১২৩টি পুরস্কার পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাক পাওয়া সাদিয়া

সাদিয়া ইয়াসমিন শ্রাবণী
সাদিয়া ইয়াসমিন শ্রাবণী  © ফাইল ফটো

বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে ২০২২ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন সাদিয়া ইয়াসমিন শ্রাবণী। শৈশবের শুরুতে পাইলট হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও তা পূরণ হয়নি ক্যাডেট কলেজে ভর্তির সুযোগ না পাওয়ায়। তবে তাতে থেমে যাননি স্বপ্নবাজ এ তরুণী। ভালো কোনো বিদ্যালয়ে না পড়তে পারার আক্ষেপ থাকলেও তিনি পিছিয়ে থাকেননি সহশিক্ষামূলক নানা প্রতিযোগিতায়। ‘শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী’হওয়ার গৌরবের পাশাপাশি কৃতী এ শিক্ষার্থীর রয়েছে আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ের ১২৩টি পুরস্কার। সম্প্রতি তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য সুযোগ পেয়েছেন আমেরিকার বিখ্যাত লিবারেল আর্টস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। 

আমার শৈশব ও বেড়ে ওঠা বগুড়া জেলার কাহালু উপজেলায় জানিয়ে সাদিয়া বলেন, শৈশব অনেক ধরা বাঁধা নিয়মের মধ্যেই কেটেছে। বাইরের মানুষের সাথে মেশা হয়ে ওঠেনি। স্কুলের দিনগুলো খুব একটা রঙিন ছিল না। সামাজিকতা, মানুষের সাথে কথা বলা—এসব শিখেছি টেলিভিশন দেখে। তবে স্কুলের সব অ্যাক্টিভিটিসের সাথে নিজেকে নিয়োজিত করার চেষ্টা করেছি ছোটবেলা থেকে। তৃতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে আমি প্রথম কোনো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি।

কাহালু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির পাঠ শেষ করেন। এরপর আমি ক্যাডেট কোচিংয়ে ভর্তি হয়েছিলেন সাদিয়া। তিনি বলেন, আমার পাইলট হওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমি ক্যাডেট কলেজে চান্স পাইনি। এরপর বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু সেখানেও সুযোগ হয়নি। এরপর আমি বাবার স্কুল কাহালু সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হই। ওখান থেকেই এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি ২০২০ সালে। এসএসসির পর করোনার কারণে আমার সেশন দেরি হয় এবং আমি বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হই। সেখান থেকে ২০২২ সালে আমি এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছি।

আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সম্পর্কে তিনি বলেন, শুরুতে আমার পরিবারের পক্ষ থেকে আমেরিকায় পড়তে যাওয়ার পক্ষে সমর্থন না থাকায় আমার এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি ও বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবেদন একসাথে করতে হয়েছে। আমি আমার পরীক্ষা এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবেদন এবং তাদের সাথে সাক্ষাৎকারসহ যাবতীয় কাজ একসাথেই করেছি। এরপর থেকে আমার পরিবারও আমাকে সমর্থন দিতে শুরু করে। আমার এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে আগস্ট থেকে নভেম্বরে চলে আসে, এইচএসসি শুরু হয় নভেম্বরের ৬ তারিখে, আমি আইইএলটিএস পরীক্ষা দিয়েছিলাম নভেম্বরের এক তারিখে। আমি সবকিছুই এইচএসসি পরীক্ষার মধ্যেই করেছি।

আমার এইচএসসি পরীক্ষার ব্যবহারিক পরীক্ষা চলাকালে সুইট বেয়ার কলেজের ফলাফল পেয়েছিলাম। তবে আমি যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যাশা করছিলাম সেখান থেকে প্রত্যাখাত হওয়ার পর আমি অনেকটা হতাশায় পড়ি। আমি ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছিলাম এবং আমেরিকার ১৩টি থেকে সম্পূর্ণ স্কলারশিপসহ ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। প্রথম কোনো বাংলাদেশি শিক্ষার্থী হিসেবে আমি স্ক্রিপস ক্লারমন্ট কলেজে সুযোগ পেয়েছি। সাধারণ শিক্ষাক্রমে পড়ে এ অর্জন আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।

সহশিক্ষামূলক কার্যক্রম সম্পর্কে সাদিয়া বলেন, আমি প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা (পিইসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করেছিলাম এবং সবগুলোতেই ট্যালেন্টপুলসহ বৃত্তি পেয়েছিলাম। এছাড়াও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ৯২ শতাংশ নম্বর নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছিলাম।

আমি ছোটবেলা থেকেই সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমের সাথে যুক্ত ছিলাম। তৃতীয় শ্রেণিতে থাকাকালে আমি বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় উপজেলা পর্যায়ে ৩য় হয়েছিলাম— এটি ছিল আমার জন্য বড় অনুপ্রেরণা। এরপর আমি উপজেলা, জেলা, বিভাগ থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ে অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করি। ২০১৭ সালের শিক্ষা সপ্তাহে আমি বগুড়া জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী হয়েছিলাম।

২০১৮ সালে বাংলাদেশ কিশোর কিশোরী প্রতিযোগিতায় আমি জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হই। এরপর আমি পিকেএসএফ’র ন্যাশনাল দূত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। কবিতার পাশাপাশি আমি নাচও করেছি, আবার গানও করেছি। সাথে নাটক ও করেছি। এসবেও অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। আমি জেলাতে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী হয়েছি ৫বার, বিভাগে ২বার। ম্যাথ অলিম্পিয়াড, বায়োলজি অলিম্পিয়াড, ফিজিক্স অলিম্পিয়াডে আমি নিয়মিত অংশগ্রহণ করেছি। এ বছর আমি ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল সায়েন্স অলিম্পিয়াডে অনারেবল মেনশন পেয়েছি বাংলাদেশের হয়ে। এছাড়া আমার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও বেশকিছু অর্জন রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, শুরুতে বাংলাদেশের অন্যান্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতো আমারও বাংলাদেশেই উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন ছিল। এরপর আমার কলেজ থেকে একজন আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়ার বিষয়টি আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। তখন আমার চেষ্টা করার বিষয়টি মাথায় আসে। আমি বিষয়গুলো নিয়ে ভালোভাবে গবেষণা করেছি এবং অগ্রজরা এক্ষেত্রে আমাকে সহায়তা করেছে। আমি নিজেকে সমৃদ্ধ করেছি, চেষ্টা করেছি এবং সফল হয়েছি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence