যশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) তিন সদস্যের টিম ‘নিউরনস’। এ টিমের সদস্যা হলেন আবির মোহাম্মদ সাদ, সাদিয়া আহমেদ এবং মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) ফারহান ইশতিয়াক। ইউআইইউ থেকে প্রথমবারের মতো সেখানে দ্বিতীয় রানার আপ হয়।

তরুণদের দক্ষতা বিকাশের ক্ষেত্রে এক অনন্য মাইলফলক এই ‘ব্যাটেল অব মাইন্ড’ প্রতিযোগিতা। আগামী প্রজন্ম কীভাবে বিভিন্ন খাতে নতুন মাত্রা যুক্ত করছে এবং উদ্ভাবনী ধারণা, অগ্রণী প্রযুক্তি ও দূরদর্শী সমাধানের মাধ্যমে সমাজের ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখছে–তাই তুলে ধরে এই প্লাটফর্ম।

SP_L9933

প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফিনালে পর্বে নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করছেন টিম নিউরনসের তিন সদস্য

সম্প্রতি ‘ব্যাটল অব মাইন্ডস’-এর ২১তম সংস্করণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৭০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ হাজার ৭ শ’রও বেশি প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন। ২৮ নভেম্বর রাজধানীর র‍্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনের গ্র্যান্ড বলরুমে অনুষ্ঠিত হয় গ্রান্ড ফিনালে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। বাংলাদেশ থেকে চ্যাম্পিয়ন দলটি বৈশ্বিক পর্বে ২৫টি দেশের বিজয়ী দলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে। বৈশ্বিক পর্বের বিজয়ীরা তাদের উপস্থাপিত ধারণা বাস্তবায়নের জন্য সিড ফান্ড হিসেবে ৫০ হাজার ব্রিটিশ পাউন্ড পাবে।

প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী দলগুলো একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও প্রজেক্ট উপস্থাপন করে। তারপর বিভিন্ন রাউন্ট অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠিত হয় বুট ক্যাম্প। প্রতিটি রাউন্ডে বিজয়ী দল নিয়ে হয় গ্রান্ড ফিনালে। তাতে অংশ নেয় ৫টি দল। সেখান থেকে দ্বিতীয় রানার আপ দল হয়েছে ইউনাইটেড ইন্টারন্যশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) তিন সদস্যের টিম ‘নিউরনস’।

টিম নিউরনস যে আইডিয়া উপস্থাপন ও বিশ্লেষন করে, সেটি মূলত নিউরোমার্কেটিং। এর মাধ্যমে ভোক্তার অবচেতন মন বিশ্লেষণ ও  ভোক্তাদের আচরণ বিশ্লেষণ করা হয়। ভোক্তার পছন্দ-অপছন্দ বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে খুঁজে বের করা হয়। পাশাপাশি ভোক্তার চাহিদা অনুসারে পণ্য উপস্থাপন করা হয়। এআই প্রযুক্তির সহায়তায় টিম নিউরনস উপস্থাপন করে ভিন্নধর্মী এই আইডিয়া। 

‘ব্যাটেল অফ মাইন্ড’ প্রতিযোগিতায় টিম নিউরনস দ্বিতীয় রানার আপ হওয়ার জার্নিটা সহজ ছিল না। ছিল বেশ প্রতিযোগিতাপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা মেধাবী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত দল এতে অংশ নেয়। তাদের মধ্যে ব্যবসাক্ষেত্রে সেরা উদ্ভাবনী ধারণা, অগ্রণী প্রযুক্তি ও দূরদর্শী সমস্যা সমাধনের পরিকল্পনা উপস্থাপন করে বিজয়ী হয় ইউনাইটেড ইন্টারন্যশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) তিন সদস্যের টিম ‘নিউরনস’।

টিম নিউরনসের অন্যতম সদস্য ইউনাইটেড ইন্টারন্যশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থী আবির আহমেদ সাদ বলেন, আমাদের জার্নিটা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং ছিল। কেননা, প্রতিযোগিতা ছিল অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। আমরা যে প্রজেক্ট উপস্থাপন করি, সেটা কার্যকর কিনা, বিভিন্নভাবে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। শেষপর্যন্ত তা বিচারকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। আমাদের প্রকল্পটি ভোক্তাদের আচরণকে আরও ভালভাবে বুঝতে এবং বিপণন কৌশলগুলিকে উন্নত করতে সাহায্য করবে আশা করি।

প্রতিযোগিতার অংশ নেন আবির মোহাম্মদ সাদ, সাদিয়া আহমেদ এবং ফারহান ইশতিয়াক

গ্র্যান্ড ফিনালের আগে অনুষ্ঠিত হয় বুট-ক্যাম্প। সেখানে দলবদ্ধভাবে কাজ করা ও অল্প সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধানের উপায় বের করতে হয়। বিভিন্ন রাউন্ড শেষে সেমি-ফাইনাল ও শেষে গ্রান্ড ফিনালে অনুষ্ঠিত হয়। টিম নিউরনসের যাত্রা বর্ণনা করে ইউনাইটেড ইন্টারন্যশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থী সাদিয়া আহমেদ বলেন, সেমি-ফাইনাল পর্বটি ছিল রোমাঞ্চকর এবং চ্যালেঞ্জিং। প্রথম রাউন্ডে আমরা বিচারক প্যানেলের কাছে আমাদের নিউরোমার্কেটিং ব্যবসার ধারণা তুলে ধরেছিলাম। দ্বিতীয় রাউন্ড এসে স্কেচ ও পেইন্টিসের মাধ্যমে আমা তা উপস্থাপন করেছিলাম। ১২টি সেমি-ফাইনালিস্ট দলের মধ্যে মাত্র পাঁচটি গ্র্যান্ড ফাইনালের জন্য নির্বাচিত হয়েছিল। টিম নিউরন তাদের মধ্যে থাকতে পেরে গর্বিত। ফাইনালে আমরা বিচারক এবং সম্মানিত শ্রোতাদের কাছে আমাদের চূড়ান্ত বক্তব্য ও আইডিয়া উপস্থাপন করেছিলাম।

টিম নিউরনসের প্রকল্প ব্যাখা করে ফারহান ইশতিয়াক বলেন, অ্যাডভান্স তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্যে আমরা যে প্রকল্প উপস্থাপন করি, তা ভোক্তাদের আচরণ ও চাহিদা অনুসারে কাজ করবে। আমরা দীর্ঘ গবেষণা করে তা বের করা চেষ্টা করেছি। ভবিষ্যৎতে তা বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করার পরিকল্পনা আছে আমাদের। আমাদের নিউরোমার্কেটিং ধারণা শুধুমাত্র ভোক্তাদের কল্পনাকে ধারণ করে না বরং বিজ্ঞানের সাথে উদ্ভাবনের সমন্বয়ে তৈরি করেছে নতুন মাত্রা।  

ইউনাইটেড ইন্টারন্যশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) জনসংযোগ বিভাগের প্রধান ও পরিচালক আবু সাদাত শিক্ষার্থীদের সাফল্যে আনন্দ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা দেশে-বিদেশে নানা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আমরা তাদের সর্বাতক সহযোগিতা করি। ইতোমধ্যে ইউআইইউ অনেক শিক্ষার্থী দেশের জাতীয় প্রতিযোগিতায় যেমন বিজয়ী হয়েছে, তেমনই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি করেছে।

ব্যাটেল অব মাইন্ডস প্রতিযোগিতা ২০০৪ সাল থেকে তরুণদের প্রতিভা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এ প্রতিযোগিতা তরুণদের উদ্ভাবনী ধারণা, অগ্রণী প্রযুক্তি ও দূরদর্শী সমাধানের মাধ্যমে পৃথিবীতে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসার সুযোগ প্রদান করছে। ব্যাটেল অব মাইন্ডসের প্রায় ২ হাজার সদস্যের একটি সমৃদ্ধ ও বিস্তৃত নেটওয়ার্ক রয়েছে। ধারাবাহিকভাবেই এর অ্যালামনাইরা তাদের কাজের জন্য খ্যাতি অর্জনের পাশাপাশি পেশাগত জায়গায় এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন খাতে নেতৃত্ব দান করে অসামান্য ভূমিকা রেখে চলেছেন।


সর্বশেষ সংবাদ