টানা তিনবার প্রিলি ফেল, চতুর্থ বিসিএসে বাজিমাত আরিফুলের

আরিফুল ইসলাম
আরিফুল ইসলাম  © টিডিসি ফটো

উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে ২০১২ সালে টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) পরিবেশ বিজ্ঞান ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তি হন আরিফুল ইসলাম। সরকারি চাকরি করবেন, এমন ইচ্ছাই ছিল না। ভেবেছিলেন স্কলারশিপে দেশের বাইরে পড়তে যাবেন। কিন্তু ৩য় বর্ষের ২য় সেমিস্টারে অধ্যয়নরত অবস্থায় তার সহপাঠী শায়লা আনোয়ারের অনুপ্রেরণায় বিসিএসের একটি সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন। 

সেই থেকে শুরু, এরপর বিসিএস হয়ে গেলো তার ধ্যান, স্বপ্ন , সাধনা। স্বপ্ন ছিল প্রথম বিসিএসে ক্যাডার হবেন কিন্তু তার সেই স্বপ্ন ধুলোয় পরিণত হয় যখন টানা ৩৮, ৪০ ও ৪১তম বিসিএস প্রিলিতে ব্যর্থ হন। তবে সিনেমার গল্পকেও হার মানানো গল্প নিজের জীবনে রচনা করে টানা তিনবার প্রিলি ব্যর্থতার পর ৪৩তম বিসিএসে অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন আরিফুল।

তার জন্ম গাজীপুর জেলায়। আর্থিক দুরাবস্থার মাঝেও ছেলেকে পড়াশোনা করিয়ে বড় অফিসার বানানোর স্বপ্নে বাবা-মা তাকে ভর্তি করান গ্রামের কিন্ডারগার্টেন স্কুলে। নিজেরা কষ্টে থেকে সন্তানের পেছনে খরচ করতেন তারা। 

পরিবারের পাশাপাশি নিজের পড়াশোনা চালাতে নিজেও কম কষ্ট করেননি আরিফুল। টাকার জন্য সবজি চাষ করেছেন এবং বাজারে গিয়ে সেগুলো বিক্রি করেছেন। গরু লালনপালন করেছেন। গরুর জন্য নিজে ঘাস কেটেছেন। এভাবে গ্রামের স্কুল‌ থেকে মাধ্যমিক পাস করে ভর্তি হন টাঙ্গাইল শহরের মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান কলেজে। সেখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষে ভর্তি হন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

ক্যাডার হওয়ার পেছনের গল্প জানতে চাইলে আরিফুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করার পর টানা তিন‌বার প্রিলিতে ফেল করি। এরপর ভেবেছিলাম আমার দ্বারা বিসিএস হবে না। তাই তখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আর বিসিএস দিব না।’

আরও পড়ুন: ক্যাডার তারিফের বিসিএস— ‌মিশন ৪১, চ্যালেঞ্জ ৪৩ ও ফাইনাল ৪৪

কিন্তু তার ৪৩তম বিসিএস আবেদন করা ছিল। হঠাৎ প্রিলির ডেট দিয়ে দিলে রুমমেটের জোরাজুরিতে পরীক্ষায় বসেন। তিনি বলেন, ‘প্রিলিতে টানা ফেল করে যেহেতু পড়াশোনা বাদ দিয়েছিলাম তাই পরীক্ষা না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু রুমমেট জুনিয়র মোহাম্মদ সেলিমের জোরাজুরিতে কোনোরকম প্রস্তুতি ছাড়াই প্রিলি পরীক্ষা দিতে যাই। এরপর প্রথমবারের মতো পাস করে যাই।’

সেই থেকে তার আবার বিসিএসে আপ্রাণ প্রচেষ্টায় নেমে পড়া। আরিফুল বলেন, ‘রিটেনের সময় ব্যাংকসহ অন্যান্য চাকরির পরীক্ষার প্রিলি, রিটেনের চাপে  ৪৩তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি ভালোভাবে নিতে পারিনি। কম সময়ে টুকটাক যতটুকু পড়া যায় পড়েছি। গণিত, মানসিক দক্ষতা, ইংরেজিতে দক্ষ ছিলাম। যেহেতু সময় অনেক কম ছিল তাই এগুলোর বই কেনা বা পড়ার দরকার মনে করিনি।’ 

‘রিটেন পাশ করবো, ভাবিনি। ভেবেছিলাম ৪৪তম বিসিএসে ভালো করে রিটেন দিবো। আলহামদুলিল্লাহ তার আগেই রিটেন পাশ করে গেলাম। একই কারণে ভাইভার জন্যও পড়তে পারিনি। তাই ভাইভাও তেমন ভালো হয়নি। এরপর আসলো সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। ২৫ ডিসেম্বর কারো মাধ্যমে শুনলাম আগামীকাল (২৬ ডিসেম্বর) ৪৩তম বিসিএসের চূড়ান্ত রেজাল্ট দিবে’—বলছিলেন আরিফুল।

তিনি ক্যাডার হওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে জানান, ‘আমি নিজেকে আগেই বুঝিয়েছিলাম যে, আমার রোল তো থাকবেই না, তাই  মন খারাপ করার কোনো মানে নেই। তাই রেজাল্ট হওয়ার পর আমার রোল যে নেই সেটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য রেজাল্ট চেক করি। তারপর যা হলো, সেটার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। আলহামদুলিল্লাহ! অডিট ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হলাম।’ 

পরিশেষে তিনি বলেন, ‘সফলতা অর্জন করতে হলে লক্ষ্য স্থির করতে হবে। লক্ষ্য স্থির না করলে সফল হওয়া অসম্ভব। যেই দিনটিকে আপনি সবচেয়ে খারাপ হবে ভাবছেন, সেই দিনটাই আপনার জন্য ইতিহাস হতে পারে।’


সর্বশেষ সংবাদ