বিভাগে প্রথম হয়েও শিক্ষক হতে না পারা নূশরাত হচ্ছেন বিসিএস ক্যাডার 

‘তদবির না থাকায়’ বিভাগে প্রথম হয়েও শিক্ষক হতে পারেননি নূশরাত। অধ্যবসায়ে হলেন বিসিএস ক্যাডার
‘তদবির না থাকায়’ বিভাগে প্রথম হয়েও শিক্ষক হতে পারেননি নূশরাত। অধ্যবসায়ে হলেন বিসিএস ক্যাডার  © সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে জীববিজ্ঞান অনুষদের মনোবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন নূশরাত জাহান। অনার্সে ৩.৮০৯ এবং মাস্টার্সে ৩.৮৫৯ (থিসিস) সিজিপিএ নিয়ে বিভাগে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ভালো ফলাফল করলেও স্বপ্ন ভেঙে যেতে সময় লাগেনি তার।

২০১৮ সালে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হওয়ার জন্য ভাইভায় অংশগ্রহণ করেছিলেন নূশরাত। তাঁর সঙ্গে অন্য প্রার্থী যারা ছিলেন, তাদের সবার থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের ফলাফল ভালো ছিল। তবে তা সত্বেও তিনি শিক্ষক হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। নিজের জীবনের গল্প দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে এভাবেই জানালেন নূশরাত জাহান।

যদিও শিক্ষকতার স্বপ্নটা পূরণ হয়েছে নূশরাতের। ৪৩তম বিসিএসে মনোবিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। মেধাক্রম ছিল চার। তিনি স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের পড়াশোনা শেষ করেছেন লালমনিরহাট জেলা থেকে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন। আশা ছিল বড় বোনের মতো চিকিৎসক হবেন।

তবে সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছে ছিল আলাদা। মেডিকেলে সুযোগ না পেয়ে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার বাবা সব সময় বলতেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো রেজাল্ট করলে তিনি শিক্ষক হতে পারবেন। সে স্বপ্ন চোখে নিয়েই শুরু করেন পড়াশোনা। পরপর কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইভা দিয়ে অজানা কারণে ব্যর্থ হয়েছেন।

২০১৮ সালে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হওয়ার জন্য ভাইভায় অংশগ্রহণ করেছিলেন নূশরাত। তাঁর সঙ্গে অন্য প্রার্থী যারা ছিলেন, তাদের সবার থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের ফলাফল ভালো ছিল। তবে তা সত্বেও তিনি শিক্ষক হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন।

এরপরই সিদ্ধান্ত নেন নিজের গেম প্ল্যান চেঞ্জ করতে হবে। ঢাকায় এসে কোচিং শুরু করেন বিসিএসের। ৪০, ৪১, ৪৩ ও ৪৪ পর্যন্ত টানা চারটি বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা দিয়েছেন। এর মধ্যে দিয়েছেন অনেক চাকরি পরীক্ষা। সে সংখ্যা নিজেই গুনে শেষ করতে পারবেন না বলে জানান তিনি।

১৪তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে একটি বেসরকারি কলেজে শিক্ষকতার সুযোগ আসে জানিয়ে নূশরাত বলেন, এর মাধ্যমে আমার বেকারত্ব ঘুচে যায়। কিন্তু ততদিনে বিসিএসের নেশায় আমি আসক্ত। ৪০তম বিসিএস থেকে নন- ক্যাডারে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরে সুপারিশপ্রাপ্ত হই। ৪১তম বিসিএসে নন-ক্যাডার থেকে ফিরেছি শূন্য হাতে। ২২ দিনের সন্তান নিয়ে ৪৩তম বিসিএসের ভাইভায় অংশগ্রহণ করি।

আরো পড়ুন: ব্লকচেইন অলিম্পিয়াডে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশের বিজয় কেতনধারী ইউআইইউ

এবার আর খালি হাতে ফিরতে হয়নি। মনোবিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হন, মেধাক্রম চার। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে আমার অনেক দিনের স্বপ্ন পূরণ হলো। সামনে সৃষ্টিকর্তা চাইলে ৪৪তম বিসিএসের ভাইভায় অংশগ্রহণ করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে না পারার আক্ষেপ আর নেই। সিভিল সার্ভিসের একজন গর্বিত সদস্য আমি। আমার এ চলার পথে মা, বাবার কাছে আমি চির ঋণী।

স্বামী সব সময় সহযোগিতা করেছেন জানিয়ে নূশরাত বলেন, তিনি বন্ধুসুলভ ও আমার বিশেষ শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলেন বলেই সন্তান, সংসার ও চাকরি সামলেও আমি বিসিএস ক্যাডার হতে পেরেছি। যারা আমার অনুজ, তাদের জন্য পরামর্শ থাকবে, কখনো চাকরির বাজারে একটা জব টার্গেট করবেন না। নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী সবকিছুর চেষ্টা করুন। পরিশ্রম কখনো বৃথা যায় না।


সর্বশেষ সংবাদ